somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমন ঘটনা ঘটলে আপনি নিজে যে কতটা সাম্প্রদায়িক ইতর, সেটা প্রকাশ্য হয়ে যাবে।

০৯ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ন্যায়-নীতি-প্রিন্সিপাল ইত্যাদি এমন একটা বিষয়, যা সব দেশে সব যুগে সব সমাজে সব শ্রেণীর মানুষের জন্য এক হওয়া প্রয়োজন। আমার প্রতি যা জুলুম, একই কাজ আমি যদি অন্যের প্রতি করি, তবে সেটাও জুলুমই হবে, তখন সেটা হালাল হয়ে যাবে না। এই সাধারণ বোধ শক্তির জন্য খুব বেশি শিক্ষিত হবার প্রয়োজন নেই। মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি, যা ভাল ও মন্দের পার্থক্য করতে বুঝায়, সেটা, আর ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ থাকলেই চলে। অথচ সমস্যা হচ্ছে, তথাকথিত শিক্ষিতদের মাঝেই এর চরম বৈপরীত্য দেখতে পাই। এটাকে "হিপোক্রেসি" বলবো অবশ্যই, সমস্যা হচ্ছে, উনারা নিজেরা বুঝেনতো যে তারা কতটা হিপোক্রেট?

অনেকে বলেন ও মানেন যে "তুমি নিজে যে আচরণ পেলে খুশি হবে, সেই আচরণই অন্যের সাথে কর। তাহলেই তুমি সঠিক থাকবে"
শুনতে ভাল শোনালেও এই কথাটিতেও একটা বিরাট ফাঁক আছে। প্রতিটা মানুষই আলাদা। আমি অনেক কিছু হজম করতে পারি, আমার আপন ভাইবোন যা হয়তো পারেনা। আবার ওদের হজমি শক্তি আমার চেয়ে কম বেশি হয়ে থাকে। আমার বাবা মায়েরও সহ্য ক্ষমতা আমাদের চেয়ে আলাদা। কাজেই, আমি নিজে যে আচরণ সহ্য করতে পারবো, যার প্রতি আমি আচরণটা করতে যাচ্ছি, সে সেটা সহ্য নাও করতে পারে। তাই বিবেক বুদ্ধি ইস্তেমাল করা ছাড়াও এ ব্যাপারে ইউনিভার্সাল গাইডলাইন ফলো করাই উত্তম।
যেমন ধরেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখে আসি কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলো না। আপনি নিজে হয়তো অন্ধ, অথবা চোখে কম দেখেন; আপনি নিজে হয়তো সহ্য করতে পারেন কেউ আপনার অন্ধত্ব নিয়ে উপহাস, তিরস্কার, পরিহাস ইত্যাদি করুক। কিন্তু অন্য কেউ সেটা নাও করতে পারে। তাই ইউনিভার্সাল নিয়ম ফলো করুন, সে সহ্য করবে কি করবে না সেটা চিন্তা না করে আপনি নিজের আচরণ নিয়ে চিন্তা করুন। কেউ চশমা পরলেই আপনি তাঁকে "কানা," কেউ কৃষ্ণাঙ্গ হলেই আপনি তাঁকে "কাইল্যা," কেউ "স্বাস্থ্যবান" কিংবা "রোগা" হলেই তাঁকে নিয়ে উপহাস করতে পারেন না। এইটা ন্যূনতম শিষ্টাচার। "মানুষ" হয়ে থাকলে এই মনুষ্যত্বগুন আপনাকে আয়ত্ত্ব করতেই হবে।

অতি সম্প্রতি ইংলিশ ক্রিকেটার অলি রবিনসনের শাস্তির উদাহরণই নেয়া যাক। অভিষেকেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বোলিংয়ে সাত উইকেট এবং ব্যাটিংয়ে ৪২ রান করা ক্রিকেটারকে প্রতিভাবান ও ভাল বলতেই পারেন, তাই না? তা এই ক্রিকেটারকে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড বর্ণবাদের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে। কেন? কারন সে বহুবছর আগে মুসলিমদের এবং চীনাদের তামাশা করে টুইট করেছিল। ইংলিশ টেস্ট দলে অভিষিক্ত হওয়ায় সেইসব টুইট সবার সামনে চলে এসেছে, তাই ইংলিশ এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ওকে শাস্তি দিয়েছে। ইংলিশ বোর্ড এই ব্যাপারে খুবই কড়া, এবং কড়াই হওয়া উচিৎ। পৃথিবীর যেকোন সভ্যদেশের প্রথম নীতি হচ্ছে বর্ণবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া। জিরো টলারেন্স নীতি।
কিন্তু কিছু আবাল বাঙ্গাল এখনও বুঝতেই পারছে না বর্ণবাদ কতটা ভয়াবহ অপরাধ। উনাদের দরদ উথলে পড়ছে এই ক্রিকেটারের জন্য। কেউ কেউ বলছেন, "এটাতো এমন কোন অপরাধ না যে বহিষ্কার করতে হবে।" বর্ণবাদীদের চোখে বর্ণবাদকে কখনই অপরাধ বলে বিবেচিত হয়না, সেটাই স্বাভাবিক। যেই মুহূর্তে কোন অপরাধকে আপনার অপরাধ বলে গণ্য হবেনা, সেই মুহূর্তে ধরে নিবেন, আপনি নিজেও সুযোগ পেলে সেই অপরাধটাই করবেন। এই কথাটা যেকোন ক্রিমিনোলজির প্রফেসরের সাথে ভ্যারিফাই করে দেখতে পারেন।

এই যে ক্যানাডায় মুসলিম হবার "অপরাধে" একটি আস্ত পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হলো, এ নিয়েও অনেকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। "মুসলিম" মরেছে তো কি হয়েছে? মনে মনে অনেকে খুশিও হচ্ছেন, মুসলিম মরেছে ভালই হয়েছে। তার উপর ওদের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে পাকিস্তানী! আহা! কত আনন্দ! একটা ছানা বেঁচে গেছে, ওটা মরলো না কেন? এই হচ্ছে মেন্টালিটি। সিরিয়াসলি বলছি। এমন "মানুষ" আছে, আমার আপনার ফ্রেন্ডলিস্টেই। গোটা দেশের কথা বাদই দিলাম।
অথচ এখন ঘটনা উল্টো হলে, যদি ট্রাক ড্রাইভার হতো মুসলিম এবং নিহত পরিবারটি হতো ভিন্ন ধর্মের, তাহলেই ফেসবুক জুড়ে রচনা লেখা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। পড়তে পড়তে হাপায় উঠতাম। আমাদের দেশে এত এত ভাল মানুষ আছে ভেবে চোখ থেকে দুই ফোটা পানিও বেরিয়ে আসতো।
আবার যারা এখন প্রতিবাদ করছেন, আফসোস করছেন, কারন যারা নিহত হয়েছেন তাঁরা ছিলেন মুসলিম, ঘটনা উল্টো হলে তাঁদের অনেককে দেখতাম নীরব কবি হয়ে যেতে। তখন কাফের নাসারা ফিলিস্তিন ইত্যাদি নানান তথ্য প্রমান এনে অপরাধকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা চলতো।
"বর্ণবাদের শিকার হয়ে মানুষ মরেছে" এই সহজ সত্যটা উপলব্ধি করার বোধ হারিয়েছি আমরা। আমরা ভুলেই গেছি আমরা আদম সন্তানরা বিরাট এক পরিবারের সদস্য। আজকে যারা "মুসলিম পরিবার মরেছে, আমার বাপের কি?" - ভেবে চুপ আছেন, কালকে আপনার পরিবারকেই হত্যা করা হবে, এবং তখন বুঝবেন কার বাপের কি। বাস্তব উদাহরণ দেই।
ইলেকশনের আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল যে ট্রাম্প একটা ভয়াবহ বর্ণবাদী। কেবল আহাম্মকরাই ভেবেছিল যে সে কেবল একজন মুসলিমবিদ্বেষী। "হোয়াইট সুপ্রিমিস্টরা শ্বেতাঙ্গ বাদে সবাইকেই অমানুষ মনে করে" - এই সহজ সত্য অনেক ছাগলের মাথায় ঢুকে নাই।
কাজেই ট্রাম্প আসার পরে অনেককেই দেখেছি খুব আনন্দ করতে। মুসলিমদের প্যাদানি দিচ্ছে, খুব মজা! হিজাবি মহিলার গায়ে আগুন দিল, মুসলিমকে গুলি করে মারলো, সাতটা মুসলিম দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো - আহা! কি আনন্দ!
তারপরে নিজের জাতের লোকেরাই যখন হেইট ক্রাইমের শিকার হলো, তখন উনাদের টনক নড়লো।
এমন উদাহরণ প্রচুর আছে।
মোট কথা, ন্যায়-নীতির ক্ষেত্রে দয়া করে কনসিস্ট্যান্ট হতে শিখুন। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আপনার দরদ আকাশ স্পর্শ করবে, আপনি লোকজনকে সাম্প্রদায়িক গালি দিবেন, নিজে কত মহান মানুষ সেটা বুঝানোর চেষ্টা করবেন, আবার অপর সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আপনি পাত্তাই দিবেন না, চোখ কান সব বন্ধ করে বসে থাকবেন, এমন ঘটনা ঘটলে আপনি নিজে যে কতটা সাম্প্রদায়িক ইতর, সেটা প্রকাশ্য হয়ে যাবে। মানুষকে মনুষ্যত্ব শেখানোর আগে নিজে মানুষ হবার চেষ্টা করুন।
আজকে যে মুসলিম মরেছে বলে বগল বাজাচ্ছেন, জেনে রাখুন, যে মেরেছে, ওর চোখে আপনিও "অশ্বেতাঙ্গ" "বাদামি" চামড়ার "নিগার।" পৃথিবীর কোন না কোন দেশে, কোন না কোন রাস্তায় আপনাকে হাঁটতে দেখলে সে জিজ্ঞেস করবে না আপনি কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, আল্লাহকে কতখানি মানেন। ওর হাতে বন্দুক থাকতে পারে, ট্রাকও থাকতে পারে। সেই দিনটা যেন না আসে, সেজন্য এই বর্ণবাদকে অঙ্কুরেই নষ্ট করতে হবে। নাহলে অন্যকে কামড়ানোর জন্য পোষা কুকুরটা নিজের মালিককে কামড়ে দিতে সময় নিবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:২৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×