somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি ও গুজবের ভয়াবহতার ব্যাপারে কোর্স বাধ্যতামূলক করা উচিত।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে স্কুল কলেজে সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি ও গুজবের ভয়াবহতার ব্যাপারে কোর্স বাধ্যতামূলক করা উচিত। দুইটা উদাহরণ দেই, বুঝতে পারবেন।
১. পহেলা বৈশাখে শেখ হাসিনাকে ডাইনি সাজিয়ে একটি মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়েছে। সেখানে এক মহিলা ভাইরাল হয়েছেন। উনি বলেছেন, মূর্তির চেহারা দেখতে উনার শ্বাশুড়ির মতন।
বাঙালি হাস্যরসপ্রিয় জাতি। এই ভিডিওতে মহিলার সরল স্বীকারোক্তিতে খুব মজা পেয়ে মুহূর্তেই লাইক ও শেয়ার দিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এই মহিলা পৃথিবীর সব কোনে বাংলাদেশিদের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে গেছে।
সমস্যা হচ্ছে, আমরা অন্যকে নিয়ে মজা করলেও, নিজেরা কিন্তু নিজেদের উপর মজা নিতে পারি না।
কাজেই, ধরেই নিতে পারেন ভদ্রমহিলার শ্বাশুড়ি এই ভিডিও দেখে ভীষণ মন খারাপ করেছেন। উনি মানতেই পারবেন না উনার পুত্রবধূ গোটা দুনিয়ার সামনে উনাকে ডাইনির চেহারার সাথে তুলনা করেছে।
উনার ছেলেও ব্যাপারটা সহজে মানতে পারবে না। আমার মাকে এইভাবে পাবলিকলি ডাইনি বললে আমার ভাল লাগতো? আপনার মাকে যদি আপনার স্পাউস এইভাবে হিউমিলিয়েট করে, আপনার ভাল লাগতো?
তারপরেও ধরে নিলাম প্রেমের টানে ও ঘরে শান্তির খাতিরে উনারা এই "অপরাধ" ক্ষমা করলেন। কিন্তু এখানেই পাবলিক নিজেদের রোল প্লে শুরু করবে।
"হাহাহাহা, আপা, আপনার ছেলের বৌয়ের ইন্টারভিউ দেখলাম। আপনাকে দেখতে নাকি ডাইনির মতন লাগে! হিহিহি। আমিতো হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম!"
"আপা, এইটা কেমন কথা? আপনাকে ডাইনির সাথে তুলনা করলো? তাও কোটি কোটি মানুষের সামনে? ছিঃ ছিঃ! আমিতো লজ্জায় শেষ। আমার ছেলের বৌ এই কাজ করলে....।"
অথচ মহিলাটা জাস্ট বেকুবের মতন খোলামনে কিছু কথা বলেছিল। বুঝতেই পারে নাই কোথাকার পানি কোথায় গড়িয়ে যাবে!

২. দ্বিতীয় ঘটনাটা মর্মান্তিক। রাজশাহীতে এক বৃদ্ধ হঠাৎ করেই খুবই ঠান্ডা মাথায় চলন্ত ট্রেনের লাইনে নিজের মাথা পেতে আত্মহত্যা করেছেন। সত্তুর বছরের বৃদ্ধ কেন এই কাজটি করেছেন, সেটা কাউকে বলে যান নাই।
কিন্তু কোন এক ফেসবুকার, ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় একটা গল্প ফাঁদলো। এই লোকটার নাকি স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলের-ছেলের বৌয়ের সংসারে ওর জায়গা হচ্ছিল না। মৃত্যুর দিনেও নাকি ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। খেতে দেয়নি। নিজের ঔরষজাত ছেলেই অকথ্য গালাগাল করেছে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও ও অভুক্ত ছিল। ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক করুন কাহিনী।
বাঙালি নিজের স্বভাব অনুযায়ী ঘটনাকে ভাইরাল করলো। একটু খোঁজ নেয়ার প্রয়োজনও বোধ করলো না।
প্রথম আলো পত্রিকা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখে লোকটার বৌ দিব্যি বেঁচে আছেন। ভদ্রলোক ছিলেন একজন পেঁয়াজ চাষি। মৃত্যুর আগেও পরিবারের লোকজনের সাথে তাঁর স্বাভাবিক কথাবার্তাই হচ্ছিল। পরদিনই পেঁয়াজ তোলার কথা ছিল। মৃত্যুর কারন তাঁরাও জানেন না। "অনুমান" করা হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণ হয়তো এই ঘটনার পেছনের কারন। কিন্তু সেটাও অনুমান। যেহেতু লিখে যাননি, কাউকে বলেও যাননি, তাই কংক্রিট সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না।
নিউজ লিংক নিচে দিলাম।
কিন্তু আমাদের জনতা এরই মধ্যে লোকটার পরিবারকে ভিলেন বানিয়ে, গালাগালি করে ওদের জীবন দুর্বিষহ করে দিয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, "বাঙালি জাতি হইতেছে কান কথার জাতি।" একটা কিছু শুনলেই হইলো, সত্য মিথ্যা যাচাই বাদেই চারদিকে ছড়ায়ে দিতে এক বিন্দু সময় নষ্ট করিনা।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/7kv1o2ajpw?fbclid=IwY2xjawJs9K9leHRuA2FlbQIxMAABHjT7YpNnhPVhZ4-Htd7-1JSbtp_yvfBX8buEIP412VN70I1LxCzKYokfkBCj_aem_xKZpKMJvMsJzdYPG1TVCTw
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×