somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“I Loved Her First”

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে ই শৈশব থেকে, তেলাপোকা আমার বিশেষ পছন্দের প্রাণী। সম্ভবত মেয়েরা প্রায় সব্বাইই কম বেশী এই প্রাণী দেখলে আঁতকে উঠেন। এই বাবদে আমি একশ ভাগ মেয়ে। খয়েরী রঙের এই সুন্দর প্রাণীটিকে দেখামাত্রই আমার ভেতরে পৃথিবীর ওপর অদ্ভুত ভালোবাসা জন্মে যায়। আমি চিৎকার করে সে ভালোবাসা চারপাশের মানুষকে জানান দিই। একজন মানুষের অবশ্য তাতে বেশ ঝামেলাই হয়। দিন বা রাতের যে সময়েই আমি তেলাপোকা দেখি না কেন, তাঁকে টেবিল/ বিছানা/ মোড়া ছেড়ে উঠে আসতে হয়, তেলাপোকাটির ‘ব্যবস্থা’ করতে হয়, আমাকে আশ্বস্ত করতে হয় যে সেটা আর ফেরত আসবে না, মাঝে মাঝে প্রমাণও দাখিল করতে হয়, এরপর আগের কাজে ফেরত যেতে হয়। বলাই বাহুল্য, কাজটা সবসময় মুখ হাসি করে করা সম্ভব হয় না, কারই বা ঘুমানোর তিনঘন্টা পর উঠে ঝাড়ু হাতে দৌড়াতে ভালো লাগে! কখনও কখনও আমার ‘সাহস’ পরীক্ষার জন্যও ইচ্ছা করে দেরী করার জন্য হেলেদুলে আসেন, ততক্ষণে আমার গলা ভেঙ্গে গেছে হয়তো!!

হঠাৎ এক অদ্ভুত ব্যপার খেয়াল করলাম। ভদ্রলোকের নিজের কন্যাটি, যে আমারও কন্যা বটে, সম্ভবত জন্মসূত্রেই তেলাপোকা বিষয়ে আমার মতই তীক্ষ্ণ অনুরাগ বোধ করে। তেলাপোকা চোখের কাছটিতে আসা মাত্রই হাত পা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নড়াচড়া শুরু করে তার, আর সপ্তমে ওঠা কন্ঠস্বর তো আছেই। অদ্ভুত ব্যপার সেটা নয়, কারণ বংশ পরম্পরায় এইটা হতেই পারে। ব্যপার হল, ভদ্রলোক ওই সময়ে তেলাপোকাটিকে মারেন, আর কন্ঠস্বরকে যথাসম্ভব মধুর করে মেয়েকে আগলে রাখেন, সাহস দেন। এবং এই কাজটা তিনি সবসময়ই হাসিমুখেই করেন। মেয়ে ডাকলেই হয়েছে, বিছানার কোণা বা বাথরুম থেকে ঝাড়ু নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া হাস্যময় যোদ্ধাটিকে দেখে কে ভাববে তিনি বিরক্ত হতে জানেন? অশ্রুসজল চোখে আমিও ভাবতে বসি, একজন, আছেন এমন, আমারও, যিনি আজও একটা তেলাপোকা দেখলে প্রাণপণ দৌড়ে যান, তাঁর রাজকন্যা আর তার কন্যাটিকে রক্ষার জন্য, পরে অবশ্য আমার চিল চিৎকারের জন্য মৃদূ বকেও দেন। এই বাবাটির চুলগুলো আজ ধূসর, একসময় কালোও ছিলো। পার্থক্য এই যে, তখনের তেলাপোকাগুলোকে ঝাড়ুর এক বাড়িতেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হত।

পৃথিবীর প্রতিটি বাবা, জীবনের কোন না কোন দিনে, তাঁর মেয়েটিকে বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে দৃঢ় বিশ্বাসে ভাবেন, ‘আমার মেয়ে আমাকে ছেড়ে কোনদিন কোত্থাও যাবে না।’ আরেকটু বড় হলে, নিজে পুরুষ হয়েও তিনি মেয়েটিকে আর সব পুরুষ থেকে আগলে রাখেন। কারণ, বাবা, যিনি নিজেই একজন পুরুষ, জানেন, তাঁর মেয়েটিকে সমাজের কদর্য চোখগুলো কিভাবে ঘিরে রাখে, কামনা করে। মেয়ের একটি ছোঁয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে অপেক্ষা করেন বাবা, মেয়ে যত বড় ই হয়ে যাক না কেন? যে ওষুধটা নিজেই ঢেলে খেতে পারেন, যে খাবারটা নিজেই বানাতে জানেন, মেয়ের হাতে সেইটিই পেতে গোপনে অপেক্ষা করেন।

একজন বাবা, একটি মেয়ের জীবনে নিরাপত্তার প্রথম প্রতিশ্রুতির নাম। বাবার পায়ের কাছটিতে বসা মেয়েটি জানে, এই একজন রাজামশাই তাকে আমৃত্যূ রাজকন্যার আসনেই ভেবে যাবেন। বাবা, পৃথিবীর প্রথম আর শেষ পুরুষ, যিনি অনেক আঘাত পেলেও কর্তব্য ভূলে যাবেন না। তাই তো, এই রাজকন্যাটির সম্ভাব্য অবমাননা ঠেকাতে বিকটদর্শন সাবান এনে লুকিয়ে হাতে দেন, মেয়েটার ময়লা রঙ একটু পরিষ্কার হতে।

একসময়, ছোট্টবেলার ওয়াদা ভুলে মেয়ের জন্য রাজপুত্রের সন্ধানে বের হন বাবা। এমনই এক বাবা, সারাদিনের অফিসের পর, এক পাত্র দেখে এসে স্ত্রীর কানে ফিসফিসিয়ে বলেন, “সবই ভালো। কিন্তু চেহারায় বয়সের ছাপ যে? ও যদি ভাবে, ওকে আমরা ঠকিয়েছি?” তো, আবার শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। একবার, যখন সব ঠিকঠাক, সবাই যখন নতুন আত্নীয়ের সাথে পরিচিত হবার আনন্দে বিমোহিত, রাজকন্যা রাজার চোখে দেখে, দুনিয়ার অনিশ্চয়তা নিয়ে তিনি তাকিয়ে আছেন অন্য এক জোড়া চোখের দিকে। সব বাবাই মুখে বলেন না, ‘ওকে দেখে রেখো’। কিন্তু তাঁর কুঁজো হয়ে আসা পিঠ, চোখের কোণায় দুশ্চিন্তার ভাঁজে লুকিয়ে থাকে সে অনুরোধ। এক শক্তিমান, আর এক শক্তিমানের কাছে শক্তির দোহাই না দিয়ে, সম্ভবত এই একবারই মায়া চেয়ে আকুল হন। কখনও হাত জোড় করেন, যখন তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কান্ড হয়।

‘আব্বু, আমার একটা খাতা লাগবে’, বাবার কাছে এই আবদারের সাহস পায়নি যে মেয়েটি, সে ও জানে, যে কোন অন্যায়, দূর্ঘটনা, বিপদের পর তাকে আশ্রয় দেয়ার দুইটিমাত্র মানুষের মধ্যে একজন পুরুষও আছেন। যিনি শুধুই একজন পুরুষ নন, একজন বাবা।

(আব্বু, আপনাকে কোনদিন বলতে পারিনি, আমি জানি আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন)

একটা গান দিলাম, মেয়ের বিয়ের আসরে বাবার গাওয়া গান

From the first breath she breathed
When she first smiled at me
I knew the love of a father runs deep
Someday you might know what I’m going through
When a miracle smiles up at you
I loved her first

পুরো লিরিক এখানে http://goo.gl/OenjJ5
- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×