বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে থাকতে অবস্থা এতটাই করুন হয়ে গেছে আজকে যে কাজটি সবচেয়ে সহজ তা হচ্ছে অপরকে বিভ্রান্ত করা কিন্তু হক তথা সহীহ পথের আহবানে খুব একটা বেশী সারা পাওয়া যায় না। আজকে ঈমান-আকীদা সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকার কারণে, দাওয়াত প্রদানের বিভিন্ন পদ্ধতী আবিস্কৃত হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে বিশাল জনগোষ্ঠী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রীতি-নীতিকে ইসলামী করণ করে মেনে চলছে।
যিনি নামাজ পড়েন তাকে যদি জিজ্ঞসা করা হয়, আচ্ছা কেউ যদি নামাজ না পড়ে তাকে কি আপনি বাহবা দিবেন? সে উত্তরে বলবে কখনই না! কিন্তু তাইতো হচ্ছে! উদাহরণ স্বরুপ, ক্রিকাটাররা যখন ফরজ নামাজ বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলে তখন সেই নামাজি ব্যক্তিটিই বাহবা দিবে! এটাকি বিপরীতমুখী আচরণ নয়?
আবার যদি কাউকে বলা হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ ব্যতীত কোন কর্ম ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, তখন সম্মতি জ্ঞাপন করে সেই ব্যক্তিটি মাথা ঝোকাবেন, ঠিক ঠিক। “সাল্লু কামা রআইতুমুনি ওসাল্লি’’ অর্থাৎ “তোমরা সালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ”, জামাআত নামাজে কাতারে দুই ব্যক্তির মাঝে ফাকা জায়গা না রাখার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতটাই সতর্ক ছিলেন যে প্রত্যেক ফরজ নামাজ শুরু করার আগে তিনি সাহাবাদের সতর্ক করে দিতেন। নু’মান ইবনে বশীর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তানা হলে আল্লাহ তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন। (সহীহ আল বুখারী, আযান অধ্যায়)
এখন প্রশ্ন হলো কাতারে সোজা করে দাড়ানোর নিয়ম কি? আসুন দেখি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ কি বলে।
কাতারে সোজা হয়ে দাড়ানোর নিয়ম হল: আনাস (রা) বলেনঃ আমাদের প্রত্যেকেই তারা পাশ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (সহীহ আল বুখারী, আযান অধ্যায়)
অর্থাৎ কাতার সোজা করে দাড়ানোর যথার্থ নিয়ম হলো এইটা। কিন্তু আমরা কি এমন করে কাতার সোজা করে দাড়াই? নাহ, দাড়াই না। আমরা অনেকটুকু জায়গা ফাকা রেখে দাড়াই। আর পাশে একটু মলিন কাপড় বা একটু গরীব লোক হলে তো কথাই নেই যতটা ফাক করা যায় ততটা তো করিই সম্ভব হলে জায়গা পরিবর্তন করে দাড়াতে চেষ্টা করি। দেখুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তানা হলে আল্লাহ তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন”। কথাটি যে কতটা বাস্তব তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আজ দেখুন আমাদের মুসলমান ভাইদের মাঝে বিরোধের অভাব নেই। নামাযে আপনার পাশে, বাসে আপনার সিটের পাশে অন্য একজন মুসলিম ভাই বসে আছে তার সাথে দেখুন আপনার কত মতের অমিল, কত বিরোধ। আর উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখুন, আমাদের এই ব্লগ, ভার্চুয়াল জগত, আমরা একে অপরকে বাস্তবে কোনদিন দেখিই নাই অথচ আমাদের মুসলিম ভাইদের মাঝে বিরোধের অভাব নেই। এখন কাউকে যদি বলা হয় আসুন ভাই এভাবে দাড়াই, তখন শুনতে হবে, অহ, আইছে ওহাবী, লা মাযহাবী, আহলে হাদীস ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ মুখে যদিও বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ মানতে হবে কিন্তু কর্ম তার ঠিক বিপরীত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ নামাজকে খুবই গুরুত্ব দিতেন, কারণ তারা জানতেন ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগকারী “কাফির”। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ফজরের নামাজ ত্যাগ করে আর জোহরের নামাজ পড়ার আগে মারা যায় তাহলে তার মৃত্যু হবে কাফিরের মৃত্যু। তাই কোনভাবেই যেন এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে না যায় সেই বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন দাজ্জাল এই পৃথিবীতে কতদিন থাকবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তরে এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, দাজ্জালের একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে একমাসের সমান এবং একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান আর এরপর বাকি দিনগুলো স্বাভাবিক থাকবে। সাহাবীরা এই জবাব শুনে কি বিষয়ে সর্বপ্রথম জানতে চেয়েছিলেন আসুন তার দিকে লক্ষ্য করি, হে আল্লাহর রাসূল, এক দিনের নামাজ কি যথেষ্ট হবে যখন একদিন এক বছরের সমান হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না, তোমরা আনুমানিক হিসাব করে নামাজ পরে নিবে অর্থাৎ সাধারণ দিনে যতটুকু সময় পর এক ওয়াক্তের পর অপর ওয়াক্ত আসে সেই হিসাবে নামাজ পড়ে নিবে। সাহাবীরা প্রথমেই জানতে চাইলেন নামাজ নিয়ে! সুবহানাল্লাহ, নামাজ নিয়ে তারা কতটাই না সতর্ক ছিলেন। আর এখন আমাদের অনেকের নিকটই এই হাদীস বর্ণনা করা হলে তখন সে জিজ্ঞাসা করতে ব্যাস্ত হয়ে যাবে, যেমন: তখন কি পৃথিবী ঘুরবে না? আকাশে কি সূর্য স্থির থাকবে? নাকি দুইটা সূর্য থাকবে? এই হচ্ছে আমাদের মধ্যে এবং সাহাবীগণের মধ্যে পার্থক্য! সাহাবীগণ সতর্ক হতেন কিভাবে নিজের জীবনের অমূল্য সম্পদ ঈমানটুকু যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, কিভাবে ইবাদত করলে আল্লাহর নিকট কবুল হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে জেনে নিতেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় আর জান্নাত লাভের পথ অনুসন্ধান করতেন সর্বদা। আর আমরা? কতশত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কতশত প্রশ্ন করি কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ততা কিংবা প্রশ্নগুলো না আমাদের আল্লাহর আনুগত্য করতে সাহায্য করছে না পরকালে এ থেকে কোন লাভবান হওয়া যাবে।
কথা আর বাড়াব না, আল্লাহ তাআলা আমাদের হক কথা বুঝার সুমতি দান করুন, আমীন।