আমার বৌয়ের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক্ড হয়েছে।
UTD সম্পর্কে আমাদের এক ছোটবোন আছে, ওর একাউন্ট থেকে ইনবক্সে একটা ম্যাসেজ এসেছে যে অমুক লিংকে গিয়ে ওকে ভোট দিলে ও তমুক কম্পিটিশন জিততে পারবে।
আমার বৌ ভোট দিতে লিংকে ক্লিক করে।
লিংক কাজ করেনা।
সেটা জানায়।
কোন রেস্পন্স আসেনা।
এবং তারপরেই সে দেখে মেয়েটার একাউন্ট কয়েক ঘন্টা আগেই হ্যাকড হয়েছে।
ওর উচিত ছিল ঘটনা জানার সাথে সাথেই একাউন্ট পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলা। টু-টিয়ার সিকিউরিটি এনাবল করা। মাথায় আসেনি, তাই কিছুই করেনি।
এরপরে আর কিছু করার ছিল না।
তো হ্যাকার করছে কি জনে জনে ইনবক্সে গিয়ে টাকা চাইছে। তার আগে ভালভাবে স্টাডি করছে ওদের সাথে সম্পর্ক কেমন। তুই তুকারি, নাকি আপনি তুমি ইত্যাদি স্টাডি করে তারপরে যোগাযোগ করছে।
"একজনকে টাকা দিতে হবে, খুব জরুরি। আপনি দিয়ে দিন, আমি আপনাকে দিয়ে দিব।"
বলে একটা বিকাশ নাম্বার দিচ্ছে।
এখানে কিছু জরুরি কথা বলি, তাহলে নিজেরাও সাবধান হতে পারবেন।
১. যে কেউ যা তা লিংক দিলেই ক্লিক করবেন না। যেই হোক না কেন। আগে ভ্যারিফাই করবেন। আপনার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে শুরু করে ব্যাংক একাউন্টও হ্যাক হয়ে যেতে পারে। তখন পড়বেন বিপদে।
আমার এক অফিসে এমনই এক কর্মচারীর একাউন্ট হ্যাক হওয়ায় কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট থেকে নয় মিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত সাবধান থাকবেন এইসব ব্যাপারে।
২. ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এমন কিছু রাখবেন না যেটা হ্যাকারদের হাতে গেলে আপনি ভাল বিপদে পড়বেন। এনআইডি নাম্বার, ব্যাংক একাউন্ট, পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ছবি ইত্যাদি যেকোন কিছু হতে পারে। যদি কোন প্রয়োজনে কাউকে দিতেই হয়, উনাকে সরাসরি ফোন করে তারপরে দিবেন। ডিজিটাল যুগে এইসব অতি সেন্সিটিভ বিষয়, একটা হ্যাকেই আপনি পথে বসে যেতে পারেন।
৩. কেউ আপনার কাছে ইনবক্সে টাকা চাইলো, যত আপনই হোক, দেয়ার আগে ফোন করে ভ্যারিফাই করবেন। আমেরিকায় যে থাকে, সে কেন বিকাশে টাকা পাঠাতে বলবে এইটা সবার আগে চিন্তা করবেন। "একজনকে টাকা দিতে হবে, আপনি দিয়ে দিন, আমি কালকে দিয়ে দিব" - এই ধরণের কথা বললে বলবেন, "আগে টাকা পাঠাও, তারপরে দিব।"
তারপরে ওর কোন আত্মীয়, যেমন স্বামী/স্ত্রী কাউকে ইনবক্সে জিজ্ঞেস করুন, ওর একাউন্ট কি হ্যাক হয়েছে কিনা। আপনার সন্দেহ, হয়েছে। বলার দরকার নেই টাকা চাইছে। হয়তো আসলেই টাকার দরকার, এবং সেটাও জরুরি, এবং প্রাইভেসির কারনে জানতে চাইছে না।
আর যদি হ্যাকড হয়ে থাকে তাহলে সাথে সাথে নিশ্চিত করবে ওটা হ্যাক্ড।
আবারও বলি, ফোনে কথা বলবেন, অন্যভাবে যাচাই বাছাই করবেন, তারপরে টাকার লেনাদেনা।
৪. যে নম্বর বিকাশ করতে বলছে, সেই নম্বরে জিডি করুন। যেহেতু টাকা চাইছে, তারমানে এটি ক্রিমিনাল এক্টিভিটি, আশা করি পুলিশ ধরতে পারবে। ওদের বিরাট চক্র কাজ করে। কিছুদিন পরপর একেকটা চক্রকে ধরে, খবরে আসে, তারপরে আরেকটা নতুন চক্র গড়ে উঠে। এগুলিকে ধরে ধরে কঠিন শাস্তি দিলে যদি এই দৌরাত্ম কিছুটা কমে।
আর ফেসবুক/ইমেইল/ব্যাংক একাউন্ট ইত্যাদি ব্যবহার যেখানে সেখানে করবেন না। একটা নির্দিষ্ট কম্পিউটার বা ফোনেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখুন। সেটিং এমন করুন যেন অন্য কোন ডিভাইস থেকে লগিনের চেষ্টা নিলে আপনার ফোনে ভ্যারিফিকেশন কোড চায়।
পর্ন বা হাবিজাবি কোয়েশ্চেনেবল ওয়েবসাইটে যাওয়া বন্ধ করুন। ওসব থেকে ম্যালওয়্যার চলে এসে কম্পিউটারের তথ্য জেনে ফেলে আপনাকে বিপদে ফেলে।
ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:১৪