বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ যার সিংহভাগ জনতা মুসলিম। এবং যেহেতু বিশ্ব মুসলিম দেশগুলোর সবচেয়ে শক্তিশালী সংঘের নাম হচ্ছে ওআইসি, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই চাইবে ওআইসির সদস্য হতে।
এখন ধরা যাক ওআইসি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সংঘের একটি। ওরা নিজেরা নিজেরা বাণিজ্য করে ধনী হয়ে গেছে, শক্তিশালী হয়ে গেছে সামরিক দিক দিয়েও, এবং আমেরিকা-রাশিয়া-চায়না সবাই ওদের সমঝে চলে। এবং এই ওআইসির সাথেই ইন্ডিয়ার দা কুমড়া সম্পর্ক। রাজনীতি, বাণিজ্য, ধর্ম, আধিপত্য ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই আরব দেশগুলোর সাথে ইন্ডিয়ার নিয়মিতই ঝগড়া বিবাদ হয়। ইন্ডিয়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, এবং এর কট্টরপন্থী সরকার চায়না বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা অন্য কোন প্রতিবেশী দেশ ওআইসির সদস্য হোক। (সবই বলছি "ধরা যাক।" বোঝার সুবিধার জন্যই এমনটা বলা। কেউ আবার সত্যি মনে করে বসবেন না।)
এখন বাংলাদেশ যেহেতু স্বাধীন দেশ, সেহেতু ইন্ডিয়াকে বলল, "আমি ওআইসির সদস্য হবো নাকি আইসিসির, সেটা আমার ব্যপার। তোমার বাপের কি?"
এর পেছনে ওআইসিও যথেষ্ট প্রশংসা করলো। ওআইসিও চাইছে পৃথিবীর যত মুসলিম দেশ আছে ওরা এই সংঘে যোগ দিক। ওরা চাইছে ভারতীয় প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ ওআইসি, তথা ইসলামিক প্রভাবে প্রভাবিত হোক। এবং ভারতকেও দুর্বল করতে এই টেকনিক অনেক সহায়ক।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ততদিনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন আর কোরবানির গরু, পিয়াজ বা নদীর পানি ইত্যাদি কোন কিছুর জন্যই ভারতের উপর নির্ভর করতে হয়না।
এদিকে ইন্ডিয়াও চাইছে না বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। কারন এককালে বহু জাতিতে বিভক্ত একটি দেশ ভারতের একটি উপজাতি বাঙালিদের মধ্য থেকেই একটি ভাগ বিভক্ত হয়ে একটি স্বাধীন দেশ গঠন করে ফেলেছে। যদি ওরা সফল হয়ে যায়, তবে শিখরা দাবি করবে ওদেরও আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের, দক্ষিণী দ্রাবিড়রা দাবি করবে ওদের আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের, এইভাবে গোটা ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, যেমনটা ইউরোপে ঘটেছে। কিন্তু যদি বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়, গরিব, দুর্বল থাকে, তাহলে সে দেখাতে পারবে "এই হচ্ছে আলাদা হবার ফলাফল।" এখন ওআইসির মদদ পেলে বাংলাদেশ আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।
তাই ইন্ডিয়া করলো কি বাংলাদেশের বর্ডার দিয়ে নিজের সেনা ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, "আমি নিজের আত্মরক্ষার জন্য আক্রমনে বাধ্য হয়েছি। কারন, বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য হলে আরব দেশগুলো আমার দেশের সীমানায় মিসাইল নিয়ে হাজির হবে। আমি সেটা হতে দিতে পারি না। তাছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন হয়। প্রতিবছর অনেক হিন্দুদের ওদের ভিটাবাড়ি ছেড়ে আমার দেশে আশ্রয় নিতে হয়। আমি সেটা প্রতিহত করতেই এই সেনা অভিযান করেছি।"
ঘটনাটা শুনলে গা জ্বলে না? একটা স্বাধীন দেশ কি করবে না করবে, কোথায় যোগ দিবে না দিবে সেটা পুরোটাই সেই দেশের নিজস্ব স্বাধীনতা। আমাকে যদি অন্য রাষ্ট্রের কথায় উঠতে বসতে হয়, তাহলে এই স্বাধীনতার মানে কি? যদি ভারত চায় আমি ভারতের সাথে থাকি, তাহলে আমাকে সেইসব সুযোগ সুবিধা দিক যা ওআইসি দিবে বলেছে। ঠিক না?
ঠিক এমনটাই ঘটেছে রাশিয়া ইউক্রেনের "যুদ্ধে।"
ইউক্রেন একটি স্বাধীন দেশ। ও ন্যাটোতে যোগ দিবে নাকি দিবে না, সেটা ওর ইচ্ছা। আমেরিকার চক্রান্ত, ফাঁদ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে উস্কানি ইত্যাদি সব গৌণ। মুখ্য বিষয় হচ্ছে, ইউক্রেন একটি স্বাধীন দেশ, এবং ওর নিজের স্বাধীনতা আছে নিজেরবদমাইশের পথ বেছে নেয়ার।
রাশিয়ার কোনই অধিকার নাই "আত্মরক্ষার খাতিরে" অন্য একটি স্বাধীন দেশে সেনাবাহিনী নিয়ে ঢুকে পড়ার। কারন যাই থাকুক না কেন। তোমার যদি ভয় থাকে তোমার সীমান্তে ন্যাটো চলে আসবে, তাহলে তুমি তোমার প্রতিবেশীর সাথে এমন সম্পর্ক স্থাপন করো যাতে সে ন্যাটোর সাথে বন্ধুত্ব না করে। ওকে তেল দাও, ওকে মালিশ করো, দামি উপহার দিয়ে খুশি রাখো। ওর মানুষ মারার অধিকার তোমার নাই।
এখন ওরা সুইডেন এবং নরওয়েকেও হুমকি ধমকি দিচ্ছে যে ইউক্রেনের মতই পরিণতি ওদেরও হবে। নিউক্লিয়ার ওয়েপন চালিয়ে দিবে। ফাজিলের ফাজিল!
আর এই ফাজলামিতে লাফালাফি করে অনেক বাঙাল, যারা একই সাথে ফিলিস্তিনে ইজরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ করে। এই যে গতকালই নরাধম ইজরায়েলি সেনা শতাধীন ফিলিস্তিনির উপর গুলি চালিয়েছে। নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে। সেদিন এক সিরিয়ান পরিবারকে ইফতার করিয়েছিলাম, ভদ্রমহিলা ভাঙ্গা ভাঙ্গা আরবিতে বললেন, "মাই হাজব্যান্ড শহীদ।" কথাটা মন থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারছি না। মহিলার দুইটা বাচ্চা আমার বাচ্চার সমান। মহিলার বয়স কিছুতেই পঁচিশের বেশি না। এতটুকু দুইটা এতিম বাচ্চা নিয়ে একটা অচেনা দেশে যার ভাষাও সে জানেনা, এখন তাঁকে বাঁচার লড়াই করতে হচ্ছে। শূন্য থেকে শুরু। এই ঘটনা প্রতিটা ফিলিস্তিনি রিফিউজির, প্রতিটা সিরিয়ান, আফগান রিফিউজির। আমার সামনে যখন কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে যুদ্ধ "জাস্টিফাই" করতে আসে, কিংবা "রাশিয়ার দুষ না, সব দুষ আম্রিকা ও পশ্চিমাদের" ধরনের কথা বলে জালিমের জুলুমকে লঘু করার চেষ্টা করে, তখন মন চায় এইসব রিফিউজিদের সামনে এনে বসিয়ে দেই। নিজের বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আরাম আয়েসে এমন থিওরি কপচানো অনেক সহজ। যুদ্ধাহত একটি পরিবার মাত্রই জানে যুদ্ধ কারোর জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ২:৪২