somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ হিসেবে জন্মেছেন ঠিকই, মানুষ হতে পারেননি।

১৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে হিসেবে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে সুন্দর দেশ পৃথিবীতে খুবই কম আছে। মানুষরাও ভাল। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন রেসিস্টের ছড়াছড়ি, ওরা সেই তুলনায় খুবই ভাল মানুষ। খুবই ডাইভার্সড। প্রচুর এথনিসিটি। সব দেশের মানুষই পাওয়া যাবে সেখানে।
একটাই সমস্যা, প্রচন্ড ঠান্ডা। এই কারণেই আমরা বাঙালিরা গিয়ে সেখানে বসত গড়ি না। তারপরেও প্রচুর বাঙালি আছেন সেখানে। আমার চাচা ফুপুদের একটা পুরো গুষ্ঠি থাকেন ওয়েলিংটনে। তাঁরা বলেন "ছবির চেয়েও সুন্দর দেশ! ঠান্ডাটা যদি একটু কম হতো!"
এবং তারপরই ঘটলো আজকের এই সন্ত্রাসী হামলা।
হামলাকারী ভিডিওগেম স্টাইলে অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে পিঁপড়ার মতন মানুষ খুন করলো। শিশু বৃদ্ধ নিরস্ত্র কেউই ছাড় পেলো না। ৪৯ জন "মানুষ" মারা গেলেন! উদ্বিগ্ন মা বাইরে তাঁর সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন, সন্তান বেরুচ্ছে না, ফোনও ধরছে না।
এক ভদ্রলোক মসজিদে গোলাগুলির সময়ে দোয়া করছেন, ইয়া আল্লাহ, তার বুলেট তুমি শেষ করে দাও! নাহলে যে বাঁচার কোনই সুযোগ নেই!
আমাদের ক্রিকেট দল মসজিদের দ্বার থেকে ফিরে এসেছে। পাঁচটা মিনিট আগে গেলে তাঁরাও মসজিদের ভিতরে থাকতেন। ভাবা যায়?

সন্ত্রাসীরা ইচ্ছে করেই জুম্মার সময়ে মসজিদে আক্রমন করেছে, যাতে বেশি মানুষ মারা যায়। ঘটনাটা আমেরিকায় হরহামেশাই ঘটে। এখানে বিস্কিট চানাচুরের মতন রাইফেল পিস্তল বিক্রি হয়। নিউজিল্যান্ডেও কী একই ঘটনা নাকি?

"রেসিজম" ব্যাপারটা কতটা জঘন্য হতে পারে, আজকের ঘটনা সেটারই প্রমান। মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে সাদা কালো, খ্রিষ্টান মুসলিম হিন্দু ইহুদি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে যারা, তাদের পক্ষে সবই সম্ভব।

এখন বাঙালি হিসেবে আমাদের কী করা উচিৎ জানেন? ফেসবুকে সস্তা লাইক কমানোর ধান্দা না করে পারলে নিহতদের জন্য একটু সমবেদনা জানানো।

যেমন কিছু ধান্দাবাজ রাস্তায় নেমেছে "মুসলিমদের দোষে এই হামলা" হয়েছে জাতীয় পোস্ট নিয়ে। একশো দুইশ লাইক হবে, কিছু সমমনাদের বাহবাহ পাবে, হাজারে হাজারে মানুষের গালাগালি শুনবে - ব্যস, পোস্ট উসুল! এরা কী বুঝে যে এরা মানসিকভাবে কতটা অসুস্থ? এইসব ঘটনাকেও ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে? ছিঃ! আমাদের থুথু ফেলার পাত্রও এদের চেয়ে পবিত্র। জীবন এতটা "পাত্তা শূন্য" হলে, লোকজনের পাত্তা পেতে এতটা ডেসপারেট হলে ক্রিয়েটিভ কিছু পোস্ট করে পাত্তা পাবার চিন্তা করুন। রান্না রেসিপি ভিডিও দিন, মেকাপের টিপস দিয়ে ভিডিও দিন - প্রচুর ফলোয়ার পাবেন। উল্টো ভাল কাজ হলে প্রশংসাও। এই পথ ছাড়ুন। এর মাধ্যমে নিজেকেই ছোট করছেন।

একগ্রূপকে দেখছি "বয়কট নিউজিল্যান্ড" ক্যাম্পেইন শুরু করে দিতে। সিরিয়াসলি? "নিউজিল্যান্ড" কী সরকারিভাবে এই হামলা করেছে? তাঁদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন সন্ত্রাসীদের একজন স্বীকার করেছে যে তারা অস্ট্রেলিয়ান। এখন কী অস্ট্রেলিয়াকেও বয়কট করবেন? সন্ত্রাসীকে বয়কট করুন, পুরো জাতি, পুরো গোষ্ঠী টানা আহাম্মকীপনা।
কিউই প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তোমরা অপকর্মের জন্য আমাদের নির্বাচন করেছো, আমরা তোমাদের রিজেক্ট করলাম। তিনি এও বলেছেন তাঁদের ইতিহাসেরই অন্যতম অন্ধকারতম অধ্যায় আজকের এই দিনটি।
এই যে তিনি উপলব্ধি করেছেন ঘটনাটি কতটা গুরুতর, এতেই সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে গেল। আশা করি বাকিটা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সামলে নিবে। আমাদের টেন্ডেন্সি হচ্ছে, এমন ঘটনা ঘটলে এগুলোকে "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" বলে হালকা করে ফেলা। এতে দোষীরা আরও সাহস পায়।

আরেক গ্রূপ চেষ্টা করছেন সন্ত্রাসীদের ভিডিও "লাইক ও শেয়ার দিয়ে" ছড়িয়ে দিতে। সন্ত্রাসীরা ভিডিও করেছে কিজন্য বলে আপনাদের ধারণা? যাতে লোকে ওদের কাজটা দেখতে পারে। আপনারা কী করছেন? ওদের উদ্দেশ্যটাই সফল করছেন। দয়া করে ভিডিও দেখবেন না। শেয়ার করারতো প্রশ্নই উঠেনা। কমন সেন্স এপ্লাই করুন। প্লিজ!

যাই হোক। বুঝা যাচ্ছে এটি সংঘবদ্ধ চক্রের আক্রমন। সাদা চামড়ার এক্সট্রিমিস্টদের সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, তাঁরা নিশ্চই বুঝতে পারছেন এরা কতদূর কী করার ক্ষমতা রাখে। বিশ্বের যে কোন ইবাদতখানায়, হোক সেটা মসজিদ, মন্দির, সিনাগগ, মন্দির অথবা চার্চ; সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিনে দয়া করে পুলিশি ব্যবস্থা রাখুন। কর্তৃপক্ষকে বলুন অবশ্যই যেন পুলিশি প্রোটেকশনের ব্যবস্থা রাখে। দুই চার পয়সা বেশি যাবে, কিন্তু ৪৯টা প্রাণের একটিও ফেরত আসবে না।

আজকে আমেরিকায় জুম্মার দিন। বিশেষ প্রার্থনা করুন নিজের ভাইবোনদের জন্য। বিশেষ প্রার্থনা করুন সারাবিশ্বের মানুষের জন্য। পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে যে ছাগল আনন্দে তালি বাজায়, সেই আগুনেই তার বাড়ি পুড়তে সময় লাগেনা। আপনি তখনই নিরাপদ থাকবেন যখন বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ নিরাপদে বাস করবে।
আজকে যারা মুসলিম মরেছে ভাল হয়েছে বলে তালি বাজাচ্ছেন, একদিন তাদের নিজের আত্মীয়কেও একইভাবে মরতে দেখবে। এইটাই পৃথিবীর নিয়ম।

আমেরিকায় গতবছর যখন সিনাগগে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, মারা গিয়েছিলেন প্রচুর ইহুদি, তখন ইহুদিদের পাশে সবার আগে দাঁড়িয়েছিল কারা জানেন? এই দেশের প্রতিটা শহরের মুসলিমরা। চাঁদা তুলে তাঁদের ফিউনারেলের পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের সাহায্য করেছিল এরা। মানসিকভাবে তাঁদের সবচেয়ে বড় সাপোর্ট দিয়েছিল এই মুসলিমরা। তাঁরা জানে কালকে মসজিদে হামলা হলে এই ইহুদিরাও দাঁড়াবে, একই কাজ করবে। যদি নাও বা দাঁড়ায়, আমরা মানুষ হিসেবে আমাদের ধর্ম পালন করলাম।

যারা এখনও কোন কিছু অনুভব করছেন না, তাঁরা ভিকটিমদের ইন্টারভিউ দেখুন, তাঁদের স্বজনদের ইন্টারভিউ শুনুন। আমার কাছেতো বাদামি চামড়ার ভদ্রলোকগুলোকে বাঙালিই মনে হচ্ছে। নিজের চাচা ফুপুদের থেকে আলাদা কেউ মনে হচ্ছে না। সাদা চামড়ার যে মহিলা ইন্টারভিউ দিলেন তিনি আমার অফিস সহকর্মী, বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধব বা বর্তমান প্রতিবেশী থেকে কতটা ভিন্ন? এরপরেও যদি কিছু অনুভব না করেন, তাহলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের প্রতিই আফসোস করুন। মানুষ হিসেবে জন্মেছেন ঠিকই, মানুষ হতে পারেননি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৪১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×