নায়িকা পরিমনির পেশা আর আমার আপনার পেশা এক না। ওর আমার আপনার সবার ব্যাকগ্রাউন্ড ভিন্ন। তাই ওর ফ্রেন্ড সার্কেল, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল, সেই সার্কেলের সাথে আড্ডার স্থান, সময়সূচি, বিষয় ইত্যাদি সবই আলাদা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে আমরা সবাই কমন, এবং তা হচ্ছে, আমরা মানুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমরা সবাই বেসিক কিছু নাগরিক সুবিধার দাবিদার। "নিরাপত্তা" সেটার মধ্যে প্রধানতম। আমার অনুমতি ছাড়া কোন মানুষ যেমন আমার গায়ে হাত দেয়ার অধিকার রাখে না, তেমনই একই আইন কানুন সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সে দেশের প্রধানমন্ত্রীই হন, কিংবা রাস্তার ভিখারি। কাজেই, "নায়িকা" বলে এজিউম করে নেয়া যে সে "হাইক্লাস প্রস্টিটিউট" এবং এই কারনে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া কোন অবস্থাতেই জাস্টিফায়েড না। সে যদি সত্যিকারের প্রস্টিটিউট হয়েও থাকে, তবুও না। স্থান, কাল, পাত্রভেদে এই নিয়মের পরিবর্তন হবেনা। এটাকেই বলে "আইন।"
দেশের এক শ্রেণীর ইতরের (মানুষ বলবো না) ধারণা মেয়ে মিডিয়াতে কাজ করে মানেই তাদের সাথে যে কেউ শুতে পারবে। একটি বাস্তব ঘটনার উল্লেখ করি। ঘটনার সাক্ষী আমার অতি ঘনিষ্ট একজন। তাই অবশ্যই মিথ্যা না। একটা মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনের ফাংশনে এক গায়িকাকে ভাড়া করে এনেছিল। যেহেতু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, কাজেই বিদেশী মদ সার্ভ করা হয়েছিল। তা মদ সার্ভ করার পরপরই কিছু এমপ্লয়ি অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যায়। এবং কেউ কেউ অন্যান্য মহিলা এম্পলয়ীদের বলেন, এখন পরিবেশ খারাপ হয়ে যাবে, তাঁরা চলে গেল ভাল হয়।
ঘটনার সাক্ষী তখন মাত্রই নতুন জয়েন করেছে। তাঁর ধারণাই নেই বাঙালি মাতাল কোন পর্যায়ের অসভ্য হয়। তারউপর এই কর্পোরেশনের রেপুটেশন আছে। কতটাই বা খারাপ হবে পরিবেশ? আর গায়িকার গানতো শুরুই হয়নি, এত বিখ্যাত সেলিব্রেটির গান না শুনেই চলে যাব? সেলফি তুলবো না?
অনুষ্ঠান শুরু হতেই ঐ কোম্পানির সিনিয়র জুনিয়র পুরুষ এমপ্লয়িরা মাতাল হয়ে সেই গায়িকার উপর হামলে পড়েছিল। এতটাই অসভ্যতা করেছিল যে গায়িকা সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে বাড়ি চলে যান। আর মদ্যপ পুরুষগুলির দাবি কি ছিল জানেন? পয়সা দিয়ে এনেছি, তুই এখন আমাদের হুকুমের গোলাম!
বুঝে নিন, দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে, যেখানে উচ্চশিক্ষিত, স্মার্ট, বুদ্ধিমান না হলে চাকরি পাওয়া কঠিন, সেখানেই এই অবস্থা। তাহলে অশিক্ষিত, জাহিলদের থেকে কি আশা করবেন?
"সে মধ্যরাতে কেন জঙ্গলে গেল," "ও কেন বাড়িতে থাকলো না," "ও এইসব আজেবাজে মানুষদের সাথে মিশে কেন" "ও কি জানেনা দেশের পরিস্থিতি কেমন?" ইত্যাদি ইত্যাদি যাবতীয় আর্গুমেন্ট যার যার অবস্থান থেকে ঠিক আছে। সবার প্রতিই সম্মান জানাই। কিন্তু এখন সেটা আলোচনার সময় না। ওটা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এখন যেটা মূল টপিক, এবং সেটি হচ্ছে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা, সেটা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবেন। এতে ধর্ষকের লাভ ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
আপাতত হারামিগুলির বিচার হোক, মুখোশ উন্মোচিত হোক, তারপরে সময় সুযোগ বুঝে পরিমনীসহ যাবতীয় সোনামনিদের বোঝাবেন কেন বাংলাদেশের মতন আইন শৃঙ্খলাহীন একটি দেশে এইভাবে মধ্যরাতে কোন পুরুষ ও নারীর চলা ফেরা করা নিরাপদ না। নিজের নিরাপত্তার অর্ধেক দায়িত্ব নিজেরও। নাহলে এইরকম ঘটনার শিকার হতে হবে। ভাগ্য খারাপ থাকলে ধর্ষণ ও খুন হয়েও যেতে পারতো। এসএই হারামজাদাটা যেমন কারোর তোয়াক্কা না করেই তিন তিনজন মানুষকে গুলি করে মেরেছে। প্রাণগুলোতো আর ফেরত আসবে না।
ঐ আলেম ভদ্রলোকের কেউ কোন খোঁজ দিতে পেরেছে? উনার কোলে উনার মেয়ের ছবি দেখে এক পলকের জন্য আমার ছোট ছেলের ছবি ভেসে উঠেছিল। আহারে! এই বাচ্চাকে কেন পিতার আদর থেকে বঞ্চিত করা হলো?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:১৮