ভোটের আগে কেউ চা বানায়, কেউ বাসের কন্ডাক্টরি করে, কেউ পারলে পাবলিকের জুতা পলিশ করে দেয়। ক্ষমতায় যাবার পরে একেকজন নেতা রাস্তা দিয়ে যাবার সময়ে চ্যালা চামচা দিয়ে এমনভাবে ঘেরাও হয়ে থাকে, যেন আকাশের সিংহাসন থেকে নেমে এসেছে স্বর্গের দেবতা। যখনই মুখ খুলে, এমনভাবে কথা বলে যেন জনগনের জন্য দরদে অন্তর উথলে পড়ছে।
বাস্তবে যখন দুর্যোগ নেমে এলো, তখন দেখা গেল ক্রিকেটার রুবেল রাস্তায় নেমে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করলেন। তামিম মুশফিক নিজেদের বেতনের অর্ধেক দিয়ে দিলেন দিন আনি দিন খাই মানুষদের জন্য। আকিজ গ্রূপের এমডি নিজের খরচে চাইলেন চীনের মতন অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরী করে দিতে। যেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে। হিরো আলম পর্যন্ত পাঁচশো মানুষকে খাবার দিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ জনতাতো আছেই।
ইন্ডিয়ায় সালমান খান ফিল্মসিটির পঁচিশ হাজার খেটে খাওয়া মানুষের খাওয়া খাদ্যের দায়িত্ব নিজে তুলে নিয়েছে। যেহেতু শুটিং বন্ধ, তাঁদের আয় উপার্জন নেই। পরিবারকে খাওয়াবে কিভাবে? সংখ্যাটা কল্পনা করেন শুধু একবার। পঁচিশ হাজার! এর আগেও বহুবার সে মানুষের বিপদে এগিয়ে এসেছে। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনার পর থেকে ওর মাধ্যমেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সালমানের কেবলমাত্র এই এক গুনের জন্য দাবাং থ্রি, রেস থ্রি টাইপ বুলশিট সিনেমা বানানোর অপরাধ ক্ষমা করা যায়।
আমাদের জাতীয় ভিলেন পাকিস্তানী ক্রিকেট আম্পায়ার আলিম দার নিজের রেস্টুরেন্টের দরজা স্বাস্থকর্মীদের জন্য ফ্রী করে দিয়েছেন। কেউ স্বাস্থকর্মী হলে, তাঁর রেস্তোরায় খেতে পয়সা দিতে হবেনা।
নিউইয়র্কে এক বাঙালি মেয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের এক নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে পিপিই সংগ্রহ করে স্থানীয় হাসপাতালে হাসপাতালে সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে নিউইয়র্ক বাঁচলে আমেরিকা বাঁচবে। নাহলে আমরা সবাই একসাথে ডুববো।
চারপাশ থেকে এত সুন্দর সুন্দর খবর আসছে, কেবলমাত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাউকে দেখছি না কিছু একটা করে দেখাতে। কেউ বেতনের অংশ দিয়ে দিচ্ছেন না, কারোর গার্মেন্টস থেকে মাস্ক, পিপিই বিনা খরচে সরবরাহ হয় না, কাউকে দেখছি না নিজ এলাকার দুস্থ মানুষদের দায়িত্ব নিজ খরচে তুলে নিতে বা ইত্যাদি। উল্টো, আকিজ গ্রূপের হসপিটাল প্রজেক্ট বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলর (মনে যা গালি আসে কল্পনা করে দিয়ে দিন)। স্বাস্থমন্ত্রী কোন লক্ষণ ছাড়াই করোনা টেস্ট করিয়ে প্রমান করলেন তিনি করোনাক্রান্ত নন। যেখানে আমরা সবাই জানি, দেশে কীটের স্বল্পতা প্রচুর। সেখানে কেন শুধু শুধু একটি কীটের অপচয়?
এখন সেই সব চ্যালা চামচারা যদি বুঝে যাদের জন্য জিভ বের করে লকলক করতে করতে "আমার ভাই তোমার ভাই" বলে পাবলিক নুইসেন্স তৈরী করে, সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে বেড়ায়, নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয়, প্রয়োজনের সময়ে তারা যে আসলে সাধারণ পাবলিকের জন্য থোড়াই পরোয়া করে, এইটাইতো বোঝার উপযুক্ত সময়। সব মতলববাজ, ধান্দাবাজ, বাটপার। করোনা ভাইরাসকে আমরা ধন্যবাদ দিতেই পারি। এর কারণেই মানুষের আসল রূপ বেরিয়ে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:২১