somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

mard ko dard nehi hota রিভিউ

১৪ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমা, নাটক বা মঞ্চে অভিনয়ের প্রধানতম শর্ত হচ্ছে যে যখন যে ভূমিকায় অভিনয় করে, তখন দর্শকের কাছে যেন মনে হয় অভিনেতা নয়, বরং চরিত্র কথা বলছে। আমির খান যখন একজন হরিয়ানার কুস্তিগীরের ভূমিকায় পর্দায় আসবে, দর্শকের কাছে যেন মনে হয় পর্দায় হরিয়ানার বয়ষ্ক কুস্তিগীর হাজির হয়েছেন, বলিউড সুপারস্টার চকলেট বয় আমির খান নয়। ম্যাথড এক্টিং একেই বলে। চরিত্রের মধ্যে ঘুলেমিলে যাওয়া। চরিত্রকে ভাঙতে ভাঙতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রূপে পরিবেশন করা। পরিচালক সবসময়ে আপনাকে সবকিছু শিখিয়ে দিবে না। আপনাকেই গবেষণা করে বের করতে হবে। আপনি যদি রিক্সাওয়ালার ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাহলে ভাত খাবার সময়ে আপনার ঠোঁটের পাশে দুয়েকটা ভাত ঝুলে থাকতে হবে। আপনি যদি উচ্চবিত্তের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাহলে আপনার বাঁহাতে কাঁটা চামচ ও ডান হাতে ছুরি সঠিকভাবে ধরতে হবে। নাহলে কিছু দর্শককে ফাঁকি দিতে পারলেও বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ দর্শকের হাতে ধরা খেয়ে যাবেন।
হলিউডে এই ধারার অভিনেতা পাওয়া অতি সাধারণ হলেও বলিউডে এমন অভিনেতা খুব কম আছেন। আমির খান যেমন একটি সময়ে একটি সিনেমা নিয়েই কাজ করেন। চরিত্রের ভিতরে প্রবেশের জন্য মাসের পর মাস সেই চরিত্রের জীবনই যাপন করেন। "পিকে" সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাস্টার রেখে ছয় মাস ভোজপুরি শিখেছিলেন। যেখানে আমির হিন্দি পড়তে ও লিখতে পারেন না। তাঁকে "হিংলিশে" (ইংলিশে হিন্দি লিখতে হয়) স্ক্রিপ্ট লিখে দিতে হয়। "গাজনীর" সময়ে জিমে গিয়ে ব্যয়াম করে শরীর ফুলিয়েছেন। পুঁচকে আমির খান পিটিয়ে দশ বারোজন ভিলেনকে সাইজ করে ফেলছে, এই ব্যাপারটা তাঁর নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকছিল। নিজেকে বিশ্বাস করাতেই তাই অমন পরিশ্রম।
"দাঙ্গালের" সময়েও ঠিক তাই। রিটায়ার্ড রেসলারের শরীর বানাতে প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে মোটা হয়েছেন। সেই একই রেসলারের যৌবনের দুয়েকটা সিন পর্দায় তুলে ধরতে ছয় মাসের মধ্যেই দুর্দান্ত কুস্তিগীরের শেপে হাজির হয়েছেন।
কিন্তু সাধারণত বলিউডে কী দেখা যায়? শাহরুখ খানের "হ্যাপি নিউ ইয়ারই" নেয়া যাক। জীবনেও যারা নাচেনি, তাঁরা মঞ্চে উঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডান্স কম্পিটিশন জিতে নিয়েছে। কেন? কারন তাঁরা "দিলসে" ডান্স করেছে। হোয়াট আ লজিক! "ঝুম বারাবার ঝুম" সিনেমার টাইটেল সংও মনে হয় তেমনই কোন ডান্স কম্পিটিশনের দৃশ্যায়ন ছিল। এতটাই বিরক্তিকর ছিল যে মনেও নাই কী ঘোড়ার আণ্ডাটা দেখেছিলাম। এবং মনে হয় সেখানেও তাঁরা জিতেছিল। এখনও গানটা দেখলে বিরক্তিতে গা গুলায়। সিরিয়াসলি? অভিষেক বচ্চনের ঐ "ডান্স" (হাত পা নাড়াচাড়াকে যদি ডান্স বলে আর কি) পুরস্কার জেতার মতন নাচ?
বলিউডের ফাজলামি এখনও চালু আছে। মিসেস বিরাট কোহলির কিছুদিন আগেই মুক্তিপ্রাপ্ত "সুই ধাগা" সিনেমা দেখতে বসেছিলাম। যেহেতু বলিউডের নায়ক নায়িকা, তাই ওরাও একটা বড় ফ্যাশন কম্পিটিশন জিতে যায়। কিন্তু কাহিনী হচ্ছে, তাঁরা খান্দানি দর্জি হলেও ড্রেস ডিজাইনিংয়ের উপর তাঁদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা নেই। ফ্যাশন ডিজাইনিং এতটাই সস্তা বলিউড নির্মাতাদের কাছে। যেন কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং ডিজাইন করলেই পুরষ্কার জেতা যায়! ওসবের যেন কোন মানেই নেই। সিনেমায় Ramp ওয়াকে বাপ মা বন্ধু বান্ধব পাড়াপ্রতিবেশীকে উঠিয়ে দিয়েছে, ফোন বাজছে, তারা রিসিভও করছে, দর্শক হাসছে, বিচারক বিরক্ত হচ্ছে - তারপরেও তাদের পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। এখানেও "দিলসে" ফ্যাক্টর জড়িত।
এতটা আজগুবি গাঁজাখুরি না হলে কী চলে না?
বলিউডে বাস্তবঘেঁষা বাণিজ্যিক সিনেমা প্রথম বানাতে শুরু করেন রাম গোপাল ভার্মা। আগে অন্যরা আর্ট ফিল্ম বানাতেন। ক্রিটিক্যালি এক্লেইমড হতো ঠিকই, কিন্তু বক্স অফিসে পয়সা তুলতে পারতো না। রামুর সিনেমায় ফুটে উঠতো বাস্তবতা। বলিউডের শ্রেষ্ঠ গ্যাংস্টার মুভি, Satya সিনেমার কাল্লু মামা গানটির দৃশ্যায়ন এমন ছিল যে মুভি ক্রিটিকরা তখন বলতেন "এমন মনে হচ্ছিল যেন আমরা বিয়ারের গন্ধ নাকে পাচ্ছিলাম।"
রামুর সেই দিন আর নেই।
তাঁর শিষ্য অনুরাগ কাশ্যপ সে স্থান দখল করে নিয়েছে। অনুরাগের সিনেমাগুলোও হয় raw বাস্তবতা। গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর যেমন একটি মাস্টারপিস। এই সিনেমা বলিউডকে নাওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর মতন শক্তিমান অভিনেতা উপহার দিয়েছে। বলিউড শো অফ করতে পারবে, এমন কিছু প্রজেক্ট (গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ছাড়াও আছে ব্ল্যাক ফ্রাইডে। Satya সিনেমার লেখক তিনি, সাথে নেটফ্লিক্স ব্লকবাস্টার sacred games সিরিজেরও ডিরেক্টর তিনি) তাঁর হাত ধরে বেরিয়েছে।
এখন অনুরাগের শিষ্যরাও সিনেমা তৈরিতে নেমেছেন।
নেটফ্লিক্সে মার্দ কো দার্দ নেহি হোতা তেমনই এক শিষ্যের (ভাসান বালা) নির্মাণ।
সিনেমার নামটা খুবই বিরক্তিকর ও সস্তা। স্টারকাস্টও খুব একটা আহামরি নয়। পরিচিত বলতে কেবল মহেশ মাঞ্জরেকার আছেন।
নায়কের পরিচয় হচ্ছে তাঁর মা ম্যায়নে পেয়ার কিয়া সিনেমার অমর নায়িকা, ভাগ্যশ্রী।
স্টার কিডদের ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। বেশিরভাগকেই দেখি অপর্চুনিটিকে গ্র্যান্টেড হিসেবে গ্রহণ করতে। সোনাক্সি সিনহা, সোনাম কাপুর, অর্জুন কাপুর, এশা দেওল, ববি দেওল, উদয় চোপড়া,তুষার কাপুর এবং এই তালিকা বিশাআআআল।
বরং স্ট্রাগল করে আসা লোকজনকেই বেশি সফল হতে দেখা যায়। উপরে উল্লেখ করা নাওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী যেমন একটা সময়ে ধনিয়া পাতাও বিক্রি করেছেন সামান্য কিছু লাভের আশায়। কঙ্গনা রানাউত পুরো বলিউডের বিরুদ্ধে একা লড়াই করে এখনও "কুইন" হয়ে আছে। আর চাঙ্কি পান্ডের মেয়ে কিনা বলে তাঁর যোগ্যতা গুড লুক্স, গুড লুক্স এবং গুড লুক্স। সিনেমার সেটে কাজ করেই অভিনয় শিখে ফেলেছে।

এই সিনেমার নায়িকা রাধিকা মদনকে এর আগে দেখেছি "পাটাখা" সিনেমায়। ডিরেক্টর যদি হয় বিশাল ভরত্বাজ, তাহলে তিনি গরুর চেহারা থেকেও এক্সপ্রেশন বের করে সীন তৈরী করতে পারবেন। কাজেই রাধিকার অভিনয় যে ভাল ছিল তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাঁর আসল পরীক্ষা বরং এই সিনেমায় হয়েছে।
আগেই বলেছি, সিনেমার ডিরেক্টর ভাসান বালা অনুরাগের শিষ্য। এর আগে তাঁরা দুইজন মিলে কিছু প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কাজেই বিসমিল্লাহ বলে সিনেমা দেখা শুরু করলাম।
সিনেমা শেষে রিভিউতে কেবল এইটা বলবো, আমরা ছোট বেলায় ব্রুসলি, জ্যাকি চ্যানের সিনেমা দেখতাম না? ৯৫% অ্যাকশনের মধ্যে ৫% কাহিনী ঢুকানো থাকতো? এমন কনসেপ্টে ইন্ডিয়ায় এটাই বোধয় সফলতম সিনেমা। নায়ক নায়িকা কনভিন্সিংলি ভাল অ্যাকশন করেছে। দর্শকের মনে প্রশ্নই জাগবে না তাঁরা কারাটে পারে কিনা। ফারাহ খানের "ষাঁড়ের গোবর" কনসেপ্ট না যে "দিলসে মারামারি করেছে, তাই ভিলেন আপনাতেই শুয়ে কাইত হয়ে গেছে।" জেনুইন অ্যাকশন এবং সেইরকমই সিনেমাটোগ্রাফি ও এডিটিং। পর্দায় যেভাবে পরিবেশন করা হয়েছে, বুঝতে পারবেন পরিচালক এবং তাঁর দলবল ভালই পরিশ্রম করেছেন, সবাই মেধাবী এবং তাঁরা তাঁদের কাজ ভালই জানে।
পুরো সিনেমা কমেডি আর অ্যাকশন নির্ভর। সাথে আছে ভাল কাহিনী। অ্যাকশন এতটাই ভাল হয়েছে যে অভিনয়ের খুঁটিনাটি দেখার প্রয়োজন হয়নি। তবুও যেটুকু প্ৰয়োজন ছিল, তাঁরা ভাল অভিনয় করেছে। টাইগার শ্রফকে দিয়ে করালে হয়তো এরচেয়েও দুর্দান্ত অ্যাকশন পাওয়া যেত, সাথে দুর্দান্ত ডান্সও পেতেন, কারন এই মুহূর্তে বলিউডের সেরা ডান্সার এবং অ্যাকশন সুপারস্টার এই জুনিয়র শ্রফ। কিন্তু বিন্দুমাত্র অভিনয় পেতেন না যা ভাগ্যশ্রীর ছেলে অভিমন্যু দাসানি করেছে।
অ্যাকশন সিনেমা পছন্দ করলে দেখতে পারেন। ভাল সময় কাটবে। নেটফ্লিক্সে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×