somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ন্যায় বিচার

২৪ শে মে, ২০২৩ রাত ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যাক্সিকান এক বিধবা, গরিব ভদ্রমহিলা তাঁর টুটাফুটা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়াটে একজন সাদা চামড়ার জাঁদরেল পুরুষ। প্রথম মাস ভাড়া দেয়ার পরে দ্বিতীয় মাস থেকে ভাড়ায় অনিয়মিত হয়ে গেল। তিন মাস পরে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দিল। চতুর্থ মাসে লোকটাকে নোটিস পাঠানো হলো তিন দিনের মধ্যে ভাড়া না দিলে বাড়ি ছাড়তে হবে।
লোকটা পাত্তা দিল না।
আদালতে মামলা ঠোকা হলো। আদালত হুকুম দিল লোকটাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে।
শ্বেতাঙ্গ ও কৃষাঙ্গ পুলিশ সে কাজটাই করলো।
ভদ্রমহিলার বাড়ি ভদ্রমহিলার হাতে তুলে দেয়া হলো।
তো এই ঘটনা আমেরিকায় খুবই কমন।
ইহাকে ন্যায় বিচার বলা হইয়া থাকে।
প্রতিবেশী এক দুই হাত জায়গা নিজের বাউন্ডারির ভিতরে নেয়ার ধান্দা করবে না। জানে লাভ নাই। আদালতে গেলে সাথে সাথে ওর ফেন্স ভাঙা হবে।
একটা বাড়ি কিনলেন, তো আরেকজন এসে বলবে না তমুকের কাছ থেকে এই বাড়িটা সে আগেই কিনে ফেলেছে। এবং এই নিয়ে আদালতে গিয়ে পাঁচশো বছরের জন্য আপনাদের মারামারি করতে হবেনা।
দূরের গ্রামে, কিংবা অন্য কোন স্টেটে জমি কিনে ফেলে রেখেছেন, বিশ পনেরো বছর হয়ে গেছে, কোনই সমস্যা নাই। আপনার সম্পত্তির উপরে অন্য কেউ বাড়ি ঘর তুলে থাকতে শুরু করে দিবে না।
পিস্ অফ মাইন্ড যাকে বলে।
এদিকে আমাদের দেশের ঘটনা ঠিক উল্টা। আমাদের এক আংকেল কিছুদিন আগে মারা গেছেন। উনার লাশ কবরে ঢুকানো হয়নাই, এরই আগে খবর এসেছে উনার জমির উপরে আরেকজন ওয়াল তুলে দিয়েছে।
কিছুদিন আগেও এমন হতো যে জীবনের সব সঞ্চয় খরচ করে কেউ একটা বাড়ি কিনলো, দেখা গেল সেই একই বাড়ি আরও চার পাঁচজনের কাছে বিক্রি করে অরিজিনাল মালিক গায়েব হয়ে গেছে। এখন ওরা কামড়াকামড়ি করে মরছে।
ফ্ল্যাট তৈরির ওয়াদা করে এডভান্স টাকা নিয়ে নিয়েছে। ফ্ল্যাট আর হ্যান্ডওভার করছে না। বছর যায়, যুগ যায়, মানুষ মরে যায় - ফ্ল্যাট নির্মাণ হয়না, টাকাও আর উদ্ধার হয়না।
এখন ঢাকা সিটি কলেজের এক অধ্যাপকের বাড়ি বেদখলের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভদ্রলোকের ফ্ল্যাটে পানি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বেদখলকারী। দশ বছর ধরে সম্পত্তি কার, মীমাংসা হয়নি। বৃদ্ধ অসহায় অধ্যাপক চোখে দিশাহারা দেখছেন।
এই একটা কারনে লাখে লাখে প্রবাসী দেশে সম্পত্তি কিনতে বা ধরে রাখতে ভয় পায়। কখন কে কোন প্রভাবশালীর হাত ধরে দখল করে বসবে, তারপরে বছরের পর বছর কেটে যাবে, কোন বিচার হবেনা।
আমার দাদার আমলে, আব্বু যখন স্কুল ছাত্র, তখনকার বেদখল হওয়া সম্পত্তি নিয়ে আদালতে এখনও মামলা চলছে। আমার দাদা, আমার আব্বু দুইজনই কবরে। রায় আমাদের পক্ষে আসলেই কি আর বিপক্ষে গেলেই কি! আমি, আমার কাজিনরাতো দূরের কথা, আমার চাচাই জানেনা কোনটা কোন সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে।
আমার বাপের কেনা সম্পত্তিও এমন বেদখল হয়ে আছে। মহামান্য আদালত ন্যায় বিচার করে দিবে? কবে? কত বছর পরে?
বাংলাদেশে অবৈধ দখলকারীরা কোন দুঃসাহসে "মীমাংসায় বসার" প্রস্তাব দেয়? ন্যায়ভাবে, আইনতভাবে কেনা অন্যের সম্পত্তি বেদখল করে আবার "মীমাংসার" কি আছে? এ যেন এমন হলো আমি আপনার বাড়ি থেকে গয়না লুটে আনলাম, তারপরে আপনাকেই প্রস্তাব দিলাম মীমাংসায় বসার। আপনার গয়নার ফিফটি পার্সেন্ট আমাকে লিখে দিতে হবে, নাহলে পুরাটাই আমি মেরে দিব। "সভ্য" যুগের জন্য হাস্যকর? এটাই তো ঘটছে।
কিন্তু সাধারনের হাতে কোন উপায় থাকে না। বেশি জেদাজেদি করলে খুন হয়ে পড়ে থাকবেন, কেউ পুছবেও না।
কেউ কি শখে, আনন্দে, ইচ্ছা করে দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়ে থাকে?
এই একটা কারনে লাখে লাখে প্রবাসী বিদেশে থাকে। "আইনের বিচার! ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতি ও নিশ্চয়তা!"
প্রচুর প্রবাসীকে চিনি, বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে, অমানবিক জীবন যাপন করে, দেশে টাকা পাঠিয়ে জমি, বাড়িঘর ইত্যাদি কিনেছে এই আশায় যে একটা সময় দেশে ফিরে আরামসে শেষ জীবন কাটিয়ে দিবেন। তারপরে দেখেন নিজের আপন আত্মীয়স্বজনই সেই সম্পদ মেরে দিয়েছে। মৃত্যু হুমকি দিয়েছে, দেশে আসলে গায়েব করে ফেলবে। যৌবনের সোনালী সময়ে উপার্জিত সব সম্পদ ওখানে ইনভেস্ট করেছে। এখন বার্ধক্যে এসে তাঁর আম ছালা দুইই শেষ।
আমাদের দেশের নাম্বার ওয়ান প্রায়োরিটি হওয়া উচিৎ আগে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। দেশে পর্যাপ্ত আদালত নেই? আদালত সংখ্যা বাড়ান। বিচারক নেই? বিচারক বাড়ান।
সমস্যা কোথায়? চিহ্নিত করেন, এবং সাথে সাথে সেই ব্যাপারে অ্যাকশন নেন। একটা খুনের মামলার বিচার হতে দশ পনেরো বছর কেটে যায়। জমি সংক্রান্ত ঝামেলাতো যুগ যুগান্তরের ব্যাপার। অথচ কোনটা অরিজিনাল দলিল, কোনটা ভুয়া, এবং কোথায় কোথায় কার নামে নাম রেজিস্ট্রি হয়েছে, এ বিষয়টা যাচাই বাছাই করতে একদিনও লাগার কথা না। কার জমির উপর দিয়ে কে দেয়াল তুলে ফেলেছে, সেটা যাচাই করতে এক ঘন্টা লাগার কথা। ভুয়া দলিল পেশ করছে? তাহলে এমন দলিল থাকবে কেন যা যে কেউ সহজেই জাল করে ফেলতে পারে? সেই সমস্যার সমাধান হয়না? হয়েছে? তাহলে বিচারে সমস্যা কোথায়?
একশো বছর পরে ন্যায় বিচার করলেই কি আর না করলেই কি!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৩ রাত ৩:০০
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×