somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটবলদের স্ট্যাটাস

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারপোলের হেডকোয়ার্টারের রেড কনফারেন্স রুমে ইমার্জেন্সি মিটিং ডাকা হয়েছে। সাধারণত অতি জরুরি কিছু না হলে এই রুমে মিটিং হয় না।
ইন্সপেক্টর জামশেদ সকালের কফি খাচ্ছিল। জরুরি বার্তা পেয়ে ছুটে এসে দেখে যতটুকু আশংকা করেছিল, পরিস্থিতি তারচেয়েও সিরিয়াস। শুধু ইন্টারপোল প্রধানই নন, মিটিংয়ে উপস্থিত আছেন ডিরেক্টর অফ সিআইএ সহ আরও বেশ কিছু হোমরাচোমরা ব্যক্তিত্ব; যাদেরকে বিশ্বের গোয়েন্দা সমাজে ইতিমধ্যেই কিংবদন্তিতুল্য গণ্য করা হয়। প্রত্যেকের মুখ অসম্ভব গম্ভীর। সাধারণত পরিস্থিতি ভয়াবহ জটিল না হলে এতগুলো স্বচ্ছ মস্তিষ্কের অধিকারীকে এক ঘরে একত্র করা হয়না।
জামশেদ ধারণা করার চেষ্টা করলো কি হতে পারে? পুতিন ফ্রান্সে হামলা করেছে? সেটা হলে ইন্টারপোল মিটিং কেন ডাকবে? ওটাতো মিলিটারি ইস্যু। সিআইএ যেহেতু এসেছে, কোন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংঘের কোন ঘটনা জড়িত আছে নিশ্চই। আবারও কি আল কায়েদা, বা আইসিস মাথা চারা দিয়ে উঠছে?
কিছুক্ষনের মধ্যে মিটিংয়ের কারন জানতে পেরে ইন্সপেক্টর জামশেদেরও মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।
"জেন্টেলম্যান, পাবলো এস্কোবার ইজ এলাইভ!"
মানে কি? যাকে তিরিশ বছর আগে ওরই দেশে গুলি করে খতম করা হয়েছিল, সে কিভাবে এলাইভ হতে পারে? নিশ্চিত হওয়ার জন্য জামশেদ প্রশ্ন করতে চাইলো, কিন্ত তাঁরও আগে জেনারেল হাওয়ার্ড প্রশ্ন করে বসলেন, "দ্য নার্কো কিং পাবলো এস্কোবার? কলাম্বিয়ান ড্রাগ লর্ড?"
জবাবে প্রেসিডেন্ট অফ ইন্টারপোল মিস্টার মেং হংওয়েই কেবল মাথা নাড়লেন। হ্যা সূচক। এবং এতেই রুমে থমথমে নীরবতা নেমে এলো। বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম নারকো টেরোরিস্ট, যার অর্থবিত্তের কোন সীমা পরিসীমা ছিল না, নিজেরই একটি সুবিশাল, আধুনিক ও বিশ্বস্ত সেনাবাহিনী ছিল, যাকে বাগে পেতে এফবিআই ও সিআইএকে গলদঘর্ম হতে হয়েছিল, সেই পাবলো বেঁচে আছে? সর্বনাশ!
গলা পরিষ্কার করে বক্তব্য শুরু করলেন ডিরেক্টর অফ সিআইএ উইলিয়াম বার্নস, "আমাদের কাছে সলিড তথ্য আছে যে সে ফিরে এসেছে, এবং ইতিমধ্যেই একটিভ্লি নিজের ড্রাগের ব্যবসা চালু করেছে। কোকেন! দক্ষিণ এশিয়ার আস্ত দেশ ওর কোকেনের সর্বনাশা জালে আটকা পড়েছে।"
দক্ষিণ এশিয়ার নাম শুনে ইন্সপেক্টর জামশেদের বুকের হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠলো। সে কাঁপা কণ্ঠে জানতে চাইলো, "দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশ?"
ঠিক যা ভয় পেয়েছিল সেটাই জবাব পেল। মিস্টার মেং জানালেন, "বাংলাদেশ!"
জামশেদের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশী। ওর জন্মও হয়েছিল ঢাকায়। মাতৃভূমি, জন্মভূমিতে শৈশবে বহুবার গিয়েছে ছুটি কাটাতে। সেখানে এখনও ওর মায়ের দিকের বহু আত্মীয়ের বাস। শেকড়ের টান এখনও সে অনুভব করে। সেই বাংলাদেশে পাবলোর অশুভ ছায়া পড়েছে? সর্বনাশ! বুকটা তাঁর হুহু করে কেঁদে উঠে। কিন্তু প্রফেশনালের মত সে চেহারায় তার একটুও প্রতিফলন ঘটায় না। একটি মাসলও না কাঁপিয়ে সে বলে, "সোর্স কি?"
এজেন্টরা তাঁদের সোর্স রিভিল করেনা। সিআইএ ডেপুটি ডিরেক্টর বললেন, "সোর্স বিশ্বস্ত। সলিড তথ্য প্রমান আছে।"
সিআইএকে জামশেদ বিশ্বাস করতে পারেনা। ওরা এর আগেও "ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে" দাবি করে আস্ত দেশ গায়েব করে ফেলেছিল। তারপরে বলে, "তথ্যে ভুল ছিল।" ঘটনা এখানেও একই হতে পারে।
সে বলে, "আমি কি একটু দেখতে পারি।"
উইলিয়াম বার্নস এবং তাঁর ডেপুটির চেহারা দেখেই বুঝা গেল একজন সামান্য ইন্সপেক্টরের আবদার তাঁদের পছন্দ হয়নি। তাঁদের কাছে প্রমান দাবি করা মানে তাঁদের কথায় ওর ভরসা নেই।
মিস্টার মেং তাঁর সৈনিককে ভাল করেই চেনেন। তাই তিনি তাঁর আবদারে সায় দিলেন। তিনি চোখের চাহনিতে সিআইএর প্রধানদের বললেন তাঁদের প্রমান যেন প্রজেক্টরে পেশ করা হয়।
দাঁতে দাঁত পিষে অপমান হজম করলেন উইলিয়াম বার্নস। পরিস্থিতি এতটা জটিল না হলে তিনি অবশ্যই এর জবাব দিতেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এস্কোবারকে বাংলাদেশ থেকে ধরতে হবে। আঠারো কোটি বাঙালিকে সর্বনাশা ড্রাগের জাল থেকে মুক্ত করতে হবে। একা তাঁর পক্ষে সম্ভব না।
তিনি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ থেকে প্রজেক্টরে প্রমান পেশ করলেন।
তা দেখে রুমে উপস্থিত কারোরই সন্দেহ রইলো না বাংলাদেশে পাবলো এসকোবার ফিরে এসেছে, এবং কোটি কোটি মানুষকে কোকেন দিয়ে আসক্ত করে রেখেছে। ওদের ফেসবুক স্ট্যাটাসই এর প্রমান।

"জুলে রিমে ট্রফি আসলে কোন বিশ্বকাপ না, আসল বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে সত্তুর সালের পর থেকে। এর আগেরগুলি ছিল দুধভাত।"

"আর্জেন্টিনা তিনটা বিশ্বকাপ জিতে পেলের সমকক্ষ হয়েছে কেবল, ব্রাজিলের সমান হতে আরও দুইটা জিততে হবে।"

"পেলে মোটেই ফুটবলের রাজা না। কারন ও কোন ইউরোপীয় টাইটেল জিতে নাই।"

"পেলে শুধু অফসাইডে গোল দিত। এখন হলে ও দলেই চান্স পেত না।"

"ম্যারাডোনা একটা চোর, হাত দিয়ে গোল দিয়েছে। কোকেনখোর। ওকে বিশ্বসেরা ফুটবলার বলার কোনই কারন নেই।"

"ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো একজন সাধারণ ফুটবলার। মিডিয়া ওকে মেসির প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়েছে।"

"ফিফা চাইছিল মেসি একটা বিশ্বকাপ জিতুক। তাই প্রতিটা ম্যাচ পাতিয়ে ওদেরকে জিতিয়ে দিয়েছে। নাহলে প্রতি ম্যাচে এতগুলি "প্লান্টিক" হয় কিভাবে?"

"মেসি এমন আহামরি কোন প্লেয়ার না। ঐ বয়সে ও যা করেছে, এমবাপে তারচেয়েও বেশি সফল। কাজেই মেসিকে GOAT বলার কোনই কারন নেই। এম্বাপে ওর চেয়ে ভাল।"

স্বদেশীদের স্ট্যাটাসগুলো পড়তে পড়তেই হঠাৎ করে ইন্সপেক্টর জামশেদ ফিট হয়ে পড়ে গেলেন। তাঁর দাঁতে দাঁত লেগে বাড়ি খাচ্ছে। কিড়মিড় করছে পুরো শরীর। সবাই ছুটে এলেন তাঁর দিকে। ইন্টারকমে জরুরি বার্তা পাঠানো হলো, "We have an officer down! I repeat, we got an officer down! Send medical assistance immediately!"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×