somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"you live by the sword, you die by the sword." - টেক্সাস মাসাকার

২৫ শে মে, ২০২২ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকালকে আমাদের টেক্সাসে একটা এলিমেন্টারি স্কুলে এক ডজনেরও বেশি শিশুকে গুলি করে হত্যা করা হলো। খুনি নিজেও প্রায় শিশু, বয়স মাত্র আঠারো। এই বয়সী ছেলেরা কলেজের সিলেবাসে ডুবে থাকে। নতুন নতুন প্রেমে পড়ে। এই হারামজাদা মেশিনগান নিয়ে প্রথমে দাদি, তারপরে একঝাঁক নিরীহ শিশু ও তাঁদের টিচারদের খুন করলো।
তার কয়েকদিন আগেই বাফেলোতে এক রেসিস্ট বদমাইশ হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট এক দোকানে ঢুকে প্রচুর কালো মানুষকে খুন করলো। সেও আধুনিক মারণাস্ত্র বহন করেছিল।
প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে, এই বদমাইশের কাছে এত আধুনিক অস্ত্র এলো কি করে? উত্তর হচ্ছে, সে নিজের আঠারোতম জন্মদিনে নিজেই কিনেছে। উল্লেখ্য, আঠারো বছরের নিচে কেউ এদেশে সিগারেট কিনতে পারে না। একুশ বছর বয়সের আগে কেউ মদ কিনতে পারেনা। কিন্তু এই নরাধম আঠারো বছর বয়সেই অতি আধুনিক দুইটি মারণাস্ত্র কিনে ফেলেছে। জ্বি, আমেরিকায় অস্ত্র কেনা এতটাই সহজ।
এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠবে, ঘরে ঘরে অস্ত্র কেন রাখতে হবে?
তা অস্ত্র রাখাটা আমেরিকানদের সাংবিধানিক অধিকার। আত্মরক্ষার্থে আপনি অস্ত্র রাখতেই পারেন। এখানে প্রচুর মানুষ এমন থাকেন যারা একশো একর, দুইশ একর কিংবা পঞ্চাশ একর জমি নিয়ে বাস করেন। সেসব বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলে পুলিশে খবর দেয়াতো দূরের কথা, লোকে বুঝবেই না ওখানে ডাকাতি হয়েছে। নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই তাঁদের অস্ত্র রাখতে হবে। এছাড়া অস্ত্র ধারনের কারনে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনাও এড়ানো যায়। যেমন ধর্ষণের জন্য কেউ কোন নারীর উপর ঝাঁপ দিল, নারী নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে ট্রিগার টেনে দিল। খেল খতম। আপনার দোকানে ডাকাত হামলা হয়েছে, আপনি কৌশলে বন্দুক বের করে ট্রিগার টেনে দিলেন। আইনের দিক দিয়ে আপনার কোনই সমস্যা হবেনা।
জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে এখানে লোকজন অস্ত্র ক্যারি করে থাকেন। এবং এই সমস্ত অস্ত্রগুলো ওদের কাছে পরিবারের সদস্যদের মতোই। আমার মনে হয় মানসিকতা অনেকটা এমন যে এর মাধ্যমে লোকে নিজেকে সুপিরিয়র ভাবতে শুরু করে। আলাদা একটা কনফিডেন্স আসে মনে। আপনি একটা বাঘ, সিংহ বা অতি হিংস্র কুকুরের মালিক। আপনার কথায় সে উঠে বসে, যার তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, এবং সে আপনার পা চেটে বশ্যতা স্বীকার করে - এই অনুভূতি আপনাকে যে সুখ দেয়, একটা মেশিনগানের মালিক হওয়াটাও সেই সুখ দেয়। সে জানে বহু মানুষের জীবন মরন নির্ভর করে ওর ট্রিগার টানার উপরে। জানি শুনতে অমানবিক আর হিংস্র শোনায়, কিন্তু এটিই মানুষের বৈশিষ্ট্য। এই মেন্টালিটির কারণেই রাজা মহারাজারা রাজ্য দখল করতো, প্রজাদের উপর হুকুম চালাতো। ভবিষ্যতেও তাই করবে।
তৃতীয় প্রশ্ন করতে পারেন, "অস্ত্র কেড়ে নেয়া যায় না?"
বিষয়টা অতটা সহজ না। এই কারণেই উপরে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে এত কথা বললাম। লোকজন অস্ত্রকে নিজের পরিবারের সদস্যের মতই ট্রিট করে। লাখে লাখে টাকা খরচ করে এর পেছনে। সরকার চাইলেই ওরা দিয়ে দিবে, সেটা ওরা মেনে নিবে না। স্কুলের শিশুদের হত্যার ঘটনা যুক্তি হিসেবে দিন, ওরা পাল্টা যুক্তি দিবে, স্কুলেরও উচিৎ ছিল অস্ত্র বহন করা। "একটি স্কুলে বিশ পঁচিশজন টিচার থাকেন। সবাই যদি একটি করে অস্ত্র রাখতেন, তাহলে একজন বন্দুকধারী কিছুতেই এতটা ক্ষতি করতে পারতো না।"
এদের কিভাবে বুঝাবেন যে টিচাররা স্কুলে শিক্ষা দিতে যান, মিলিটারি হিসেবে যুদ্ধ লড়তে নয় যে ব্যাগে করে অস্ত্র নিয়ে যাবেন।
পাল্টা যুক্তি দিবে কয়েক বছর আগের ঘটনার। এক গির্জায় প্রার্থনার সময়ে এক ব্যাটা বন্দুক বের করে ম্যাসাকারের উদ্দেশ্যে। সাথে সাথে আশেপাশের থেকে কয়েকজন বন্দুক বের করে ব্যাটাকে গুলি করে শুইয়ে দেয়। বহু মানুষের প্রাণ বেঁচে গেল। তাহলে কি ওরা প্রার্থনায় গিয়েছিল, নাকি যুদ্ধে? না, ওদের যুক্তি অনুযায়ী, আত্মরক্ষার খাতিরে "you have right to bear arms."
এখানে কেউ কেউ গর্ধবের মতন একটা যুক্তি দেয়, "যে খুন করার, সেতো ছুরি দিয়েও খুন করতে পারে।"
ওরে বেয়াক্কেল, ছুরি হাতে কেউ কয়েক মিনিটের মধ্যে আঠারোজনকে খুন করতে পারেনা। তার আগেই জুতায়ে বদমাইশটাকে পিটিয়ে লাল করে দেয়া সম্ভব।
টেক্সাসে খুনের ঘটনার পর কেউ কেউ মারফতি আলাপ প্রচার করছেন, "আমার মনে হয় অস্ত্র সমস্যা না। আমার মনে হয় আমাদের বাচ্চাদের ঈশ্বরের কাছাকাছি আনতে হবে। তাহলেই এইসব সমস্যা বন্ধ হবে।"
সমস্যা হচ্ছে, ইবলিশওতো ঈশ্বরের কাছাকাছিই ছিল। সময়মতন ঠিকই পল্টি দিয়েছে।
"দেশের কারোর হাতেই অস্ত্র নেই, শুধুমাত্র পুলিশের হাতে ছাড়া, তাহলেই এইটা বন্ধ হয়ে যাবে।" - খুবই সহজ যুক্তি। তবে আমেরিকানদের জন্য প্র্যাকটিক্যালি প্রায় অসম্ভব একটি অনুরোধ। কারন তখন কালোবাজারে অস্ত্র বিক্রি হবে। মাঝে দিয়ে ওই যে বললাম, যারা একশো দুইশ একর জমি নিয়ে থাকেন, বা যেসব শহরে একজন বা দুইজনই পুলিশ অফিসার, তাঁদের জেনুইনলিই অস্ত্রের প্রয়োজন, তাঁরা পড়বেন বিপদে।
তাছাড়া জন্মগতভাবেই আমেরিকানরা স্বাধীনতাপ্রিয় জাতি। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিবেন আর ওরা খুশি খুশি মেনে নিবে, সেটা অসম্ভব একটি ব্যাপার। করোনা ভাইরাসের লকডাউনের সময়েই প্রমান করেছে। দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি মরেছে আমেরিকানরাই, তবু স্বাধীনতার সাথে আপোষ করেনাই। তেমনই অস্ত্রের ব্যাপারেও ওরা ঘাউরামি করে।
হ্যা, অস্ত্রের কেনা বেচার উপর চরম আইন চালু হওয়াটা জরুরি। আঠারো বছরের একটা কিশোর কিভাবে এত ভয়ংকর অস্ত্র কিনতে পারবে? কিছু বছর আগে আমাদের পাশের শহরে দুই বাঙালি ভাই, মেন্টাল পেশেন্ট, অস্ত্র কিনে নিজেদের পুরো পরিবারকে গুলি করে শেষ করে আত্মহত্যা করেছিল। ওরাই বা কেন ও কিভাবে এত ভয়ংকর অস্ত্র কিনে? সিগারেট ও এলকোহলের ব্যাপারে তোমরা কড়া, তবে এরচেয়ে বহুগুন প্রাণঘাতী এইসব অস্ত্রের ব্যাপারে তোমরা এত ঢিলা কেন? NRA থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ডোনেশন পাওয়ার কারণেই কি আজকে এইসব বাচ্চাদের ও নিরীহ মানুষের জীবন সস্তা হয়ে গেল?
আমার মতে, পুরো ব্যাপারটাই সাধারণ আমেরিকানদের উপর নির্ভর করে। আমি যদি নিহত নিরীহ শিশুগুলোর ছবির দিকে তাকিয়ে নিজের অস্ত্রের মায়া ত্যাগ করতে পারি, তাহলেই নিশ্চিত করতে পারবো, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।
আর যদি আমার কাছে অস্ত্রের মায়া বড় হয় এতগুলো মানুষের জীবন থেকে, তবে সেই কথাটাই একদিন ফলবে, "you live by the sword, you die by the sword."
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২২ রাত ১০:২০
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×