somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যামেরিকায় খাওয়া কালচারাল শক

২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যামেরিকায় এসে প্রথম কালচারাল শক খাই লস এঞ্জেলেস এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই। একটি দালানে সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা "জেন্টেলম্যান্স ক্লাব।" আমাদের দেশের যেটা "নিষিদ্ধ পল্লী।"
আমাদের নিষিদ্ধ পল্লীগুলোতে কেউ এইভাবে বিলবোর্ডে সাইন বোর্ডে লিখে লিখে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেনা। এদেশ "প্রচারেই প্রসার" তত্বে বিশ্বাসী।
বুঝে গেলাম, এই দেশে বসবাসটা ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে।
তারপরে শুরু হলো শকের পর শক। কোনটা ফেলে কোনটা বলবো গুছিয়ে উঠতে পারছি না।
তবে প্রথম ধাক্কা খেলাম নারী পুরুষের অবাধ চুম্বন দৃশ্যে। আমরা যেটা আগে শুধু স্টার মুভিজ এবং এইচবিওতে দেখতাম, তাও বড় কেউ সামনে বসা থাকলে রিমোট দিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিতাম।
বলিউড সিনেমায় ইমরান হাশমি সাহেব বিপ্লব এনেছিলেন। চুম্বন দেবতা ছিলেন তিনি। প্রতিটা সিনেমাতেই প্রসাদ বিতরণ করতেন। এদেশে সবাই চুম্বন দেবতা। ইচ্ছেমতন প্রসাদ বিতরণ চলে। স্থান কাল পাত্র কেউ পরোয়া করেনা।
তবে নারী পুরুষের এই অবাধ চুম্বের চেয়েও বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম পুরুষে পুরুষে চুম্বন ও হাত ধরাধরি করে হাঁটার দৃশ্য দেখে।
আমাদের পুরুষেরা তাঁদের পুরুষ বন্ধুদের হাতে হাত ধরে অবাধে হাঁটাহাঁটি করেন। কেউ কেউতো কাঁধে হাত দিয়ে চলেন। দৃশ্যটা সেখানে খুবই স্বাভাবিক।
আমার এক ব্রিটিশ দুলাভাই (সিলেটি, তবে ওখানেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা) জীবনে প্রথমবারের মতন ঢাকায় গিয়ে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলেন। অতি লজ্জিত কণ্ঠে আমাকে বলেছিলেন, "এদেশে ছেলেরা এমন কেন? তোরা মেয়েদের হাত ধরে হাঁট, এভাবে ছেলে ছেলেতে মেলামেশা, ঘষাঘষি - কেউ খারাপ বলে না?"
আমি তখন মজা পেয়ে বললাম, "আরে না। আমাদের এখানেতো এক ছেলে বন্ধু যদি আরেক ছেলে বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটাতে চায়, এক বিছানায় শুতে চায়, আমাদের প্যারেন্টসরা হাসিমুখে রাজি হন।"
দুলাভাই চোয়াল ঝুলিয়ে বললেন, "আস্তাগফিরুল্লাহ!"
তো সেটা ছিল হাসি ঠাট্টা। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা সিরিয়াস। ক্যালিফোর্নিয়ায় এ দৃশ্য অহরহ দেখা যেত। আমাকেও একবার একজন ছেলে জিজ্ঞেস করেছিল আমার কাজ কয়টায় শেষ হবে। সে এলাকায় (ডালাস) নতুন এসেছে। আমি কী তাঁকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে পারবো কিনা।
যদিও কাজ মাত্র আধঘন্টা পরেই শেষ হচ্ছিল, তারপরেও চোখমুখ শক্ত করে বলছিলাম "আমি মাত্রই কাজেই এসেছি। এবং আমিও এলাকায় নতুন, কিছুই চিনিনা। স্যরি।"
ছেলেটা উৎফুল্ল স্বরে বলেছিল, "তাহলেতো আরও ভাল! দুইজনে মিলে আবিষ্কার করবো। খুব মজা হবে!"
কাস্টমার। দুর্ব্যবহার করা যায় না। তাই আমি যান্ত্রিক স্বরে বলেছিলাম, "দুঃখিত। কাজ শেষে আমার পড়াশোনা আছে। পরীক্ষা চলছে। আমাকে পড়তে হবে।"
ছেলেটা বুঝতে পেরেছিল আমার আগ্রহ নেই। মর্মাহত হয়েছিল বোধয়। মেয়েরা কেন অবলীলায় ছেলেদের কুসুম হৃদয় ভেঙ্গে দেয় সেটা সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম।
যাই হোক, আগে টেক্সাসে কম দেখা গেলেও এখন চোখ সওয়া হয়ে গেছে। আমার নিজেরই বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব আছেন সমকামী। হোমোফোবিয়া কেটে গেছে বহু আগেই। ওরা কিভাবে জীবন কাটায় সে ব্যাপারে আমার নাক গলানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমরাতো এখনও বাঙালি প্যারেন্টসই রয়ে গেছি।
আমাদের এক বান্ধবী তাঁর চার বছরের ছেলেকে প্রতিদিন এই বুলি মুখস্ত করায়, "বাবা তুই নিজের জন্য একটা মাইয়া জোগাড় করবি। সাদা হোক, কালা হোক, ইন্ডিয়ান হোক, চাইনিজ হোক - কোনই সমস্যা নাই। আমার একটাই কন্ডিশন, আল্লাহর ওয়াস্তে তুই নিজের জন্য একটা মাইয়া জোগাড় করবি।"
কী দারুণভাবে আমাদের মায়েদের ডিমান্ড বদলে গেল।
একটা সময়ে আমাদের বাংলাদেশী মায়েরাই (এখনও) পুত্রবধূ বাছাইয়ে কত নখরা যে করতো। এই মেয়ের নাক খাড়া, ঐ মেয়ের বোচা, এই মেয়ের চোখ টানা, ঐ মেয়ের বুজা - আর রং শ্যামলা হলেতো কথাই নাই। এখন সবাই লাইনে ফিরেছে। "মেয়ে হলেই হলো।"
তো আমার ছেলেও মন্টিসোরিতে যাওয়া শুরুর পরে থেকে মাশাল্লাহ নিজের ক্লাসের মেয়ে মহলে তাঁর ডিমান্ড ভালই। বয়সের তুলনায় একটু লম্বা হওয়ায়, প্রায়ই তাঁকে তাঁর চেয়ে এক বছরের বড় গ্রূপের সাথে মেশানো হয়। দেখা যায় সে কিছু কথা কুতিয়ে কাতিয়ে বলতে পারলেও তাঁর সহপাঠীরা বেশ পটর পটর করে কথা বলতে পারে।
আগের স্কুলে দুই আরব কন্যার প্রতিযোগিতার কাহিনীতো বলেছিলাম। কথা উঠায় আবারও সংক্ষেপে মনে করিয়ে দেই।
একজন আমাকে "ড্যাডি" বলে ডাকতো, তো আরেকজন আমার বৌয়ের সাথে ফটো তুলতো। দুইটা বাচ্চাই দেখতে পুতুলের মতন। ছেলে ক্লাসে গেলেই "হাই রিসালাত" বলে দুইজনই ছুটে আসতো তাঁর জ্যাকেট খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখার জন্য। তাঁর সাথেই দুইজনে খেলতে আগ্রহী।নিজেদের মধ্যে কম্পিটিশন।
এদিকে যাকে নিয়ে এত আগ্রহ, সে একেবারে অ্যাংরি ইয়াং ম্যান ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নিজের মনে খেলে। পাত্তা টাত্তা দেয় না। খুব সম্ভব বাঙালি এক মেয়েকে ভালবেসে বসে আছে।
যাই হোক, আগের স্কুলের এক টিচারের অসভ্যতায় স্কুল পরিবর্তন করে নতুন স্কুলে দেয়ার পরে এখানেও দেখলাম দুই একজন জুটে গেছে।
ছেলেকে নিতে যাবার সময়ে এক মেয়ে নিজে থেকেই এগিয়ে এসে পরিচিত হলো।
"হ্যালো আমার নাম লিডিয়া, আমি আর রিসালাত এক সাথে খেলি। আজকে আমরা দুইজন দোলনায় চরেছি।"
আমি আবার শ্বশুর হিসেবে ভীষণ দিল দরিয়া। ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ। ছেলের না পছন্দও আমার পছন্দ। ওর ক্লাসের প্রতিটা মেয়েকে আমি তাই পুত্রবধূর চোখে দেখি।
আমার বৌ এইসবে খুবই মজা পায়। দেশে আমার শ্বাশুড়ীকে ফোনে শোনায়। ওপাশ থেকেও সবাই আনন্দ পায়।
লিডিয়া তারপর খুবই নির্বিকার স্বরে বললো, "আমার ফিফ্থ বার্থডেতে আমার বাবা মা বিয়ে করবে।"
আমার বৌ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। বেচারি মাত্রই আরেকটা কালচারাল শক খেলো। ওয়েলকাম টু অ্যামেরিকা।
"ওহ দারুন!" জেনুইন খুশি গলায় বললাম, "তুমি কী একসাইটেড লিডিয়া?"
সে জানালো "ইয়েস আই অ্যাম।"
তারপর লিডিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার কী রিসালাতের সাথে খেলতে ভাল লাগে?"
সে সরল মনেই জবাব দিল, "হ্যা। কিন্তু মাঝে মাঝে ও ডাইপারে হাগু করে দেয়। তখন ভাল লাগেনা। হাগুতে অনেক গন্ধ।"
আমি হো হো করে হেসে দিলাম।
আহারে আমার ছেলের প্রেম কাহিনী! গার্লফ্রেন্ডের সামনে ইজ্জতের মারামারি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৫৮
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×