অসহায়দের উন্নয়নে সরকারের দপ্তর আছে । সেই দপ্তরে অসহায়দের নাম ঠিকানা আছে । কষ্ট লাগে সেখানে ওর নাম নেই । হয়তো বাক প্রতিবন্ধকতার কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখে সব সময়। ওকে প্রশ্ন করা হলে উত্তর একটাই -‘আ্যাঁ’ । ভিতু, আত্মবিশ্বাসহীন ও হয়তো স্বপ্নের জগতে বিচরণ করে। সঙ্গী বলতে একটি পুটুলি । জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়া ক্লান্ত ,অসহায় এক গভীর যন্ত্রণা ওর চোখে মুখে। কারো কাছে পায় না কাঙ্খিত ভালবাসা। নেই তার কোন কাছের মানুষও । স্পর্শ না করলেও ওর জীবনে প্রেম আছে, স্বপ্ন আছে, চাওয়া-পাওয়াও আছে। জীবন তো সহজ পথে চলে না। জীবন-যুদ্ধে হেরে যেতে বসা এই নারী হয়তো নতুন করে স্বপ্ন দেখে। জীবন স্রোতের চোরা ঢেউয়ে তার সেই স্বপ্ন-ভঙ্গ হয়। নিপুণ বুননের মুন্সিয়ানায় ওকে দেখলেই ধাক্কা দেয় মনোজগতে।
ওর নাম নেই ঠিকানা নেই, এটি কি সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতা, না কি রাজনীতি-সমাজনীতির ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া মানুষের তৈরি ? যদিও আমাদের সমাজে দুই শ্রেণীর মানুষের দ্বন্দ আছে । লোভী মানুষ বনাম অসহায় মানুষ। অসহায় মানুষের ভয় বিপুল ও বিচিত্র। চাওয়া অত্যল্প। কিছু সুষ্ঠু পরিষেবা, দক্ষ প্রশাসন। রোজকার ডালভাত খাওয়া জীবনে কোনও হাঙ্গামা না হলেই হাসিমুখের জীবন। সরকার কত পরিবর্তন এনেছে! ওর জীবনে স্পর্শ নেই । উন্নয়নের জোয়াড়ের ভেষে যাওয়া নীরব দর্শক ও।
কখন কে জানে উন্নয়নের পরাকাষ্ঠা লোহা, বালি, কংক্রিট সমেত দুমড়ে-মুচড়ে পড়বে ওর মাথার ওপর আর শরীর রক্তমাংসের দলা পাকিয়ে মিশে যাবে ধুলোয়। অবমাননার সেখানেই ইতি নয়। মরণও যে অসম্মানের। কারণ, পিষ্ট-ছিন্ন-বিকৃত মরদেহ আগলে আমাদের রাজনীতি শোক করে না, ভয়ানক দম্ভপংক্তি প্রদর্শন করে পরস্পরের দিকে অভিযোগ ছুড়তে ছুড়তে নিজের দু'কাঁধ মসৃণ, দায়হীন করে নিতে চায়, যাতে লুণ্ঠিত সম্পদ বয়ে নেওয়া । আর সেই সম্পদের নাম লোভ, ক্ষমতা, নির্লজ্জ অগণতান্ত্রিক প্রভুত্বপরায়ণতা! ভয় করে, অন্ধকারে ভয় করে ওর ।তাই হয়তো অবেহেলিত হয়েও ও কারো কাছে কিছু চায় না !