সাধারণ জনতাকে পুলিশ কি উপদেশ দেয়?
"চুরি করবেন না। করলে জেল খাটবেন। যদি চুরি না করেন, তাহলে আপনার ভয়ের কিছু নেই।"
এর অর্থ এই না যে পুলিশ চাইছে বিদেশী জনতা এসে চুরি করুক, বা অন্য কিছু। সাধারণ জনতাই যদি চুরি চামারি না করে, তাহলে পুলিশেরও কিছু যাবে আসবে না।
এখন যদি কেউ নিজের পরিবারের লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে এই বলে যে জেলে যাওয়া খারাপ কিছু না। মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু, নেলসন ম্যান্ডেলা সবাই জেল খাটা পাবলিক ছিলেন। তাহলে প্রথমেই আপনার মনে কি আসবে? সে চুরি করবেই? আমার পাপী মন সেটাই ধারণা করবে। আপনি অন্য কিছু মনে করলে আপনি পীর দরবেশ সাধু সন্ন্যাসী পর্যায়ের মানুষ। মনুষ্য জাতির উর্দ্ধে আপনার অবস্থান।
তা বিশ্বমাতবর আমেরিকা আমাদের দেশকে বলে দিয়েছে নির্বাচনে চুরি চামারি হলে সংশ্লিষ্ট লোকজন ও ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বজনকে ভিসা দিবে না। এর মানে হচ্ছে, নির্বাচনে ভোট চুরি না হলে ভিসা পেতে কোনই সমস্যা হবে না।
আমেরিকার কিন্তু উদ্দেশ্য এই না যে বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। ক্ষমতায় শেখ হাসিনা আসুক, কি খালেদা জিয়া, কোনই সমস্যা নাই, মাতবর সাব চাইছেন সৎ উপায়ে, গণতান্ত্রিক উপায়েই যেন আসে।
জবাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি বললেন? মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিষ ঘন্টা ফ্লাই করে আমেরিকা না গেলেও আমাদের চলবে। অন্যান্য মহাদেশের সাথে আমরা বন্ধুত্ব করবো।
আমার পাপী মন প্রথমেই ধারণা করেছে আসন্ন নির্বাচনে ভোট চুরি হবেই, প্রধানমন্ত্রী সেটা জানেন, এবং এই কারণেই তিনি ভিসার ব্যাপারে লোকজনকে একটা ধারণা দিয়ে দিলেন।
আপনি অন্য কিছু ভাবলে আপনি পুরুষ নন, মহাপুরুষ। আপনার সম্মানে পাদ্য অর্ঘ্যের আয়োজন করা উচিৎ।
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এই কথার সাথে দ্বিমত পোষন করুন, দেখবেন "সহমত ভাইদের" পেছনে আগুন লেগে যাবে। শুরুই করবে আপনাকে বিএনপি জামাত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার পাকিস্তানী ট্যাগিং দিয়ে। এদের মাথাতে ঢুকেই না সততা কি জিনিস।
আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি, কুকুরের চাইতেও বিশ্বস্ত এমন সহমত পোলাপান কিভাবে পায় নেতানেত্রীরা? মানুষ হলেতো ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা থাকার কথা। মনুষ্য সঙ্গ পেলে নেতা নেত্রীরা কিংবদন্তি হয়ে যায়। ইতিহাস সাক্ষ্মী, যখনই সহমত ভাইব্রাদার সংখ্যা বেড়ে যায়, এবং নেতারা এদের কথায় আশ্বস্ত হতে শুরু করে, তখনই ওদের পতন ঘটে।
তা আমেরিকা নিজের দেশে কাকে আসতে দিবে কাকে দিবে না সেটা ওদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমাদের শুধু টুরিস্ট ভিসা নিয়ে চিন্তা করলেই হবেনা। বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা এখনও সবচেয়ে বড় মোড়ল। রাশিয়া, চায়না, সৌদি ওরা যতই একজোট হয়ে আলাদা পরাশক্তি তৈরির চেষ্টা করুক, আমেরিকা ও তার মিত্ররা (ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া) এখনও বিশ্ব শাসন করছে। কাজেই, বিশ্ব অর্থিনীতিতে চুনোপুটি হয়ে হাঙ্গরের বিরুদ্ধে যাওয়াটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ না।
অর্থনীতিবিদের মতন বিশ্লেষণাত্মক থিসিস বাদ দেই, নানা তত্ব, উপাত্য, স্ট্যাটিস্টিক্স ঘাঁটাঘাঁটি না করে, সাধারণ মানুষের বুদ্ধিতেও যদি চিন্তা করি, তাহলে আমরা জানবো, আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের উপরই আমাদের রপ্তানি খাত দাঁড়িয়ে আছে। এবং এর প্রধান ক্রেতাই হচ্ছে আমেরিকা। যতদূর জানি, গার্মেন্টস রপ্তানিতে আমরা বিশ্বে তৃতীয়, এটি অনেক বড় একটি এডভান্টেজ। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে আসে, কোটি মানুষের পেট চলে এই উপার্জনে। যেই মুহূর্তে আমাদের বান্ধা কাস্টমার আমেরিকা সিদ্ধান্ত নিবে আমাদের থেকে কাপড় কিনবে না, আমাদেরকে তখন নতুন কাস্টমার খুঁজে বের করতে হবে। আমরা যে রাশিয়া রাশিয়া বলে লাফাচ্ছি, ওরা আমাদের থেকে কিনবেই, এমন কোন গ্যারান্টি আছে? চায়না থেকে নিবে না, এমন লিখিত চুক্তি করেছে? চায়নার সাথে কম্পিটিশনে আমরা পারবো না। সেই লোকবল আমাদের নেই। আমেরিকার মতন এত বড় ক্রেতার (পঞ্চাশটা স্টেট সমান পঞ্চাশটা দেশ ধরলে) রিপ্লেসমেন্টে আমাদের পঞ্চাশটা নতুন কাস্টমার পেতে হবে, যারা ধনী। আফ্রিকার পঞ্চাশটা গরিব দেশ পেয়ে লাভ নাই। সাথে যদি এর মিত্র দেশগুলোকে ধরি, যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইত্যাদি, তখন আমরা বুঝতে পারবো আমরা নিজেদের পায়ে চেইন স চালিয়ে দিয়েছি।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অনেক অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু গার্মেন্টসই না, এসব দেশে রপ্তানি করা আরও বহু পণ্য, যেমন ওষুধ, শাক সব্জি, ফ্রোজেন মাছ, মসলা ইত্যাদি সব বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের সত্যিকার অর্থেই মহা বিপদে পড়তে হবে। নতুন মহাদেশের নতুন বন্ধু কতটা কাজে আসবে, সেটাই বিবেচনা।
পানিতে নেমে কুমিরের সাথে কুতকুত খেলা শুরু করা কতটা বুদ্ধিমানের কাজ, সেটা সময়ই বলে দিবে।
আমার কথা হচ্ছে, গত পনেরো বছর ধরে আওয়ামীলীগই ক্ষমতায় আছে। দেশের অনেককিছুর উন্নয়নে ওরা ভূমিকা রেখেছে। সন্দেহ নেই তাতে। তা সেগুলো জনতার সামনে তুলে ধরা হোক। জনতার যদি মনে হয় ওরা আসলেই যোগ্য, তাহলে ভোট দিবে। না মনে হলে অন্য কাউকে ভোট দিবে। আমি যদি জানি আমি পরীক্ষার জন্য ভালভাবে প্রিপারেশন নিয়েছি, তাহলে কেন পরীক্ষার সময়ে শুধু শুধু নকল করবো?
হ্যা, এই যে দেশে এখন ভয়াবহ লোড শেডিং চলছে, এর দায়তো সরকারকে নিতেই হবে। পাবলিক প্রশ্ন করছে বিদ্যুত মূল্য আকাশ ছোঁয়া হবার পরেও যে সবাই ঠিক মতন বিল দিয়ে এসেছেন, তারপরেও কেন বকেয়ার কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেল? টাকাপয়সাগুলো তাহলে গেল কোথায়? এইটাতো লেজিট প্রশ্ন। "জনতার সেবকদের" এইটুকু জবাবদিহিতো করতেই হবে। এখনতো বিএনপি জামাতের উপর দোষ চাপাতে পারবেন না।
এদিকে দরিদ্র বান্ধব বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে যার আয় আয়কর সীমার নিচে, মানে প্রতিটা পাই পয়সা যাকে গুনে গুনে খরচ করতে হয়, তাঁকেও ট্যাক্স ফাইল করার সময়ে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। লজিকটা পুরাই মাথার উপর দিয়ে গেল। এইটা তাহলে কিভাবে গরিববান্ধব বাজেট হলো? অর্থমন্ত্রী সাহেব জ্ঞানী মানুষ, তিনি যদি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতেন, তাহলে অনেক উপকার হতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:০২