somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরণ্যচারীর গল্প

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






দুপুর ২টা সময়টা কেমন যেন আধভৌতিক, সূর্যটা ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে পুরো পৃথিবীটা জ্বালিয়ে দিতে, রাস্তার মানুষগুলো অনেক্‌ক্ষণ ধরে সিদ্ধান্ত্‌হীনতায় ভুগে এখন কি করবে তা নিয়ে, দুপুরের রোদের তেজ সহ্য কর্‌তে পারে না অনেকে, চায়ের দোকানের বেঞ্চ থেকে ঘরের ছাউনি দেয়া বারান্দাটাকে বেশি উপভোগ্য মনে হয় ওদের কাছে। সুন্দরী তরূনীরা ব্যাগের সাইডে রাখা ছাতাটা মেলে ধরে মাথার উপর---একটু রোদ গায়ে লাগলেই সর্বনাশ! এতদিনের সাজানো চামড়াটা রঙ হারাবে..শুধু রিকশাওয়ালা শ্রেনীর কিছু মানুষ কড়া রোদকে কোন দাম দেয় না—ওরা প্রতিটা প্যাডেলের চাপে সূর্‍্যটাকে অভিশাপ দিয়ে যায়।

এমনি একটা রিকশায় বসে আছি আমি আর অর্পা।। অনেকক্ষণ ধরে দু’জনার মুখে কোন কথা নেই।কি একটা বিশেষ কথা বল্‌বার জন্য আজ আমাকে ডেকেছে ও।আমি মনে মনে আন্দাজ করে রেখেছি বিশেষ কথাটা কি হতে পারে, অনেক দিন থেকেই অর্পার সাথে আমার যাচ্ছে না। যাচ্ছে না বলতে – আমি ওর খোঁজ নেয়ার সময় পাচ্ছিনা, একটা চাঞ্চল্যকর মামলার আসামী হয়ে আমাকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে জিপসী হয়ে— অর্পাকে আমি অনেকবার বলেছি এটা মিথ্যা একটা মাম্‌লা- ও বিশ্বাস করছে না- ওর একটাই কথা ছাত্ররাজনীতি ছাড়তে হবে। আরে বাবা! আমি রাজনীতি ছাড়লেই কি মামলা থেকে বা** সরকার আমাকে রেহাই দিবে?? ওকে কে বোঝাবে এই কথা টা?

রিকশাওয়ালা মামার গতি কমে এসেছে, বেচারার ঘামে ভেজা চপচপে শার্ট টা দেখে আমার মায়া হল। আমি বললাম, মামা রাখ। আর যেতে হবে না।– অর্পার দিকে না তাকিয়েই বল্‌লাম, এখানে অনেক ভাল একটা রেস্টুরেন্ট আছে, চল- খেতে খেতে কথা বলা যাবে। অর্পা কিছু বল্‌ল না। বাধ্য মেয়ের মত রিকশা থেকে নেমে গেল। আমি রিকশাওয়ালাকে ৫০ টাকার একটা নোট দিলাম। কিছু ফেরত পাবার আশা না করে সামনে চলে এলাম।

আজকে রেস্টুরেন্টে ভীড়টা দেখার মত। মনে হচ্ছে দেশে একটা দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে, আগে গেলে আগে পাবেন ভিত্তিতে রিচ ফুড বিক্রি করা হচ্ছে—অর্পা আর আমি দুইটা ফ্রাইড রাইস অর্ডার দিয়ে এক কোণায় বস্‌লাম।। অর্পা বল্‌ল—মামাকে বললাম তোমার ব্যাপারটা।
কোন ব্যাপারটা বল তো? মামলা?
হুম- মামা বললেন। তোমার হলে যেহেতু আর্মসগুলো পাওয়া গেছে তোমাকে রিমান্ডে যেতেই হবে।
আমি হাসলাম, বল্‌লাম—আর আমার রুমের_x__ এর বড়ভাই?? ওনাকে কি পুলিশ ডেকে নিয়ে পোলাও কোরমা খাওয়াবে?
আচ্ছা তুমি কি চাও?? অর্পাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
আমি তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারবো না- তোমাকে ছাড়তেও পারব না—আমি জানি না আমি কি চাই। ও বল্‌লো।
কেন ছাড়তে পারবে না? আমার তো মনে হয় অনেক ভাল ভাল ছেলে তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে।
তোমার প্রোফাইলে যেয়ে বসে থাকে এমন ছেলের অভাব আছে ভার্সিটিতে?? তুমি তো সবার হার্টথ্রুব।

দেখ, বাজে বকো না। তুমি এই কয়দিন আমার ইমোশন নিয়ে অনেক খেলেছ। এখন আমাকে শান্তি দাও।
কি চাও তুমি?? আমি ফের প্রশ্ন করলাম।

মামা বল্‌ল—তুমি যদি নিজ থেকে মামার কাছে যেয়ে ধরা দাও অথবা পুলিশের কাছে যেয়ে ধরা দাও, তাহলে তারা একটা ব্যবস্থা করতে পারে তোমাকে প্রটেক্ট করার, অন্তত সেলে টর্চার করবে না কেউ। আর রিমান্ডের পর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পেলেই তোমাকে ছেড়ে দিবে।

আমি হতাশ কণ্ঠে বললাম, কি তথ্য দিব আমি? আমি তো সেভাবে আমার দলের সাথে যুক্ত না--- আমি কিছু জানি না। আর যে মামলায় আমাকে গ্রেফ্‌তার দেখানো হইছে, সেটার সাথে যদি আমি জড়িত না হই কেন আমি ধরা দিব? ভার্সিটিতে ___x__ এর বড় ভাইরা ইচ্ছা করে এটা করতেছে কেন বুঝতেছ না?

আমি বুঝতে চাই না—দেখ। আর এক সেমিস্টার পর রেসাল্ট।। অন্তত এই সময়টায় এসব পাগলামি করো না—রেসাল্টের পর হয়তো মা –বাবা ধরে বেঁধে একটা ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে—আমি তাদের সামনে তোমার কথা কিভাবে তুল্‌ব? যখন ওনারা শুনবে তুমি পলাতক একজন আসামী?

ততদিনে সরকার বদলাবে। এই মামলা কোথায় চলে যাবে তার কোন হিসাব আছে?? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম।
ওয়েটার এসে খাবার সার্ভ করে গেল। আমি দুটা কোক অর্ডার দিলাম।

অর্পা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল্‌লো।, “ তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালবাস?
আমি বললাম, হ্যা-কেন?
তাহলে আমার জন্য তুমি এইটুকু করতে পারবে না?
কি করতে হবে?? পুলিশের কাছে ধরা দিতে হবে?
হ্যা, আমি তোমার- আমার, দেশের সবার ভাল র জন্য্‌ই বলছি—
আমি চুপ করে রইলাম—অর্পা যা বলছে অবাস্তব কল্পনার কথাবার্তা। আমি দোষ স্বীকার করলে পুরা ভার্সিটিতে দলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অনেক আশ্বাস নিয়ে একদিন আমার গলায় মালা পড়িয়েছিল সবাই, আমার কি উচিত হবে নিজেকে এভাবে সঁপে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করার??
কি ভাবছ?? অর্পা জিজ্ঞেস করল।
না কিছু না—আমাকে একটু ভাবতে দাও— রাতে মা এর সাথে একটু দেখা কর্‌তে যাব—কাল এসে তোমাকে জানাব।

অর্পা কিছু বল্‌লনা—ব্যাগ থেকে ফোন বের করে চাপ্‌তে লাগ্‌ল।
আমরা খাওয়া শেষে বের হয়ে পুলিশের মস্ত বড় একটা প্রিজন ভ্যানের সামনে পড়ে গেলাম। অর্পার মামাকে আমি ভাল মতই চিনি, মালিবাগ ডিবি পুলিশ কন্ট্রলের হেড। আমাকে আস্তে করে বললেন, কোন ভয় নেই, তুমি তো আমার ছেলের মতই, ওঠ গাড়িতে- তোমার ব্যাপারটা আমরা দেখছি।

অর্পা মামার পিছনে যেয়ে দাঁড়াল। আমি হতাশ কণ্ঠে বললাম, বিদায় অর্পা, ভাল থেক।
গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্টের শব্দ এতটা বিরক্তিকর আমার কাছে কখনো মনে হয় নি। ইঞ্জিনের শব্দে আমার হৃদপিণ্ড বারবার কেঁপে উঠছিল—কানে বাজছিল শব্দ দুটা। “ বিদায় অর্পা, বিদায় অর্পা ” ।।








দেশের সরকারশ্বাসিত চ্যানেল গুলোর নিউজে আমাকে লাইভ টেলিকাস্ট করছে, একটা সাদা টেবিলে কয়েকট চাইনিজ রাইফেল রেখে তার সাম্‌নে আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার মা’র কথা মনে পড়ল, মা আর যাই করুক প্রতিরাতে আট্‌টার বিটিভি নিউজ টা দেখেন। নরসিংদীর মফস্বল এলাকাতে ডিশ নেটওয়ার্কের তেমন প্রচলন হয়নি এখনো। মা দেখছেন আমাকে ভাবতেই কেমন শরীর গুলিয়ে উঠল। আমি মাথা নিচু করে আছি— ক্যামেরার আলোর ঝল্কানিতে আর শাটারে শব্দে চারপাশ মুখরিত। এক সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করে বলল- আমি শেষ কবে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করেছি—আমার ইচ্ছে করছিল ওর মুখের উপর একটা লাথি মারতে।





জিজ্ঞাসাবাদ সেল জায়গাটা বেশ অদ্ভুত, বিশাল বড় হলঘরের মত রুম- বাতি অনেক গুলো অথচ কোন ফ্যান নাই। অর্পার মামা মোনায়েম সাহেব আমাকে বারবার বলেছেন যা জানতে চাওয়া হবে তা যেন সরাসরি বলি, কারণ যারা প্রশ্ন করবেন তারা বেশি সুবিধার মানুষ না।

আমি অসুবিধার মানুষদের সামনে এখন মুখোমুখি বসে আছি।

তোমার নাম ধ্রুব?
জ্বী।
হিন্দু?
জ্বি।
তুমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ___y______ শাখার কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য?
জ্বি, গত মৌসুমে পরিষদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছি।
তোমাকে যে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তার নাম কি?
আমি জানিনা। আমাকে কে অস্ত্র দিয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা আমার অগোচরে ঘটেছে।
চশমা পড়া লোকটা একটা মোটা অস্ত্র নিয়ে আমাকে দেখাল- এই টা দিয়ে গত হর্‌তালে দুইটা খুন হইসে, তুমি কর নাই?
জ্বি না।
তুমি ছিলা ও না সাথে? যেখানে খুন হইছিল?
জ্বি না, আমি হরতালে বের হই না।
লোক দুজন হাস্‌ল।
একজন আমার সামনে বসে আরও কিছু প্রশ্ন করতে লাগ্‌ল।।
আমি অজানা প্রশ্নগুলোর কি জবাব দিব বুঝতে পারছিলাম না। আরেকজন ডিবি অফিসার রুমের এক প্রান্তে গিয়ে ফোনে কথা বলছিল-
অনেক্‌ক্ষণ পরে সে ফিরে এসে আমার দিক ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল, সনেট তোমাকে অস্ত্রগুলো দিয়েছে। চেন ওকে?
আমি বললাম, চিনি- ঢাকা মহানগর _____y_________সভাপতি।
কাল সকালে প্রেস কনফারেন্স হবে। তুমি মিডিয়াতে গিয়ে এই কথা বলবে, বুঝতে পেরেছ? তাহলে আমরা তোমাকে ছেড়ে দেব- তা না হলে কোর্টে চালান- বুঝতে পেরেছ?
মিথ্যা বলতে বলছেন?
শোন,মাঝেমাঝে স্বার্থপর হতে হয়। নিজের স্বার্থে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়।
আপনার মনে হয় আমার দলের লোকজন আমাকে ছেড়ে দিবে এটার পর?
হ্যা দিবে—কারণ তোমার দলের কাউকেই আমরা রাখব না—সবাই কেই তোমার মত মামলায় ফাঁসানো হবে। তোমার মত আরো অনেক্‌কে আমরা ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করছি।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। অর্পা আমাকে কি বিপদেই না ফেল্‌ল। ভার্সিটিতে মেয়েটার সাথে আমার হুট করেই প্রেম বলা যায়--- অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আমি কখনো ওর প্রেমে পড়িনাই—বরং উল্টো ওর নাম্বার থেকেই রাত ১২টায় একদিন ফোন আসে... ও ছিল ভার্সিটিতে হটকেকের মত—সবাই ওকে চাইত, কিন্তু ও কেন আমাকে পছন্দ করল সেটা আজ ও আমার অজানা ।

ফোন বাজছে, মা’র ফোন। আমি ঘড়ি দেখতে চাইলাম... ৭ টা ৫৫, এখনো ৫ মিনিট বাকি আটটা বাজতে। মা এখনো কিছু জানেন্‌না। আমাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হল-

হ্যালো, মা-
কিরে তোর না আজ আসার কথা? কই?
না মা আমি আজ আসব না- কাল ইনশাল্লাহ আসব, তোমার শরীর ভাল মা?
হ্যা ভাল- তোর জন্য খুব চিন্তা হয়, কি যে করিস হলে, কি খাস—
না মা, আমি ভাল আছি, তুমি কি কর টিভি দেখ?
না, এলাকায় কারেন্ট নাই ২ ঘন্টা ধরে, ট্রান্সফর্ম না কি জানি বার্স্ট হল, আমি তো ভয় ই পেয়ে গিয়েছিলাম প্রচন্ড শব্দে।

আমার বুক থেকে পাথর নেমে গেল, আমি আস্তে আস্তে বললাম। না মা ভয়ের কিছু নাই, আমি কাল আসব, রাখি এখন- আল্লাহ হাফেজ।
আচ্ছা বাবা, সাব্‌ধানে আসিস।

আবার আমার জেরা পর্ব শুরু হল--- অনেক অপ্রত্যাশিত কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল—যার জবাব আমার জানা ছিল না।



















জীবনে প্রথম মিথ্যা সাক্ষী দিলাম। নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী লাগার কথা ।অথচ আমার কেমন জানি নিশ্চিন্ত লাগছে। মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা কাঁটা গলা থেকে নেমে গেল। ডিবি পুলিশের অফিসে রাতটা খুব একটা খারাপ কাটেনি,তবে মশার যন্ত্রণা ছিল বেশ।আমাকে ছেড়ে দেয়ার কথা আর একটু পর ই। অর্পার সাথে দেখা করব নাকি বুঝতে পারছি না--- আমার সাথে এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করল কেন ও? তারপর ও ওর ঊপর কোন চাপা ক্রোধ আসছে না আমার। বরং ওর গোলাপী ঠোঁট্‌টা একটা বার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে—এখান থেকে বের হয়ে শেইভ করতে হবে। দাঁড়িগুলোকে আর সামলে রাখা যাচ্ছে না।অর্পার মামাকে দেখতে পাচ্ছি না। ভদ্রলোকের সাথে দেখা করা জরুরি। আমার প্রটেকশন দরকার, মাম্‌লা থেকে রেহাই পেয়েছি ঠিক ই। কিন্তু দলের লোকজন অনেক ভয়ানক ...আমার এই মিথ্যাসাক্ষী অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

আমাকে পুলিশ জীপে করে শান্তিনগর নামিয়ে দেয়ার কথা, কেন জানি মনে হচ্ছে শহরবাসী অবাক হয়ে আমাকে দেখছে। পুলিশের গাড়িতে করে কোন সাধারণ মানুষ চলাচল করে না, নিজেকে অসাধারণ পর্যায়ের মনে হচ্ছে।হঠাৎ মনে হল অর্পার সাথে একটু কথা বলা দরকার, ওর কথা মত ছাড়া পেতে যাচ্ছি এটা ওকে জানানো উচিত।
হ্যালো, কেমন আছো?
অর্পা চিৎকার করে উঠল- তুমি কখন ছাড়া পেয়েছ?
এইতো মাত্র---
আমি বলেছিলাম না—মামা খুব ভাল মানুষ—তোমাকে সাথে সাথেই ছেড়ে দিবে।
হুম আসলেই, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, --একটু আসবে??
আমি তো ঢাকার বাইরে –কাল রাতে হুট করে সিলেট চলে আসছি কাজিন রা মিলে, বলছিলাম না আমার এক কাজিনের বিয়ে।আমি আ্স্‌তে চাইনি। জোর করে সবাই ধরে এনেছে।
বলো কি? ফিরবে কবে?
তিন দিন পর--- তখন দেখা হবে---
আচ্ছা শোন----
কি??
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
হা হা---জেনে খুশি হলাম, এই যাই—আমাকে ডাকে।। বাই,পরে কথা হবে।
আরে পরে যাও না--- ভাল লাগছে কথা বলতে, জান আমি পুলিশের গাড়িতে চড়ে বসে আছি---আমাকে নামিয়ে দিবে ওরা।

ও পাশ থেকে হইচই এর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, অর্পা বেশ মজায় ই আছে মনে হচ্ছে।
আমি লাইন কেটে দিলাম।


হঠাত আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম গাড়ি শান্তিনগরের দিকে যাচ্ছে না। গাড়ি পরিবাগ পার হয়ে ছুটছে পলাশী লাল্‌বাগ রোড দিয়ে. আমি পাশে বসা ভদ্রমত লোক্‌টাকে জিজ্ঞেস কর্‌লাম, আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ? ---
রোবটের মত পুলিশটা উত্তর দিল— খুন খারাপি করে বেড়াবি আর তোরে কই নেয়া হবে?? শ্বশুরবাড়ি তে??
আমি একটা চিৎকার দিয়ে বললাম, আমাকে তো ছেড়ে দেয়ার কথা।
পুলিশটা হেসে বলল, হুম, দিমু ছাইড়া--- উপুরের হুকুম আসুক, ছাইড়া দিমু।।
আমি বুঝতে পারলাম কি হতে চলেছে, অর্পাকে আরেকবার রিং করলাম --- কেউ ফোন ধরছে না। কেউ না।







অর্পার সাথে ওইদিন ই আমার শেষ কথা হয়। ইলেকশন শেষে জেল থেকে বের হবার পর পর আমি অনেকবার ফোন দিয়েছি ওর নাম্বারে কেউ ফোন ধরেনি,কিছুদিন পর ওর সিমটাই অকেজো হয়ে যায়, আমি ওদের বাসার সামনে অনেক দিন দাঁড়িয়ে থেকেছি, পরিচিত কাউকেই পাইনি—ওর মামার সাথে যোগাযোগ করার জন্য সেই ডিবি অফিসে ছুটে গিয়েছি দু’বার, কাউকে পাইনি।।

জানিনা এর কারণ কি? কোন কারণে কি অর্পা আমাকে ভয় পাচ্ছিল? ও আমার ক্ষতি করেছে বলে আমি ওর বড় কোন ক্ষতি করব এই ভেবে? নাকি আমার প্রতি ওর ভালবাসা ওখানেই শেষ? আমি আর রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে কখনো ঢুকতে পারি নি, ভার্সিটি থেকে আমারে এক বছরের জন্য সাস্পেন্ড করা হয়েছে, আমি তাও হলের বেডে শুয়ে থাকি প্রায় ই--- দলের জুনিয়র সদস্যরা প্রায়্‌ই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।
আমি অর্পার কথা মনে করি।। অনেক ফর্সা ছিল মেয়েটা , ফর্সা মেয়েরা অহংকারী হয়।। অর্পা মোটেও অহংকারী ছিল না---ও এমন কেন করল? কেন??




একদিন রাত ১২টায় আবার ওর ফোন পাই---
আমি জানতাম অর্পা একদিন ফোন করবে। ফুসফুসের সমস্ত শক্তি দিয়ে বলি, ‘হ্যালো ?
হ্যালো.কেমন আছ?
ভালো- তুমি?
এইতো আছি—হঠাৎ তোমাকে মনে পড়ল—অর্পা বলল।
হঠাৎ?? আমি হাসলাম—কেন মনে পড়ল??
জানি না--- আজ আমি একটা গুড নিউজ পেয়েছি, আমি থার্ড হয়েছি ফাইনালে। তাই তোমার খবরটা জানতে ইচ্ছে করছিল,আমাকে ছাড়া প্রথম কোন পরীক্ষা দিলে।।
কে বললো দিলাম?--- দেইনাই তো—আমাকে সাস্পেন্ড করছে—বাদ দাও এসব- তোমার হাসবেন্ড কেমন আছে?

হাসবেন্ড মানে?? তোমার ধারণা আমি বিয়ে করে ফেলেছি?? !!
কর নাই??? তাইলে আমার কাছ থেকে পালায়ে আছ কেন??? আজকে প্রায় তিন মাস কোন যোগাযোগ নাই--- আমি পাগলের মত তোমাকে খুজছি সব জায়গায়, পাইনাই...
বলতে বলতে আমার গলা ভারী হয়ে আস্তে লাগ্‌ল।

আমি জানি, অর্পা আস্তে আস্তে বল্‌ল। আমিও তোমাকে খুজেছিলাম। তোমাকে যেদিন ধরে নিয়ে গেল তার পর থেকে প্রত্যেক্‌টা দিন--- আমাকে বলা হয়েছে তুমি গা ঢাকা দিয়ে আছ, যাতে কেউ তোমার ক্ষতি না করতে পারে।আমি তোমাকে অনেক ফোন করেছি--- পাইনাই।

তোমার মামা আর ডিবি পুলিশের ষড়যন্ত্রের জালে আমি আটকা পড়ছিলাম। আমাকে ইলেকশন পর্যন্ত কোন কারণ ছাড়াই জেলে আটকে রাখছে---আমার মা আমার খোঁজ না পেয়ে অসুস্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন।। তুমি আর কি চাও??? তোমার দেয়া আশ্বাসে আমি তোমার মামার কাছে ধরা দিয়েছিলাম।তোমার জন্য আমি সব হারালাম জীবনের।।

দেখ আমি এসবের কিছু ই জানতাম, না--মামা সরকার দলীয় লোকে চাপে সব করছে। আমাকে এসব জানতে দেয়া হয় নাই।

সরকার??!! এখন??? এখন কই তোমার মামা???

মামাকে এক্সিকিউট করা হইসে মাস্‌খানেক আগে---মামা যখন আমাকে তোমার কথা বলল আমি তোমাকে সাথে সাথে ফোন করতে চাইছিলাম, কিন্তু...

কিন্তু কি??

ধ্রুব—আমি চলে যাচ্ছি—

চলে যাচ্ছি মানে?? কোথায়??
এম এস সি করতে , অস্ট্রেলিয়া---বাবা খুব করে চাচ্ছে। জানোই তো আমার বড় আপু ওখানে। ওখান্‌কার ভার্সিটিগুলো খুব ভাল, এখন শুধু রেসাল্ট টা ওদের সেন্ড করতে হবে, তাহলে লেস টিউশন ফি তে পড়তে পারব।

ওহ, খুব ভালো, আমাকে জানাতে ফোন করলে??
আমি জানি না আমি কেন আবার তোমাকে ফোন করেছি, কিন্তু... আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমার ভাল 'র জন্য ই সব করতে চেয়েছিলাম। আমাকে তুমি ক্ষমা কর।

আমি চুপ করে রইলাম।
ও পাশ থেকে ক্রমাগত ভেসে আসতে লাগ্‌ল।– 'হ্যালো, হ্যালো হ্যালো।

তুমি কি আমার সাথে দেখা করতে চাও?? অর্পা জিজ্ঞেস করল।
না, তার আর কোন প্রয়োজন দেখি না—

কেন না? তোমার পদ কি এখন? তোমার দল তো এখন ক্ষমতায়—
আমি আর রাজনীতি করি না। আমি জবাব দিলাম।
কি!! সত্যি??
কেন? এখন কি ফিরে আসবে আমার কাছে?? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

অর্পা হাস্‌ল--- সম্ভব হলে আসতাম, আমার ফ্লাইট ১৫ ই ফেব্রুয়ারী—তুমি আসবে তো?? আমাকে বিদায় জানাতে?


আমি বললাম, আমার অনেক কষ্ট হবে, না হলে আসতাম।
আচ্ছা ঠিক আছে- রাখি তাহলে, বিদায়।
বিদায়- ভাল থেক-


রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছি। আজ আর কেউ নেই রুমের বেডগুলোতে—এক্‌ সাথে অনেকগুলো চিন্তাভাবনায় মন দিতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার মন-মস্তিষ্কে শুধু দুটা শব্দই গেঁথে গিয়েছে—“বিদায়, ভাল থেক”।



{{ এই গল্পের সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক, কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে আমি দায়ী নই--সংগত কারণেই কোন রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করা হল না --- }}
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×