রাজু ভার্সিটিতে পড়ে, হলে থাকে। বাসা থেকে প্রতিমাসে টাকা আনে, আবার টিউশনিও করে। একটা গার্লফ্রেন্ডও আছে, নাম সেতু। টিউশনির টাকা কোথায় যায় সে জানে না। তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে সেতুই সবসময় ওর পকেট খালি করে। আসলে রাজু জানেই না টাকাগুলো কোথায় যায়।
সেতু রাজুর ৩ বছরের জুনিয়র। ক্যাম্পাসে আসার আগে থেকেই তাদের এ্যাফেয়ার।
রাজুর দীর্ঘদিনের রুটিন এটাই-
৮টা-৯টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠা, সকালে খেয়ে তারপর ব্রাশ ও গোসল করা। তারপর সচারচর ক্লাসে যাওয়া, ক্লাস থেকে ফিরতে ফিরতে ১টা-২টা।
সচারচর ডাইনিংয়ে খায়, তারপর একটা ঘুম। ঘুম থেকে ৪টা-৪.৩০টার দিকে উঠে টিউশনিতে যায়।
ফিরতে ফিরতে ৮টা-৯টা, কখনও ১০টা।
তারপর গোসল করে টেবিল চেয়ার সঙ্গী করে, হোমওয়ার্ক থাকলে করে, নাহয় পড়াশুনা, নাহয় টুকিটাকি কাজকর্ম। এর ফাঁকে টুকটাক ফেসবুকিং তো আছেই।
রাজুদের রুমে প্রতিদিন পত্রিকা নেওয়া হয়। কখনও কখনও সকালেই কিছুক্ষণ পত্রিকা পড়ে নিলেও মূলত রাতেই একটু সময় নিয়ে সম্পাদকীয় পাতা পড়ে।
কিছুদিন যাবত, মূলত সেতু ক্যাম্পাসে ভর্তির পর থেকেই রাজুর রুটিনে পরিবর্তন হয়েছে। সেতু খালার বাড়ি থেকে ক্লাস করে। তাই এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের কাজগুলো তারাতারি করে সম্পন্ন করে সেতুকে রিসিভ করতে যায়।
তারপর, তাকে নিয়ে নাস্তা করে তার ক্লাসে রেখে নিজের ক্লাসে যেতে হয়। ক্লাসের মাঝে কয়েকবার ফোনকল বা মেসেজ চালাচালি না করলে আবার সেতু মন খারাপ করে। তাই সেই কাজটাও মনে রেখে রেখে করতে হয়।
তারপর তাকে নিয়ে প্রায়শই দুপুরে খাওয়া হয়। খাওয়ার বিল যে শুধু রাজুই দেয় তা নয়, মাঝে মাঝে সেতুও দেয়।
সপ্তাহের চার থেকে পাঁচ দিন তারা দুপুরে খাওয়ার পর কোথাও বসে, ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে আড্ডা দেয়।
পাঁচটার দিকে টিউশনির সময় হলে সেতুকে তার খালার বাড়ির সামনে রেখে সে টিউশনিতে যায়।
এখানে বলে রাখা ভাল, রাজু টিউশনিতে যাওয়ার সময় কখনও রিকশায় ওঠে না, তাতে তার প্রায় পাঁচ কিলোর বেশি হাঁটতে হয়। এখানে অবশ্য রিকশা ভাড়াটাও একটা ফ্যাক্ট, তাতে ৪০ টাকা বাঁচানো হয়।
ফেরার সময়টা আগের মতই।
তারপর তাকে আবার সেতুর সাথে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় আধাঘণ্টাখানেক কথা বলতে হয়।
এরপর টেবিলে বসতে বসতে রাত ১১.৩০টা।
কিন্তু সে আর কোনো কাজও করতে পারে না, ক্লান্তি তাকে ঘিরে ধরে, চোখ বন্ধ হয়ে যেতে চায়।
কি করবে বেচারা, বিকেলের ঘুমও তো হারাম হয়েছে।
উত্তর খুঁজে পায় না, কি হচ্ছে তার! কেনো সে এত ক্লান্ত?
প্রায় প্রতিদিন ডেটিং, দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলা, নানান জনের উপকার করে বেড়ানো ইত্যাদিরও কোনো অর্থ খুঁজে পায় না সে।
এভাবেই দিন চলতে থাকে, রাজু শারীরিক মানসিক দুই ভাবেই ভেঙে পড়তে থাকে।
সে ভাবে, সারাদিন তার সাথে সেতুও তো থাকে, সে কেমনে ভাল থাকছে?
সে কীভাবে এত ঝামেলার পরও আমাকে এভাবে সবসময় কাছে রাখতে চাচ্ছে?
অনেক ভাবতে থাকে সে, সেতু কীভাবে এত এনার্জি পায়?
অবশেষে, সে আবিষ্কার করে, যখন সে টিউশনিতে যায়, তখন সেতু কি করে, সেতু ফ্রেশ হয়ে ফলমূল খেয়ে রিমোটটা নিয়ে বিছানায় যায়, হিন্দি সিরিয়াল নাহয় ইংলিশ মুভি দেখে, আর ফেসবুকিং করে। মাঝে মাঝে রাজুকে মিসডকল দেয়!
রাজু যখন টিউশনিতে বকবক করে, সেতু তখন টিভি দেখে!
রাজু যখন টিউশনি শেষে হাঁটে, সেতু তখনও টিভিই দেখে!
এভাবে এনার্জি সঞ্চয় করে আর পরদিন সকাল থেকে আবার রাজুকে পিষ্ট করে।
ইউরেকা ইউরেকা ইউরেকা......!
মাইয়্যা মানুষ এত এনার্জি পায় কই.........???
ঐ যে, খাওয়া, টিভি দেখা আর ঘুম!
ডিপার্টমেন্টে মাইয়্যাগুলা এতো ফাস্ট-সেকেন্ড হয় কেমনে...???
ঐ যে, খাওয়া টিভি দেখা আর ঘুম!
ইউরেকা ইউরেকা ইউরেকা......!
তখন আমেরিকার এক অভিনেত্রী (আবার পড়ুন, অভিনেত্রী) ব্রোকি বার্ক এর একটা বিখ্যাত লাইন মনে পড়ে রাজুর-
“ভাগ্যিস ছেলে হয়ে জন্মাইনি, তাহলে তো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে হত!” :v :v

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




