somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জায়নিস্ট ও সাধারণ ইহুদিদের পার্থক্য

১৯ শে মে, ২০২১ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যানভাসে লেখালেখির জন্য কখনও কেউ আমাকে নাস্তিক ট্যাগ দেয়, তো কখনও কেউ আমাকে বলে জঙ্গিবাদী মুসলমান! সেদিন নতুন অভিযোগ পড়লাম, এক সদস্য দাবি তুলেছেন, ক্যানভাস গ্রূপটি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের (ইজরায়েল-আমেরিকান) ফান্ডিংয়ে চলে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
এই অভিযোগ শুনেই আমাদের এক মডারেটর উৎফুল্ল স্বরে বলেন, তাহলেতো ভালোই! এইবার মডুগিরি করার জন্য কিছু বেতনতো পাব!
আমি বললাম, অবশ্যই! তবে তার আগে আমি নিজেতো টাকা পেয়ে নেই!

ছাগলের ছাগ্লামি নিয়ে রসিকতা বাদ থাকুক, আপাতত একটি বিষয় ক্লিয়ার করি। আমার পাঠকেরা জানেন, আমার কাছে যেটা সত্যি আর ন্যায় বলে মনে হয়, আমি সেটার পক্ষে থাকার চেষ্টা করি। সেটা যার বিরুদ্ধেই যাক না কেন। কারন, আমার আল্লাহ আমাকে সেটাই নির্দেশ দিয়েছেন। ন্যায়ের পক্ষে থাকলে যদি পুরো দুনিয়া আপনার বিরুদ্ধে যায়, তবু আল্লাহ আপনার পাশে থাকবেন। আর অন্যায়ের পক্ষ নিলে পুরো দুনিয়া আপনার পক্ষে থাকলেও আল্লাহ আপনার বিপক্ষে থাকবেন। এগুলি আমার কথা না, কুরআনে আল্লাহর ঘোষণা। তাই এই দুইয়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তটা বেছে নিতে তাই আমাকে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করতে হয় না।
নতুন পাঠকদের জানিয়ে রাখলাম। পুরানোদেরও মনে করিয়ে দিলাম।

এখন আসা যাক ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে।
সত্তুর বছর ধরে ফিলিস্তিনি জনগণ প্রচন্ড অন্যায় ও দুর্ভোগ সহ্য করে আসছে। নিজ দেশ, নিজ ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। যারা এখনও মাটি কামড়ে পড়ে আছেন, তাঁদের মাথার উপর প্রতিদিন প্রতি সেকেন্ডে তলোয়ার ঝুলছে। ছাত্রছাত্রী স্কুলে পড়ালেখা করতে যাচ্ছে, হঠাৎ ইজরায়েলি সেনাদের মন চাইলো ওদের দিকে গুলি ছুড়তে, ওরা সেটা করতে পারে, কেউ কিছু বলতে পারে না। মাঝরাতে সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। ইজরায়েলি সেনাদের শখ হলো কারোর বাড়িতে ঢুকে তল্লাশির নামে হয়রানি করতে, সেটা তারা করতে পারবে। কেউ কিছুই বলতে পারেনা। যখন তখন রকেট হামলা, যখন তখন গোলাগুলি ও বোমা হামলাতো আছেই। আমরা দেখি ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে আসে শিশুদের মৃতদেহ, আমরা দেখি বোমার আঘাতে ভাগ হওয়া মাথার শিশুর মৃতদেহ, আমরা দেখি অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের হাহাকার! আমাদের মন বুক কলিজা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আমরাও আর্তনাদ করে উঠি। এবং তখনই আমরা আল্লাহর একটি পরীক্ষায় ফেল করি। সেটি হচ্ছে, ইমোশনালি ভেঙ্গে পড়ার পরেও, আমরা নিজেরা কি কোন অন্যায় করছি? এখানে অন্যায় করা ও অন্যায়কে সমর্থন করা একই ব্যাপার। এবং সেই অন্যায় হচ্ছে, ইজরায়েলের অপকর্মের জন্য আমরা সমস্ত ইহুদি জাতিকে তুলে গালাগালি করা। আমরা ভুলে যাই ওরা মুসা নবীর উম্মত, আমরা ভুলে যাই ওরা আহলে কিতাবী যাদের কিছু অধিকার আল্লাহ সংরক্ষিত রেখেছেন কুরআনে। আমরা তখন ঢালাওভাবে সমস্ত ধর্ম, সমস্ত জাতি তুলে গালাগালি করি। নিঃসন্দেহে, পুরোটাই অজ্ঞতা। কিন্তু তারপরেও, আমাদেরকে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন পড়ার জন্য, জানার জন্য। ইন্টারনেটের যুগে আমরা যদি অন্যায় করে যাই, তাহলে সেটাই বা আল্লাহ মাফ করবেন কোন অজুহাতে?

তাহলে শুরুতেই স্পষ্ট করি, "জায়নিস্ট" কারা?
এটি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী মুভমেন্ট। এর সাথে ধর্মের সম্পর্ক কম। জায়নিস্টদের মতবাদ অনুযায়ী, ওরা মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্বাধীন "ইহুদি রাষ্ট্র" প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শুনে চমকে উঠতে পারেন, মূল ইহুদি ধর্মে যা সম্পূর্ণ নিষেধ। ওদের ধর্মানুযায়ী, আল্লাহ ওদের বলেছেন ওদের শেষ নবীর আগমন পর্যন্ত, ওদের নিজেদের কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিয়ম নেই।
ঘটনা ব্যাখ্যা করতে হলে একটি উদাহরণ দিলেই বুঝবেন।
১৯৭৯ সালে জুহাইমান আল ওতাইবি নামের এক জঙ্গি নিজের চ্যালা চামচা নিয়ে অস্ত্রের মুখে কাবা ঘর দখল করে নেয়। ওদের বিশ্বাস ছিল, ইমাম মাহ্দী চলে এসেছেন, ওদের দলেই আছেন, এবং সৌদি বাদশাহসহ সমস্ত মুসলিম বিশ্ব যেন এই মাহদীর কাছে আনুগত্য করে।
কি হাস্যকর! ইসলামের নেতৃত্ব দাবিকারী দলটি কাবা ঘরে সাধারণ মানুষের লাশ ফেলেছে!
স্বাভাবিকভাবেই, মিলিটারির মাধ্যমে এই আপদকে পৃথিবী থেকে বিদায় করা হয়েছিল। কারন, মাহ্দী যখন আসবার, তিনি আপনাতেই আসবেন। তিনি কোন জঙ্গির লেখা স্ক্রিপ্ট ফলো করবেন না।

তা ধার্মিক ইহুদিরাও জায়নিস্টদের এইকারনেই দেখতে পারে না। ওদের বিশ্বাস, জায়নিস্টরাও জঙ্গি, ওরা ইহুদি ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সাধারণ মানুষ মারছে। আল্টিমেটলি, বদনাম হচ্ছে সাধারণ ইহুদিদের। কারন, ইহুদি ধর্মও সাধারণ মানুষ হত্যা করা সমর্থন করেনা।

বাঙালি এই তথ্য শুনে চোখ কপালে তুলে ফেলবেন যে ইজরায়েল বিরোধী সবচেয়ে বড় ইহুদি দলটি আমেরিকায় অবস্থিত। আমেরিকান ইহুদিরা ইজরায়েলের জন্মের বহু আগে থেকেই এই ধারণাকে নাকোচ করে আসছিলেন। "জায়নিজম" মূলত ইউরোপীয় ইহুদিদের মস্তিষ্ক প্রসূত, তাও যারা রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদ মতাদর্শে বিশ্বাসী, ধার্মিক ইহুদি নয়।
১৮৯৭ সালে থিওডর হার্ৎজেল নামের এক লোক "জায়নিস্ট" সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্যাটাই ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে।
সেই সময়ে ইহুদিদের ইউরোপে বসবাস করা অনেক কঠিন ছিল। বর্তমানে পশ্চিমা দেশে যেমন হিজাবি নারী বা দাড়িওয়ালা প্র্যাকটিসিং মুসলিম পুরুষদের দিকে লোকজন বর্ণবাদী দৃষ্টিতে তাকায়, ইউরোপে তখন ইহুদিদের প্রতিও একই আচরণ করা হতো। হার্ৎজেল বিশ্বাস করতো, এই সমস্যার সমাধান তখনই সম্ভব হবে যখন ইহুদিদের নিজস্ব একটি ভূখন্ড থাকবে।
আমেরিকান ইহুদিরা এর বিরোধিতা করে। অনেক ইউরোপিয়ানরাও করে। কারন, ফিলিস্তিনে তখন প্রচুর মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি চৌদ্দশো বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন। বুদ্ধিমান, শিক্ষিত, দূরদর্শী ও বিবেকবান মানুষেরা সহজেই বুঝতে পারেন, সেখানে হঠাৎ করেই একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে শান্তির বদলে সেখানে এমন এক যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটবে, যা থামানো অসম্ভব হয়ে উঠবে।
কিন্তু ইউরোপীয় জায়নিস্ট ইহুদিরা এইসব পরোয়া করে না। ওদের স্বাধীন ভূখন্ড চাই, এবং সেটা ফিলিস্তিনেই।
ওদের পক্ষে এইবার দাঁড়ালো পশ্চিমা (আমেরিকান) "জায়নিস্ট খ্রিষ্টান" সম্প্রদায়। জায়নিস্ট খ্রিষ্টানরা আমাদের দেশের খ্রিষ্টান, বা ইউরোপিয়ান খ্রিষ্টান, বা ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের থেকে ভিন্ন। আবারও গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। ওদের ব্যাপারেও ভাল করে পড়ে নিন।
সংক্ষেপে বললে অতি ডানপন্থী মতাদর্শের, ভয়ংকর বর্ণবাদী এই জায়নিস্ট খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে যীশু (আঃ) ততদিন পৃথিবীতে আসবেন না, যতদিন না পৃথিবীর সব ইহুদি একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করতে শুরু করে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে হবেনা, একটি নির্দিষ্ট দেশ চাই।
তারপর তিনি (আঃ) আসবেন, ইহুদিদের মধ্য থেকে অতি অল্পই খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করবে, বাকি সবাইকে হত্যা করা হবে।
কি হাস্যকর! জায়ানিস্ট ইহুদিদের সমর্থন ও সাহায্য করছে জায়নিস্ট খ্রিষ্টানরা যাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভালবাসা নয়, বরং একদিন ওদের হত্যা করা।
জায়নিস্টরা এই সাহায্য নিচ্ছে কেন? কারন, ওরাতো যীশুর পুনরাগমনে বিশ্বাস করেনা। ওদের ভাষায়, "ওরা যদি ভুল বিশ্বাসের কারণেও টাকা ও ক্ষমতা দিয়ে সাহায্য করে, তাহলে আমরা কি বেকুব নাকি যে সেই সাহায্য ফিরিয়ে দিব?"

যাই হোক, অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পরে এবং ব্রিটিশদের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ধীরে ধীরে ইহুদিরা বসতি গড়তে শুরু করে। সমস্যা ছিল না।
এরপরেই দৃশ্যপটে হাজির হয় হিটলার ও তার নৃশংস নাৎজি বাহিনী। জানোয়ারটা কোন মায়া দয়া ছাড়াই এমনভাবে ইহুদি মারতে শুরু করে যে কোন মানুষ কোন কীটপতঙ্গের প্রতিও এতটা নিষ্ঠুর আচরণ করে না। এইবার ইউরোপ থেকে দলে দলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে শুরু করে। হিটলারের কারনেই ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো এইবার জায়নিস্ট রাষ্ট্রের পক্ষে সম্মতি দিতে শুরু করে। যদিও UN রেজুলেশন সেই অঞ্চলে স্বাধীন আরব ও ইহুদি রাজ্যের সুপারিশ করে, ইজরায়েল এইসব পরোয়া না করে নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা দিয়ে বসে। সালটা ১৯৪৮। এবং আমেরিকার স্বীকৃতি পেতে ওদের সময়ও লাগেনা। সেইদিনই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বসেন।
তো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল। এখন কি করা যায়? শুরু হলো দখলবাজি। ১৯৬৭ সালে মাত্র ছয়দিনের যুদ্ধে জিতে ইজরায়েল সেই অঞ্চলে নিজের শক্তি প্রতিষ্ঠা করে, লাখে লাখে মুসলিম ও খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনিদের চৌদ্দপুরুষের ভিটা থেকে উৎখাত করে। কাগজে কলমে ওরা শান্তিপূর্ণভাবে থাকার ঘোষণা দিলেও এরপর থেকেই ওদের অঞ্চলে জায়ানিস্ট ইহুদিদের অত্যাচার বাড়তে থাকে। যা এখনও চলছে, এবং ভবিষ্যতে এর শেষ কোথায়, কেউ জানেনা।

তা এখন পর্যন্ত পড়ে সবার ক্লিয়ার হলোতো "জায়নিস্ট" আর "ইহুদি খ্রিষ্টানদের" মাঝের পার্থক্য? একটি কথা মাথায় রাখবেন, ফিলিস্তিনে সবাই মুসলিম না, এখনও প্রচুর ইহুদি আছেন, যারা কিনা জায়নিস্ট ইজরায়েল বিরোধী। তাঁরা ইচ্ছা করলেই ইজরায়েলে চলে যেতে পারেন, কিন্তু তাঁরা তাঁদের ধর্মের বিরুদ্ধে যান না। আমাদের দেশ (উপমহাদেশের তিন দেশের যেকোন একটা) হলে, সবার আগে ওদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হতো। তারপরে ওদের নারীদের ধর্ষণ। ওদের সম্পদ লুন্ঠন। এসবের কিছুই আরবরা করেনা। গোটা আরবে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরব ইহুদি, ওদের বাড়িতে কেউ হামলা করেনা। আমাদের যেমন কেউ আইসিস/তালেবান বললে, আমরা বলি, "ওদের মতাদর্শ আর কুরআনের মতাদর্শ সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক" এক্ষেত্রেও ঘটনা একই। অসভ্য কেবল আমরাই থেকে গেলাম, এখনও আছি।

এখন একটি ইন্টারেস্টিং তথ্য তুলে ধরি। ইয়াসির ক্বাদীর নিজের মুখে শোনা, তাই বিশ্বাসযোগ্য।
তিনি আল আকসা মসজিদ ভ্রমনে গেলেন। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয়রা তাঁর সাথে দেখা করতে চাইলেন। বললেন, তাঁরা কিছু স্থানীয় ধর্মান্তরিতদের সাথে দেখা করাতে চান, কিছুদিন আগেও যারা ইজরায়েলি জায়নিস্ট ইহুদি ছিলেন।
ইয়াসির ক্বাদীর চোখ কপালে উঠে যায়। বলে কি এই লোক! জায়নিস্ট থেকে সরাসরি মুসলমান! তাও সংখ্যায় তাঁরা হাজার ছাড়ানো? কিভাবে সম্ভব?
তা অতি গোপন সেই বৈঠকে তিনি তাঁদের সাথে দেখা করেন, ও গল্প শোনেন। দুইটা ঘটনা বলি, কারন প্রাসঙ্গিক।
একটি জায়নিস্ট মেয়ে ষোল বছর বয়স থেকেই মুসলিমদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করতে থাকে, বলতে থাকে যে সে মুসলিম হতে চায়, কিভাবে হবে?
যেহেতু সে "মাইনর" তারউপর জায়নিস্ট, তারউপর ওরা থাকে ইজরায়েলে, কাজেই মুসলিমরা ভয়েই ওকে বলে দেয়, "তুমি এখনও শিশু, বড় হও, তারপরে দেখা যাবে। আপাতত বিদায়।"
মেয়েটি বিদায় হয়না। সে ইমেইল করতেই থাকে। নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, রোজা কিভাবে রাখতে হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই, মুসলিমরাও জবাব দিতে থাকেন। মেয়েটি যে নিজের বাড়ির ক্লজেটে নামাজ আদায় করতো, কেউই জানতো না।
যেদিন মেয়েটির বয়স আঠারো হয়, সেই দিনই সে সেই মুসলিমদের ফোনে জানালো, "আমি এখন আইনত প্রাপ্তবয়ষ্ক, আমাকে এখন কেউ ইসলাম গ্রহণে বাঁধা দিতে পারবে না। কোথায় তোমরা, আমাকে নিতে আসো।"
মুসলিমরা গেল ঘাবড়ে। এটি কোন ফাঁদ নয়তো?
তারপরেও আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁরা গেলেন, মেয়েটিকে তুলে আনলেন, সে আর নিজের পরিবারের সাথে থাকতে চায় না।
কাহিনী এখানেই শেষ হয় না।
ইজরায়েলের নিয়ম হচ্ছে, কারোর বয়স আঠারো হলে ওদের মিলিটারি সার্ভিস দিতেই হবে। এটিই আইন।
মেয়েটির কাছেও রাষ্ট্রের চিঠি এসেছে। সে করলো কি, হিজাব মাথায় সেই ফর্ম হাতে মিলিটারি ইনস্টিটিউশনে গিয়ে ওদের জানালো, "আমি একজন মুসলিম, আমাকে কি তোমরা এরপরেও মিলিটারিতে নিতে চাও?"
তিন চার মাসের টানা হ্যাঁচড়া শেষে সরকার ঘোষণা করলো, ওকে মিলিটারি সার্ভিস দিতে হবেনা।
মূল বিষয় হচ্ছে মেয়েটির সাহস লক্ষ্য করেছেন? আমাদের কয়জনের পক্ষে সম্ভব এইভাবে চোখে চোখ রেখে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবার?

আরেকটা ঘটনা বলি, তারপরে লেখা শেষ করে দিব।
এক ভদ্রমহিলা ইহুদি রেবাইর (ঈমাম) স্ত্রী। তাঁর তিন চার সন্তান আছে। নিজের গবেষণায় তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন। তা তিনি করেনও। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর স্বামী তাঁকে তালাক দেন। আদালতে প্রমান করে ফেলেন মহিলার মাথা নষ্ট এবং আদালতের রায় অনুযায়ী ভদ্রমহিলা বাকি জীবনে তাঁর সন্তানদের থেকে দূরে থাকবেন।
একজন মায়ের থেকে তাঁর সন্তানদের ছিনিয়ে নেয়ার চেয়ে কঠিন শাস্তি কিছুই হতে পারেনা। মহিলা এই শাস্তির মধ্য দিয়ে গেলেন। তারপরে এই মহিলা কি বলেন জানেন? "ওরা যদি আমাকে আজীবন জেলে বন্দি করে রাখে অথবা ঠেলে দেয় কোন অন্ধকার গুহায়, তারপরেও আমি বলে যাব আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর রাসূল!"

চিন্তা করতে পারেন এদের ঈমান? কোত্থেকে আসে এটি? কিভাবে সম্ভব হয়? এদের সংখ্যাই নাকি সেদেশে হাজারে হাজার। পরিচয় দিতে ভয় পান, গোপনে সিজদাহ দেন, থাকেন ইজরায়েলে। আপনি যে চান ভূমিকম্পে, রকেট হামলায় ওরা ধ্বংস হয়ে যাক, আপনি কি এখনও সেটাই চাইবেন? আপনি যে অভিযোগ করেন, আল্লাহ কেন ইজরায়েলের উপর আসমানী গজব নাজেল করেন না, কিভাবে ভুলে যান আল্লাহর সেই বাণী, "আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।"

ইতিহাসে এই প্রথম মুসলিমদের উপর জুলুম ঘটছে না। মুহাম্মদ (সঃ) নব্যুয়াতি জীবনের প্রথম তেরোটা বছর অমানুষিক জুলুম সহ্য করেছেন। কুরাইশদের চেয়ে নিকৃষ্ট সম্প্রদায় আর কারা ছিল, যারা নবীকে হত্যা করতে চাইতো?
বা মঙ্গলরা যখন বাগদাদে রক্তের নদী বইয়েছিল, সেই ঘটনা ভুলে গেলেন? লাখে লাখে মুসলিমকে ধরে ধরে জবাই করেছে নৃশংস চেঙ্গিস খান ও তার দলবল। নারীদের ধরে ধরে করেছে বলাৎকার। তখনকার যুগে মানুষ ওদের ইয়াজুজ মাজুজ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। ধরেই নিয়েছিল দ্রুতই পৃথিবী শেষ হতে চলেছে।
কুরাইশরাও ইসলাম গ্রহণ করে, মঙ্গলরাও ইসলাম গ্রহণ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে মঙ্গোলরাই বোধয় একমাত্র জাতি যারা পরাজিত জাতির ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার গ্রহণ করে। মিরাকেল ঘটাতে চাইলে আল্লাহ ঘটাতেই পারেন। তিনি রহস্যবিদ, তাঁর খেলা, তাঁর কৌশল মানব মস্তিষ্ক কখনই নিতে পারবে না। কে জানে, ইজরায়েলের মধ্য থেকেই একদিন হয়তো লোকজন উঠে এসে বলবেন, "অনেক হয়েছে! আর না!" উপরে যে কনভার্টদের কথা বললাম, যে ঈমানের পরিচয় তাঁরা দিয়েছেন, ওদের দ্বারাই সেটি সম্ভব। শুধু শুধু কি তাঁদের ইসলামের পথে আনছেন আল্লাহ?কোনই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নেই?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২১ রাত ১২:৩৭
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×