সরকারী কর্মকর্তারা তখন তাঁদের ব্লেজারের ফাঁকে কাঁপছেন। মাঘের শীত না যদিও, আমি ভেবেছিলাম তাঁদের অনেকেই চাদর-টাদর পরে জুবুথুবু হয়ে আসবেন। সেই সুযোগ ছিল। একেকটা দিন আসে বছরে টেলিভিশনে পর্যন্ত সেদিন পুরুষজনেরা স্যুটকামাই দেন। দুইটা ঈদ, দুইটা জাতীয় দিবস, এমনকি একুশে। সবাই সেটা জানে। আমিও কখনোই ভুলিনি সেসব রেওয়াজ। তবে এটা ঠিকই চাদর পরে জুবুথুবু হওয়া টেলিভিশনে মানা। কিন্তু একটা ছোট্ট মফস্বলের ময়দানে যেমন-খুশি-পোশাক পরে আসতে কারোরই মানা নেই। অন্ততঃ আমার সেরকমই ধারণা ছিল। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের যে কাউকে দেখেই মনে হলো টিএনও সাহেব আলাদা করে ধামকি দিয়েছেন যেন সবাই ব্লেজার পরে আসেন। শামিয়ানার নিচে যারা আছি তাদের সকলের দিকে এইসব সাহেবেরা ঈর্ষাকাতর চোখে তাকিয়ে আছেন। চকচকে গোলগোল গালে তাঁদের ঈর্ষার ঈষৎ ভাঁজ দেখা যায়। এই শীতের সকালে সকলেই দাড়ি কামিয়ে এসেছেন। অনুমান করা যায় গরম পানি ছাড়াই। এরকম নিষ্ঠা নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখি মৎস্য-কর্মকর্তা গাল চুলকাচ্ছেন। গতকালকেই তাঁর অফিসে তাঁকে দেখে এসেছিলাম আমি। বসতেও এঁরা পারছেন না কখন টিএনও চলে আসেন। এরই মধ্যে মাথাটা ভালমতো চাদরে মুড়ে বাম দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে সরু পিচের রাস্তায় টিএনও সাহেবের গাড়ি আসতে দেখলাম। সূর্য ততণে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু আলো ছাড়াও উত্তাপ ছড়ানো যে তার কাছে কাক্সিত একটা কর্তব্য সে বিষয়ে বিশেষ কোনো গা নেই।
ফকিরহাটে এসেছি গ্রামীণ নারী উন্নয়ন দেখতে। এবং এই উন্নয়ন অবলোকনের বৌদ্ধিক পরিশ্রান্তি-হেতু যৎকিঞ্চিৎ নজরানার ব্যবস্থা আছে আমার। নিন্দুকেরা বলবেন, আমি জানি, যে ওই নজরানার জন্যই আমি ঢাকা থেকে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে ফকিরহাটে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এই ভাবনা আমার নিষ্ঠার প্রতি অহেতু কুৎসা হবে। নজরানা আমি ঢাকা বসে থেকেই পেতে পারতাম। কে না জানে ফিল্ড-রিসার্র্চে রিসার্চ যাই থাকুক বা না-থাকুক, ফিল্ড থাকেই! ফলে ‘ফিল্ড-এ্যাসিস্টেন্ট’ও থাকেন। আমাদের এই অবলোকন-প্রকল্পে তাঁদের সংখ্যা তিন। উপরন্তু, ‘বিশেষজ্ঞ’দের ফিল্ড পর্যন্ত তাড়া করে যাওয়াটাই বরং সবসময়ে বিশেষ উৎসাহিত করা হয় না। প্রধান কারণ হচ্ছে ‘ভেহিকেল’। ‘বিশেষজ্ঞ’রা বিশেষ বড়বাজারী না হলে অথঃ ঠিকাদারের পে একটা ‘স্পেসিফাইড ভেহিকেল’ সরবরাহ করা আরিক অর্থেই মুস্কিল হয়। ওদিকে বিশেষজ্ঞ বড়বাজারী হোন বা না-হোন একটা বিশিষ্ট বাহনের জন্য বায়না ধরে বসেন। এই এতকিছু জানা থাকা সত্ত্বেও আমি কোনোকিছুর জন্য বায়না না করে, আসবার বাধ্যবাধকতা নেই জেনেও, একটা বাসে চড়ে যে ফকিরহাটে এসেছি সেটার কারণ হচ্ছে আসলেও আমি ‘ফিল্ড’ দেখতে চেয়েছিলাম। এবং সেই ফিল্ড মোটেও এই ১৬ই ডিসেম্বরের স্কুল-ময়দান না। এটাই বরং আমার উপরি-ভলান্টিয়ারিং।
পিচের রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমেই টিএনও সাহেবের গাড়ি ভোঁৎ ভোঁৎ আওয়াজ করতে থাকল। এখান থেকেও দিব্যি দেখা যাচ্ছিল টিএনও সাহেবের বিব্রত মুখ। ড্রাইভারকে হাতের ইশারায় থামতে বলে কয়েক গজ আগেই তিনি নেমে পড়লেন। ঝামেলায় পড়লেন স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা। সানগ্লাস চোখে দিয়ে ধবধবে পাজামা পাঞ্জাবি শাল গায়ে দিয়ে তিনি কেবলই এসেছিলেন। অনেক ভেবেচিন্তেই তিনি সময়টা বের করেছিলেন। সরকারী কর্মকর্তারা দু’কান অবধি হাসি সমেত তাঁর দিকে সকলে এগিয়েও আসছিলেন বটে। সদ্য কামিয়ে আসা গাল ও গলা মিলিয়ে তিনিও একটা দুই ভাঁজ বিশিষ্ট হাসি শুরু করতে যাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে টিএনও’র গাড়ি চলে আসাতে ওই একই হাসি সমেত সবাই সুরুৎ করে গাড়ির দিকে মুখ ফেরালেন। নেতাকে দেখা গেল দ্রুত আগত হাসিখানা খেয়ে ফেলতে, আর পাশের চামুণ্ডাদের সঙ্গে কপট ব্যস্ততায় হাত নেড়ে কিছু একটা নিয়ে বলতে। এই নিমরাজি সূর্যের আলোতেও তাঁর হাতের আংটিগুলো ঝিলিক দিতে থাকল। টিএনও গাড়ি থেকে নেমে অবশ্য প্রাথমিক বিপত্তি দ্রুত সামলে ফেললেন। এই নেতার দিকে, এবং ইতোমধ্যেই তাঁর চোখে-পড়া তেমন সাঙ্গপাঙ্গবিহীন আরেক বর্ষীয়ান নেতার দিকে, যুগপৎ তিনি হাসি মেলে ধরে আসতে থাকলেন। কীভাবে যে একজোড়া চোখ দিয়ে তিনি একজোড়া নেতাকে সামলাচ্ছিলেন তা ভেবে আমার ভারি অবাক লাগছিল। সম্ভবতঃ কর্মকর্তাদেরও তাই লেগেছিল। তাঁরা বিপুল উৎসাহে তখন টিএনও’র হাসির অবিকল অনুরূপ একটা হাসি, কেবল দ্বিগুণ চওড়া, মাখামাখি করে অপোকৃত তরুণ নেতার দিকে ধেয়ে আসতে থাকলেন। নেতার সাঙ্গপাঙ্গরা মাঝখানের এই মুহূর্তগুলো কপাল কুঁচকে ছিল। এণে তাদের ভাঁজও মিলিয়ে গেলে, টিএনও ও নবীন নেতা যখন করমর্দন করছেন তখন এই বিশ্রি শীতের মধ্যে পকেট থেকে হাত বের করে তারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে হস্তমর্দন করতে লাগল। নবীন নেতাকে সেরে টিএনও প্রবীণ, একটু-দূরে-দূরে-থাকা, নেতাতে হাত মেলালেন। নবীন নেতা তখন টিএনও’র যতœ-করে কামানো গালের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই অল্প আলোতেও তিনি আবিষ্কার করে ফেললেন বাম কান আর থুতনির মাঝখানের এলাকায় টিএনও ক’গাছা পশম বাধিয়ে রেখেছেন। বলাইবাহুল্য, নিতান্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে। ততণে কুচকাওয়াজ দলগুলো বেশ নড়ে চড়ে তৈরি। ব্যান্ড-বাজিয়ের দল শিশির-পড়া ড্রামে কয়েকটা প্রস্তুতিমূলক বাড়ি দিয়ে দিল। আওয়াজ উঠল Ñ ঠ্যাপ্, ঠ্যাপ্, ঠ্যাপ্। সে আওয়াজ সামনের খোলাপ্রান্তরের কোনো এক জায়গায় ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসল Ñ ঠ্যাপ্, ঠ্যাপ্, ঠ্যাপ্। টিএনও প্রথমে ঠাহর করে উঠতে পারেননি কীসের আওয়াজ। পরে নিশ্চিন্ত হয়ে মঞ্চের দিকে যেতে থাকলেন। আমার তখন ঠক্ঠকা অবস্থা। চাদর মোড়ানো মাথাটা বের করে আমি এক কাপ চায়ের জন্য ফাস্কওয়ালা খুঁজতে থাকি।
সকালে বেরিয়েছি সাড়ে পাঁচটার দিকে। মফস্বলের এই কুয়াশামাখানো শীতের মধ্যে সেটা প্রায় মধ্য রাত। সেই সকালে মাথার কাছে রাখা ছোট্ট ঘড়িটা যখন ঘণ্টা বাজিয়ে তুলছে আমাকে, ইচ্ছে হয়েছিল একটা আছাড় মারি। ততণে মনে পড়ে গেছে এই ময়দানে আমার ফিল্ড-ওয়ার্কের অভীপ্সা। যেন-তেন একটা ব্রাশ করাও সারলাম। কিন্তু ঘর থেকে আর বের হতে ইচ্ছে হয় না। তারই মধ্যে মরিয়ম ঠিকই এক কাপ চা নিয়ে এসে হাজির। ভেজানো দরজায় টোকা দিয়ে সে দাঁড়িয়ে। আমি বিস্মিত, অভিভূত, কৃতজ্ঞ, সন্ত্রস্ত। আসতে বলাতে ভেতরে ঢোকে সে। হাতে তাঁর ধোঁয়া-ছড়ানো কাপ। পিরিচে দু’ খানা বিস্কুটও জোগাড় করেছে।
‘এত সকালে চা!’ কৃতজ্ঞতা বশে বিস্ময়টা প্রকাশ করেই বসি।
‘চা তো আপনে শ্যাষ রাত্তিরেও খান। সকালে কী দোষ করল!’ মরিয়মও চুপ থাকার পাত্রী না।
‘আহা দোষ কে বলল! আমি তো খুশি। খুশি হয়ে বল্লাম।’
‘হে আমি জানি।’
‘ও। তো ফাস্কেও তো একটু চা ছিল।’
‘খান নাই ক্যা? ঠাণ্ডা হয়্যা গেছে না?’
‘হ্যাঁ একটু ঠাণ্ডা বোধহয় হয়েছে।’
‘এট্টু ঠাণ্ডা বোদয়? এই ফ্যাস্কে তো চা গরম থাহে না।’
‘হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।’
‘হেইডাও আমি জানি।’
মরিয়ম কালকে রাতে ওরই রেখে যাওয়া ফ্যাস্ক নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার কৃতজ্ঞতাবোধ নিয়ে ওর মাথা ঘামাবার দরকার নেই যেন। বারান্দায় দু’ পা গিয়েই আবার ফিরে আসে Ñ
‘গরম পানি আছে। দিব?’
‘না না না ... গোসল ... এই ঠাণ্ডায় ...’
‘হ বুঝছি ... অনুষ্ঠানে যাইবেন, দাড়ি কাটবেন না?’
‘আরে আমি তো আর মেহমান না ওখানে। আমার দাড়ি থাকলে কী?’
মরিয়মের হাত থেকে এ যাত্রা দাড়ি বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম। ও খানিক বিরক্ত মুখেই যায়। অথবা আমাকে দেখায়।
কৃতজ্ঞতা বা বিস্ময়ের যথাযোগ্য কারণ ছিল। দুদিন আগে এসেছি। সন্ধ্যাবেলা পৌঁছানোর পর সহকর্মী তিনজন একটা গোসলখানায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল। লাগোয়া-গোসলখানার ঘরখানি যে পদজ্যেষ্ঠতায় আমারই জন্য, এখানে যে এরকম আরেকখানা ঘর নেই বলে তারা যারপরনাই বিব্রত এবং আমি যা ডিসিশন নিই তাই হবে Ñ এই ধরনের একটা সাধারণ কথা এখানকার ম্যানেজার অনেকণ ধরে ইনিয়ে বিনিয়ে বলছিল। একটা ছোটখাট যতিচিহ্ন দিলেই কিন্তু আমি বলে দিতে পারতাম আমার এ ঘরে থাকবার দরকার নেই। ম্যানেজার বিচণ লোক। সে চাইছিল তিনজন অতিথি মহিলা এই ঘরে থাকুক। যেহেতু নারী-উন্নয়ন অবলোকন, অবলোকনের খাঁটিত্ব হেতু ‘ফিল্ড’কর্মীরা সবাই নারী। সবাই এসেছে ঢাকা থেকে। ম্যানেজার যদি সেটা নাও ভাবত, ঘটনাচক্রে, আমিও তাই-ই ভাবতাম। যাহোক, ফুরসত পাওয়া মাত্রই আমি এক সঙ্গে বেশ কয়েকবার ‘বটেই তো’ বলে তার চিন্তাশক্তির তারিফ করতে থাকলাম। আমার উৎসাহ বোঝাতে এরপর আমি যা বললাম তা না বললেই ভাল হতো। আমি বললাম ‘তাছাড়া গোসল ফোসলের বালাই আমার নেই।’ এই পুরা সময়টা ম্যানেজারের পেছনে জগ-গ্লাস সমেত দাঁড়িয়ে মেহমানদের দেখছিল মরিয়ম। মেহমানদের বললাম বটে, ও এমনিতেও বেশি সময় আমাকেই দেখছিল। গোসলের প্রতি আমার উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে ম্যানেজারকে খামকা হাসতে শোনা গেল। কিন্তু মরিয়মের চোখা নাকটা কিছুতেই ও না কুঁচকে পারল না। ম্যানেজার অবশ্য সেটা দেখতে পায়নি। কিন্তু আমার সহকর্মীরা সবাই সেটা দেখল। যা বোঝার বুঝল।
নিজের ঘরে গিয়ে নেহায়েৎ যা করলে সাফ-সুতরা হয়েছি বলে মনে হয় তাই করে আমি তৈরি হলাম। মানে গ্লাস থেকে পানি নিয়ে চুল ভিজিয়ে একটু আঁচড়ে নেয়ার মতো করলাম। কিছু পরেই রাতের খাবারের ডাক আসে। রাত আটটায় বসে ভাত খেতে যে আমার অনেক ইচ্ছে করছিল তা নয়। এই অফিসের রেওয়াজ অনুযায়ী, যারা এখানেই থাকে তারা সকলে একত্রে খায়। দুপুরে অফিস-সময়কালে তো বটেই। রাতে যারা আবাসিক তারা খায়, আবার ম্যানেজার বা খাজাঞ্চি কাজের চাপে অফিসে থেকে গেলে তারাও খায়। উন্নয়ন কী হচ্ছে তা হয়তো এরা বলতে পারবে না। কিন্তু গাধার খাটুনি-দেয়া একটা কর্মী বাহিনী এনজিও’র আছে। তো এবার দ্বিতীয় রাউন্ড! রান্নাবান্না সেরে খাবার টেবিলে বেড়ে দেয়ার দায়িত্বটাও মরিয়মেরই। সবাই বসেছি। এই সুযোগে ঢাকার খবরাখবর নিচ্ছে স্থানীয় কর্মীরা। সহকর্মী নারীদের পরিবারের খবরাখবরও। দুয়েকজনের উৎসাহী প্রশ্ন খণ্ডকালীন ঘটকালির ইঙ্গিতবহ ছিলও বটে। ঢাকা থেকে আসা নারীকর্মীরা সেগুলো হাসিমুখে সামলাচ্ছে। প্রায় ছাদ-সমান উঁচু একটা টেবিলে রাখা টেলিভিশনে একমাত্র চ্যানেল বিটিভিতে তখন আটটার স্যুটটাই পরে খবর হচ্ছে। এই চলছিল। খাসা রান্না মরিয়মের। আমি জামার বাম হাতায় ঝোল মুছতে মুছতে, মানে নাকের, পরম আনন্দে ভাত খাচ্ছি। আর একটা দুটো কথা বলছি Ñ ফকিরহাট নিয়ে, তাদের চাকরি নিয়ে, এনজিও’র ধারণা নিয়ে, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে। ভালই চলছিল। হঠাৎ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মরিয়ম, যে এতণ দেখছিল আমাদের আমি হলপ করে বলতে পারি, বেমক্কা একটা কথা পাড়ল।
‘হ্যার তো দেহি দাড়ি আছে।’
আরে কী আশ্চর্য! সন্ধ্যাবেলায় এসেছি। দু’ ঘণ্টা ধরে দেখছে। দু’ ঘণ্টায় কি আমার দাড়ি গজাল? দাড়ি তো ছিলই। আমি সে কথাই বললাম।
‘দাড়ি তো বিকালেও ছিল।’
ম্যানেজার খাচ্ছিল আমার মুখোমুখি, টেবিলের অপর পাশে বসে। এতণে ঢাকা-থেকে-আগত সহকর্মীরা মৃদু একমাত্রার একটা হাসি কোরাসে দিয়ে ফেলেছে। ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখের মধ্যে বড় একটা গ্রাশ নিয়ে সে চোখ গোল গোল করে স্তম্ভিত হয়ে আছে। আর কারো মুখের দিকে তাকাতে আমার সাহস হচ্ছিল না। ম্যানেজারই যেহেতু প্রধান। মরিয়মের মতো এক রাঁধুনি সহকর্মী যার অফিসে আছে সে নিশ্চয় নানারকম ঘটন বা অঘটন সম্ভাবনায় তৈরিই থাকে। কিন্তু ম্যানেজারের চেহারা দেখে আমার একটুও মনে হলো না যে সে ঢাকা-থেকে-আসা বিশেষজ্ঞের এইমতো একটা হেনস্তা আশা করেছিল। কয়েক সেকেন্ড এভাবে কাটিয়ে ম্যানেজারের মাথায় বুদ্ধি খেলল Ñ
‘যাও তো রান্নাঘরে।’
মুখভর্তি ভাত নিয়ে বলতে গিয়ে সে গুটিকতক ভাত আমার প্রান্তে ছিটিয়েও দিল।
‘কী কইলাম আমি!’
মরিয়ম ম্যানেজারের ধমক গ্রাহ্য করবার কারণ দেখল না। এতণে আমারও খানিক জবান ফিরে এসেছে।
‘আহা, ঠিকই তো! দাড়ি থাকলে দাড়ি বলবে না? আমার যদি টাক থাকত তাহলে বলত না সে কথা?’
আমার এই ধরনের আশ্বস্তি প্রদানে ম্যানেজারকে কেবল আরো আতঙ্কিতই দেখাল। পরে, রাতে যাবার আগে ম্যানেজার আমাকে পরিস্থিতিটা বোঝাতে ঘরে আসল একদফা। মুখে অবশ্য বলল যাবার সময় দেখা করতে এসেছে।
‘বুঝলেন না ভাই! আমাদের এখানে তো ঢাকা থেকে অডিটে কেউ আসে না। ডিস্ট্রিক্ট লেভেল পর্যন্ত।’
‘না না আমি অডিটে আসিনি।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ কনসালটেন্ট। তারাও আসে না।’
‘সেরকম কিছু না। আমি ছোট কনসালট্যান্ট। আমার ইচ্ছে ছিল আপনাদের অফিস দেখা।’
‘সে আমাদের ভাগ্য।’
‘এইগুলা কী বলেন?’
এই রকমের একটা উভকষ্ট আলাপ শেষে তার বাসায় ফেরা হলো। লোকটা আসলেই ম্যানেজার Ñ কান্তিহীন, নিষ্ঠাবান, সম্ভাব্য ঝামেলা মেটাতে সজাগ। অডিটর ঠাওরানোতে মনটা আমার খানিক দমে ছিল। এরই মধ্যে রাত এগারোটার দিকে দরজায় টোকা।
‘আপনে রাত্তিরে গুমান না হুনলাম।’
‘কে বলল?’ তড়িঘড়ি করে লেপ ছেড়ে দরজা খুলে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
‘হেই মায়্যারাই তো কইল।’
‘ও। না ঘুমাই তো।’
‘না গুমাইয়া তো শরিল বানাইছেন এইরম।’
‘না না ঠিক আছে।’
‘হ ঠিক আছে! রাত্তিরে চা খান হুনি।’
‘হ্যাঁ তা খাই।’
‘রাত্তির উজাগার কইরা চা খাইলে প্যাট পইচা মরবেন তো।’
‘তাই নাকি? কিন্তু এখন তো আর খাচ্ছি না।’
‘নিয়া আসচি।’
এতণে খেয়াল করলাম চাদরের পাশ থেকে ফ্যাস্ক বের করছে মরিয়ম। আমি ওর বকাঝকা খেয়ে বেকুবের মতো দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ফ্যাস্ক দেখে তাড়াতাড়ি হাত বাড়ালাম।
‘এইহানে দুদ নাই। আপনেরে দুদ চা দিতে পারলাম না।’
মরিয়ম চলে গেলে তাড়াতাড়ি ফ্যাস্কের মুখে চা ঢালতে থাকি। ঘন কাল রঙের একটা দ্রবণ। দেখলেই সারিবাদি সালসার কথা মনে হয়। চুমুক দেবার আগে ভাবলাম পেট পচে যাতে না মরি সেজন্য কোনো কবিরাজী পথ্যই হয়তো বানিয়েছে মরিয়ম। এতকিছু যে লোক ছোট্ট রান্নাঘরটা মনিটর করছে থেকে তার পে এটা সম্ভব। চুমুক দিয়ে নিশ্চিত হলাম ও প্র্যাগম্যাটিক গোত্রের মানুষ। এমনকি অস্তিত্ববাদী। চায়ের মতো একটা তুচ্ছ জিনিস খেয়ে পেট পচিয়ে আমি যদি মারা যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতেই পারি, তাহলে মরিয়মও সেই সিদ্ধান্ত আমারই বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুদায়ী বস্তুটা যথাসাধ্য অকৃপণভাবে এই দ্রবণে মিশিয়ে দিয়েছে। সারিবাদি সালসা নয়, খেতে গিয়ে আমার চিরতার পানির কথাই মনে হয়েছে। সন্ত্রস্ততার কারণও সেটা।
এই দু’দিনে মরিয়মের চা বানানো, আর ফ্যাস্কে ভরে দিয়ে যাওয়া ছাড়াও একাধিক বার দাড়ির প্রসঙ্গটা ও তুলতে চেষ্টা করেছে।
‘অপিচার মানুষ! এইরম দাড়ি থাকলে কেমুন দ্যাহায়!’
ও নিশ্চিত ছিল এই চা-বানিয়ে দেবার বাৎসল্যে এসব কথা বলতেই পারে। আমিও নিশ্চিত ছিলাম চা-বানিয়ে দেবার খাতির যখন করছে তখন তেমন কথা না বাড়িয়ে হ্যা হ্যা করে হাসলেই পার পাওয়া যাবে। পরের রাতে বললাম Ñ
‘ক্যান আপনার স্বামীর দাড়ি নাই?’
‘কী কয়! ব্যাডা থাকলে শ্যান দাড়ি! মরছে কবে! হেই দুঃখের কতা আর তুইল্যেন না।’
‘ওহো হো! আমি তো জানতাম না। ঠিকই তো, থাকলে তবেই না দাড়ি!’
‘কই নাই তো জানবেন ক্যামনে? আর হেই ব্যাডা থাকলেও দাড়ি রাখত না আপনের নাহান। জোয়ান ব্যাডা!’
মরিয়া একটা উত্তেজনা নিয়ে স্কুলের মাঠে এসেছিলাম। ফ্যাস্কওয়ালার কাছে চা খেতে খেতেই সেই উত্তেজনা ছুটে গেছে। এরই মধ্যে মৎস্য সাহেব একগাল হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলেন। চিনে ফেলেছেন। ভুর ভুর করে চায়ে চুমুক দিয়ে তাঁকে বলি Ñ ‘চা খান।’
তিনি আমার হাতের কাপের দিকে তাকিয়েই পাশে কান-ঢাকা চা-ওয়ালা ছেলেটার দিকে তাকালেন। মুখে বললেন Ñ
‘দেরি হয়ে যাবে, স্যারেরা সব দাঁড়িয়ে আছেন।’
টিএনও সাহেব সত্যি সত্যিই ততণে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে সকল ধরনের সহকর্মী খুঁজে পেতে ইতিউতি তাকাচ্ছেন। মৎস্য-কর্মকর্তা যাবার জন্য ত্রস্ত রওনা দিতেই খেয়াল করি ঘাড়ের কাছে তাঁর টুথপেস্ট লেগে। কিছুতেই বুঝে পেলাম না এইরকম দুরূহ জায়গায় দাঁতমাজা পেস্ট লাগালেন কীভাবে তিনি। দুই মুহূর্ত দ্বিধা করে নেহায়েৎ ভদ্রতাবশতঃ বলেই বসি
‘আপনার ঘাড়ে টুথপেস্ট লেগে।’
‘বলেন কী?’ ঠিক একই বেগে আমার দিকে মুখ ফেরান তিনি। তাঁকে বেশ হতভম্ব দেখায়। হাতে সেই পেস্ট লেপ্টে এনে বলেন Ñ
‘ও! আফটার শেভ জেল।’
এবারে তাঁকে খানিক খুশি দেখাল।
‘ও! তাই নাকি! পেস্টের মতো দেখায় কিন্তু।’
একথা শুনে তিনি আমার দিকে তাকালেন নেহায়েৎ অখুশি-চোখে। তারপর প্রায় ভালরকম কোনো বিদায় না নিয়েই তিনি দৌড় লাগালেন মঞ্চের দিকে।
মনটা বেশ দমে গেছে। কুচকাওয়াজ খানিকণ দেখে আমি রিকশা নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হই। পরাটার গন্ধে ফকিরহাট বাজারের মোড়টা যেখানে ম’ ম’ করছে সেখানে রিকশা থামাই।
এদিক সেদিক চক্কর মেরে দুপুরের ঢের পরে অতিথিশালায় ফিরে নিছকই নিয়মরার ভাত খেতে বসেছি। আজকে আমি একাই। সকলেই নির্দিষ্ট সময়ে খেয়ে ফেলেছে। ঢাকনা ঢাকা খাবার টেবিলে দেখে স্বস্তি পেলাম Ñ আশপাশে কেউ নেই। প্লেটে যেই না খাবার বাড়তে গেছি Ñ
‘ওই পেলেট রাহেন। ধোয়া পেলেট আনছি।’
যে ভয় পাচ্ছিলাম! আমি ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ভাল করে দেখি। না, প্লেট ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু দাড়ি কামাবার চাকু-কাঁচি নিয়ে আসলে অবাক হবার কিছু ছিল না। আজ ছুটির দিনে মাথা ন্যাড়া করে দিলেও বেশি লোক সাী নেই। মাথা নিচু করে যথাসম্ভব দ্রুত খেতে থাকি। কিন্তু অবাক কাণ্ড, মরিয়ম বিশেষ কিছুই বলল না। কেবল আমি হাত ধোয়ার জন্য উঠলে, প্লেট সরাতে সরাতে একবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল Ñ
‘কেমুন দ্যাহায়!’
দিবানিদ্রা হারাম নীতিতে বহুবছর অবিচল আছি আমি। কিন্তু হলে কী হবে! ফকিরহাটের নরম শীতে প্রতিদিনই ঢুলি। ‘ফিল্ডে’ গেলে চুতে লজ্জা নিয়ে ঘুম তাড়াই। কী করা! কিন্তু আজ প্রায় শেষ রাত্তিরে মরিয়মের চা খেয়ে বেরিয়েও, এই পড়ন্ত বিকেলে একা ঘরের মধ্যে না ঘুমিয়ে আর পারা গেল না। আমি অবশ্য বই পড়তেই শুরু করেছিলাম। ঘুম ভাঙল দরজার বাইরে ঢাকাই সহকর্মী কারো ডাকাডাকিতে Ñ
‘শিগগির ওঠেন। সাদ্দামকে ধরে ফেলেছে।’
আমি ঘুম ভেঙে ছাদের দিকে তাকিয়ে ফ্যালফ্যালেভাবে ফকিরহাটের সহকর্মীদের মধ্যে সাদ্দাম নামে কাউকে হাতড়াতে চেষ্টা করি। জিজ্ঞেসও করি Ñ
‘সাদ্দাম কে?’
কিন্তু উত্তর দেবার জন্য ওদিকে আর সে তখন নেই। ততণে সাদ্দামকে চিনতে পেরে ধড়মড় করে উঠে টিভি ঘরে ছুটি। টেলিভিশনের পর্দায় সকলের চোখ। ঢাকাই সহকর্মীরা ছাড়াও মরিয়ম, মরিয়মের এক বান্ধবী, এই অফিসেরই কেউ হবে, আগে খেয়াল করিনি, আর এ্যাকাউন্ট্যান্ট সাহেব। বিদেশি কোনো চ্যানেলের খবর বিটিভি দেখাচ্ছে। বুলেটিনের মতো। মার্কিন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সাদ্দামকে ধরবার গল্প শোনাচ্ছে। আর টেলিভিশনে সাদ্দামের মুখ।
সাদ্দাম হোসেন! মুখভর্তি দাড়ি। চুল উস্কো খুস্কো।
‘ও আল্লা! হেই ব্যাডাও দেহি দাড়ি রাখছে।’ মরিয়ম পাশ থেকে আর্তনাদ করে ওঠে।
আবার মার্কিন কর্মকর্তা আসে। বুঝিয়ে বলে কীভাবে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে এটা সাদ্দামই। তাদের জটিল পরীা-নিরীার কিয়দংশ বলে, আবার সরেজমিন দেখায়।
সাদ্দাম হোসেন! মুখে দাড়ি নেই। চুল মোটামুটি পরিপাটি।
আবার সাদ্দাম হোসেন! মুখভর্তি দাড়ি। চুল উস্কো খুস্কো। ... ধারাভাষ্য চলছে।
আবার সাদ্দাম হোসেন! মুখে দাড়ি নেই। চুল মোটামুটি পরিপাটি।
বারবার সাদ্দাম হোসেন! মুখভর্তি দাড়ি। মুখে দাড়ি নেই। চুল উস্কো খুস্কো। চুল মোটামুটি পরিপাটি।
১৬ই ডিসেম্বরের রাত্রিবেলা সহকর্মীরা সকলে একত্রে খাবে। একেক জন কেবল এই জন্যে এসে ঢুকছে। ঢুকছে, কিন্তু চোখ সকলের টিভির পর্দায়। ম্যানেজার, কো-অর্ডিনেটর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সবাই।
পাশাপাশি সাদ্দাম হোসেন! মুখভর্তি দাড়ি। মুখে দাড়ি নেই। চুল উস্কো খুস্কো। চুল মোটামুটি পরিপাটি।
এবার সাদ্দাম হোসেনের জিভ! এবার সাদ্দাম হোসেনের দাঁত!
টিভি পর্দায় সাদ্দাম হোসেন উন্মোচিত হতে থাকল মার্কিন বাহিনীর বৈজ্ঞানিক পরীা-নিরীায়। আর এদিকে সহকর্মীরা নানারকম এলোমেলো পর্যালোচনা করছে। সেসব কথা ঠিকমতো আমার কানেও যাচ্ছে না। কিন্তু গড়পরতায় সবাই খানিক বিহ্বল যেন। এমনকি মরিয়ম, খাবার না-বেড়ে টেলিভিশনের পর্দায় লেগে আছে।
কোনো এক সময়ে কারো মনে পড়ল খাবার কথা। ৮টার খবরও শেষ হবার পথে। সাদ্দাম টেলিভিশন থেকে অপসৃত হয়ে মার্কিন বাহিনীর একচ্ছত্র অধিকৃত হয়েছে। এর মধ্যে আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে উঠি। মরিয়ম অনেকণ থেকে কড়া নজরে রেখেছে আমাকে। সেটা জেনেও মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না। কেউই কাউকে খাওয়া নিয়ে কিছু বলছে না। কেবল নিজে নিজে খাচ্ছে। হাত ধুতে উঠলে মরিয়ম বলে Ñ
‘খাইলেন না ক্যা কিছু?’
‘শরীরটা ভাল নেই আজ।’ আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বলি।
প্রায় নিঃশব্দ একটা বিদায়ে যে যার মতো চলে গেল। আমিও ঘরে ফিরি।
ঘরে এসে কাঠের চৌকিটাতে বসে আবিষ্কার করি কেমন একটা ভোঁতা অবসন্ন মাথা। কিন্তু সেটার কারণ যে কী বুঝে উঠতে পারি না। দুপুরে ঘুমিয়েছি বলেই কি? কে জানে! কতণ এভাবে বসে আছি জানি না। হঠাৎই মনে হলো ঝিঁ ঝিঁ পোকারা একটানা ডাকছে। সে কি! ফকিরহাট শহর থেকেও দুই কিলোমিটার দূরের এই অতিথিশালায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আজই প্রথম! আমি দরজা খুলে বাইরে আসি। বারান্দাটা অন্যদিনের থেকেও অন্ধকার। যে যার মতো বাড়ি চলে গেছে। আর ঢাকাই সহকর্মীদের ঘরে তখনো আলো। কেউ একজন প্লেয়ারে গান শুনছেও মনে হলো। ওপারের বারান্দায় আলো-অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মরিয়ম। ওর দৃষ্টি এদিকে নিবদ্ধ, আসলে আমার ঘরের দিকে। এণে আমার দিকেই। আমি আবার ঘরে ফিরে আসি।
টিভি পর্দায় সাদ্দামের মুখটা ফিরে ফিরে আসছে। দাড়িছাড়া! দাড়িওয়ালা! মার্কিন মুখপাত্রের পাথুরে মুখগুলোও ফিরে ফিরে আসছে।
আমি চৌকির নিচে আমার ব্যাগটা বের করতে বসি।
বাথরুম থেকে ফিরে ঘরে ঢুকবার কিছুণ পরেই দরজায় টোকা। দরজা খুলতে উঠতে যাচ্ছি। ভেজানো দরজা খুলে মরিয়ম ঢোকে। ওর হাতে কাপ পিরিচ।
‘আপনে আমার উপরে রাগ কইরে দাড়ি কাটলেন?’
‘হুঁম। না তো। এমনিই।’
‘আপনেরে কিন্তু সোন্দর লাগে দাড়ি কাটলে।’
‘তাই?’
আমি হাসার চেষ্টা করি। মরিয়ম চায়ের কাপ নামায় না।
‘কী দিয়া কাটলেন?’
‘একটা ব্লেড ছিল। রেজর তো নেই।’
‘আমারে বলতেন। কিন্যা আনাইতাম।’
‘না সমস্যা হয়নি।’
‘ফ্যানা দ্যান নাই?’
‘সাবান দিয়েছি।’
মরিয়ম আমার দিকে তাকিয়ে দেখে।
‘আইজগা এক কাপ চা।’
মরিয়মের মুখে বিরল একটা হাসি। কৌতুক, কিংবা বাৎসল্য। কিংবা দুটোই।
‘অসুবিধা নাই।’
‘আইজগা আপনের দুদ চা। আমি আনায়া রাখছিলাম।’
(শুরু: ১৬ই ডিসেম্বর ২০০৩। ফকিরহাট, বাগেরহাট Ñ ৭ই মে ২০০৫। হিগাশি-হিরোশিমা)
প্রকাশ: কালের খেয়া, দৈনিক সমকাল, ১৮ই নভেম্বর ২০০৫