somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার যদি কোন মেয়ে থাকে, এবং তাঁর ক্লাসের কোন ছোকরা তাঁর সাথে গ্রূপ স্টাডি করতে চা.....

২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে প্রায়ই দেখি রাস্তার ধারে পুলিশ লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি থামিয়ে টিকেট দিচ্ছে। হাইওয়ের পাশে খুবই সাধারণ দৃশ্য। লোকাল রাস্তা ঘাটেও দেখা যায়।
মাঝে মাঝে দেখি একটা গাড়ির পেছনে দুই তিনটা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ধরেই নেই যাকে ধরা হয়েছে, সে ব্যাটা বড়সড় কোন অপরাধী, যাকে ধরতে পুলিশ ব্যাকাপ নিয়ে হাজির হয়েছে।
গতকাল আমি বৌ বাচ্চা নিয়ে বাড়ির কাছের ওয়ালমার্টে শপ করতে বেড়িয়েছি। সিগন্যালে থামতেই অন্যপাশে সামনে দেখি পুলিশের গাড়ি। স্পিড ঠিক রেখে গাড়ি চালাতে না চালাতেই দেখি পেছন থেকে বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। বুঝলাম না ঘটনা কী। ৫৫ মাইল স্পিড লিমিটের রাস্তায় আমি চালাচ্ছিলাম ৪৫ মাইল বেগে। সেটাও অপরাধ বটে, কারন পেছন থেকে অন্য গাড়ির জন্য সেটি দুর্ঘটনার কারন হতে পারে। কিন্তু আমাকে ৫৫ পর্যন্ত তুলতে সময়তো দিবে। মাত্রই সবুজবাতি জ্বলেছে। এতদ্রুত পঞ্চান্ন মাইল তুলতে হলেতো আমার ফেরারি চালাতে হবে। এরমাঝেই বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে!
পেছনে লাল নীল বাতি জ্বলে উঠতেই বৌর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
"হায় হায়! কী আকাম করছো? পুলিশ কেন লাইট জ্বালালো? টিকেটের টাকা যে অনেক! শুধু শুধু টাকা নষ্ট!"
জ্বরের ঘোরের রোগীর মতন সে প্রলাপ বকতে লাগলো। এখনও জানিই না কেন পুলিশ আটকেছে।
পেছন থেকে পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন আছো?"
মহিলা অফিসার। যুবতী। বয়স তিরিশ পঁয়ত্রিশ হবে। ইউনিফর্মে যেকোন ফিট বডির নারী পুরুষকেই সুন্দর দেখায়। এই মহিলা এমনিতেও সুন্দরী।
বললাম, "এতক্ষনতো ভালই ছিলাম, এখন জানিনা কেমন থাকবো।"
মহিলা হেসে বললেন, "যে কারনে তোমাকে থামিয়েছি, তুমি কী জানো যে তোমার সামনের লাইসেন্স প্লেট মিসিং?"
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিবে। স্পিডিং বা অন্যান্য কারনে টিকেট দিলে কয়েকশো ডলার নষ্ট হতো শুধু শুধু।
আমি বললাম, "হ্যা, একটা ছোট একসিডেন্ট হয়েছিল (হাইওয়েতে পড়ে থাকা ট্রাকের টায়ারের সাথে হাইস্পিডে বাড়ি খেয়েছিল) বলে রাস্তায় পড়ে হারিয়ে গেছে। আচ্ছা, বলতো, ওটা কোথায় পাওয়া যাবে?"
মহিলা ঠিকানা বলে দিলেন। আমার ড্রাইভার লাইসেন্স আর ইন্সুরেন্স কার্ড চাইলেন।
মানিব্যাগ হাতড়ে দেখি যেখানে ড্রাইভার লাইসেন্স থাকে, সেখানে সেটা নেই। আমি ঘাবড়াবার আগে বৌ গেল ঘাবড়ে, বিড়বিড় করে বললো, "সর্বনাশ! করেছো কী! কোথায় হারাইসো?"
ওর চেহারা দেখে তখন যে কেউ অনুমান করবে আমার আসলে কোন লাইসেন্স নাই। অবৈধভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। এখন চুরি ধরা পড়েছে।
যাই হোক, ওটা পেলাম। ক্রেডিট কার্ডের চিপায় লুকিয়ে ছিল।
গাড়ির ইন্সুরেন্স দিতে গিয়ে মহিলার হাতে ডেন্টাল ইন্সুরেন্স ধরিয়ে দিলাম। এইটা আমার নিজের দোষেই। তারপরে নিজেই হাসতে হাসতে সঠিক ইন্সুরেন্স দিলাম।
মহিলা বললেন, "আমি একটা স্ক্যান করে তোমাকে ফেরত দিচ্ছি। সাথে একটা রিটেন ওয়ার্নিং দিব, ঠিক আছে?"
এমনভাবে অনুমতি চাইলো যেন আমি যদি বলি, "না ঠিক নাই। ত্যক্ত করার জন্য বিরক্ত হচ্ছি। ফাজলামি বন্ধ করে যেতে দে, অনেক কাজ আছে।" আর অমনি সে আমার কথা মেনে নিবে।
লক্ষী সোনাবাবুর মতন বললাম, "ঠিক আছে।"
মহিলা নিজের গাড়িতে যেতে না যেতেই দেখি তাঁর পেছনে আরেক গাড়ি পুলিশ এসে দাঁড়িয়েছে। দুইটা ষন্ডামতন অফিসার বেরিয়ে এসে আমার গাড়ির পেছনে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে (মহিলা সহ) গল্প জুড়ে দিল। মহিলা কাজ করতে না করতে আরেক গাড়ি এসে হাজির। সেখান থেকেও নেমে এলো বিশালদেহী পুলিশ অফিসার। নিজেরা নিজেরা কী নিয়ে যেন ফুসুর ফুসুর করছে।
বৌ অতি নার্ভাস স্বরে বললো "এত অফিসার কেন? কোন ঝামেলা নাতো"
আমার পেছনে তিন গাড়ি পুলিশ বাতি জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতদিন অন্যের ঘটনায় মনে করতাম নিশ্চিত সন্ত্রাসী। এখন আমার পাশ দিয়ে যত গাড়ি যাচ্ছে, সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে আমাদের দেখছে। "ব্রাউন চামড়ার ইল্লিগ্যাল ইমিগ্র্যান্ট ধরা খেয়েছে নিশ্চই" - ভেবে কেউ কেউ পুলকিতও হচ্ছে হয়তো।
যাই হোক, মহিলা সবকিছু ফেরত দিতে দিতে বললেন, "এই যে ডকুমেন্ট এবং ওয়ার্নিং। কেউ যদি আবার থামায়, তাহলে এইটা দেখিয়ে বলবে যে তুমি অলরেডি ওয়ার্ন্ড হয়েছো।"
জিজ্ঞেস করলাম, "পেছনে এত গাড়ি কেন?"
মহিলা হেসে বললেন, "ও কিছু না, আমরা সবাই সবাইকে ব্যাকাপ দেই।"
তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার বৌ যখন ক্লাসমেট ছিল, তখন আমিও তাঁকে "ব্যাকাপ" দিতে তাঁর সাথে গ্রূপ স্টাডি করতাম। সমস্ত জীবন ফাঁকিবাজি করা এই আমি ইউনিভার্সিটির পড়ালেখায় এতটাই মনোযোগী হয়ে গেলাম যে তাঁর বাসায় গিয়ে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা "গ্রূপ স্টাডি"ও করেছি। গ্রূপ স্টাডির ফলে পড়াশোনার উন্নতির পাশাপাশি আমাদেরও সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। এখন এক উন্নতির বয়স চার হয়ে গেছে, গতকাল থেকে পৃ-কে ক্লাস শুরু করেছে। আরেক উন্নতি ইন শা আল্লাহ, কামিং সুন।
সে যাক, এর আগেও বহুবার আমাকে পুলিশ আটকেছে। টিকেট দিয়েছে, ওয়ার্নিং দিয়েছে। কোথাও ব্যাকাপ দিয়ে কেউ হাজির হয়নি। সর্বক্ষেত্রে অফিসাররা ছিলেন পুরুষ। এইবার নারী অফিসার (তাও আবার সুন্দরী) গাড়ি থামাতেই ব্যাকাপে হাজির হয়ে গেলেন তিনজন নিষ্ঠাবান জাঁদরেল অফিসার। আরও কিছুক্ষন যদি আমরা আটকে থাকতাম, তাহলে হয়তো সেখানেই পুরো মিকিনি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, মিকিনি কোর্ট, বিচারক সবাই উপস্থিত হতেন।
মোরাল অফ দ্য স্টোরি, "আপনার যদি কোন মেয়ে থাকে, এবং তাঁর ক্লাসের কোন ছোকরা তাঁর সাথে গ্রূপ স্টাডি করতে চায়, তাহলে অবশ্যই বুঝে নিবেন ছেলেটার নিয়্যত ভাল না।"
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×