ময়মনসিংহের ত্রিশালে পয়ষট্রি বছর বয়সে পিইসি সমাপনী পরীক্ষা দিতে এসে লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে উঠেনি । গর্বে যেন বুক ভরে উঠছে ।
উপজেলার সাউথকান্দা সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে নাতির সাথে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ঐনারী । নাম তার সুন্দরী বেগম।
বৃদ্ধ বয়সে নাতির সাথে পরীক্ষা দিতে পেয়ে নিজেকে সার্থক মনে করছেন এই বৃদ্ধা ।
সুন্দরী বেগম বলেন, ‘‘ছোট থেকেই সংসারের বোঝা মাথার ওপরে পড়েছিল। তাই লেখাপড়াা করার সুযোগ হয়নি। বাপ-দাদারাও উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু কষ্ট হলেও আমি আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। নাতি-নাতনিরাও পড়ছে। এবার আমার শিক্ষিত হওয়ার পালা।
জানা গেছে, চলতি শিক্ষা বর্ষে পিইসি সমাপনীতে এ বছর ত্রিশালে হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়াদের মধ্যে আছেন সুন্দরী বেগমও ।
উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের গৃহকর্তী তিনি ।এনারী বলেন, একটি একাউন্ট খুলতে ছয় বছর আগে গিয়েছিলাম কাশিগঞ্জে অবস্থিত কৃষি ব্যাংকে । লেখা পড়া না জানায় একাউন্টের জন্য কোনরকমে স্বাক্ষর দিয়েছিলাম । ব্যাংক অফিসাররা তিনটি স্বাক্ষর চান । দিলাম । তিন্তু সেখানে একটি গড়মিল হয়ে যায় । ম্যানেজার ফাইল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ঐ স্বাক্ষর দেখে ।
কাঁদিনি । প্রতিজ্ঞা করেছিলাম । শিক্ষিত হয়েই স্বাক্ষর দেবো ।ঘটনার পর দিন আমার মেয়ের ছেলে নাতিকে ( মো: জিহাদ) নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে যাই । নাতির সাথে সহপাঠী হিসাবে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই । সংসারের কাজ সামলিয়ে এতদিন পড়েই যাচ্ছি ।
ছয় বছর পড়ার পর এ বছর নাতী জায়েদের সাথে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি । বাংলা পরীক্ষা চলাকালে প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে দেখা গেছে মন দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি ।
কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজারের দুর্ব্যবহারের জবাবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ।
ঐ পরীক্ষা কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, তাকে শ্রদ্ধা জানাই । তিনি সত্যিই একজন অনুকরনীয় অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ।