ঘুমকাতুরে চোখে, দৃষ্টিহীন কুয়াশার মাঝেও তুমি স্বপ্ন খুজে বেড়াও,
সে স্বপ্নের মাঝে কেবল- একমুঠো বেছে থাকার আকুতি।
তোমার ক্ষিদার যন্ত্রণায়, তুমি ঘর ছেড়ে বাইরে এসে পা বাড়াও,
আমার ধূর্ত চোখে তা ধরা পরে অতি সহজেই।
আমি বুঝতে পারি তুমি ক্ষুধার্ত, ঘরে না খেতে পেরে হাড়জিরজিরে-পুস্টিহীনতায় ভোগা তোমার ছেলেমেয়ে,
আমি বুঝতে পারি, সবি বুঝতে পারি।
সময়ের প্রয়োজনে নয়ত ভালবেসে বিয়ে করা স্বামী তোমায় ফেলে রেখে অন্য কোথাও গিয়ে ফের শুরু করেছে নষ্টামি।
আমি জানি, মা বাবা বা ভাইয়ের সংসারে তুমি বড়ই বেমানান, বোঝা ব্যতীত আর কিছুই নও।
তোমার ঘরে ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবা, নয়ত প্যারালাইসিসে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অথর্ব তোমার মা।
আমি বুঝতে পারি বলেই,
ক্ষিধে আর অভাবের তাড়নায় তোমার চোখের কোনে ঐ দূফোটা অশ্রু আমার কাছে মুক্তোর দানা,
হয়ত তুমি জানো কিংবা বুঝতে পার মৃত্যুযন্ত্রণা বড়ই ভয়ঙ্কর,
তাইতো আত্নহননের পথে গিয়ে বারবার ফিরে এসেছ।
আমার দরোজা তুমি ও তোমার মত তোমাদের জন্য প্রতিনিয়তই খোলা,
তোমার পেঠের সে ক্ষুধাই আমার সবছেয়ে বড় পুজি,
তোমার সংসারের অসহায় মুখগুলি আমার সবছেয়ে বড় সম্পদ,
তোমাকে ত্যাজ্য করা এই সমাজ ব্যবস্থা আমার বেছে থাকার পৃথিবী,
তোমার অসহায়ত্বই আমার অবলম্বন।
ভুমিকা না করেই আমি বলতে পারি-
তুমি এসো, আমার কাছে এসো, আমি ও আমাদের মত হায়েনাদের কাছে এসো।
সমাজের যত অবলা নারী সবাই এসো।
কাজ করো, মাস শেষে টাকা নাও, সে টাকাই মাছ মাংস না পাও তাতে কি!
পেয়াজের ফালি দিয়ে দুটো কাচামরিছ কচলে পেটের দায়তো সারা যায় নাকি।
বাসাবাড়িতে নাই থাক, বস্তিতো আছে অনেকগুলো,
বর্ষায় না হয় একটু স্যাঁতস্যাঁতে-ময়লা পানির ছড়াছড়ি, রাতের বেলা পানি সেচের আয়োজন তাতে কি!
মাথা গোজার ঠাইতো নাকি?
ডাক্তার বাবুদের কাছে নাইবা যেতে পার, পেইনকিলারের পয়সা তো হয়ে যায়।
সে যে ব্যাথাই হোকনা কেন, দুটো পেইনকিলার যথেষ্ট নয়কি?
হোক সে বুড়ো বাপের ক্যান্সারের ব্যাথা।
তুমি এসো আমাদের কাছে।
তিলে তিলে না মরে খেয়ে পড়ে একেবারেই মরো,
নতুন করে মাটিচাপা দিতে হবেনা কিবা পোড়াতে হবেনা আর নিয়ে গিয়ে শ্মশানে।
আমাদের কাছেই এসো,
আমাদের কাজ শেষের পর মরার রাস্তাটা না হয় আমরাই করে দেব।
তবুও তোমরা এসো, পচে যাওয়া সমাজের মনুষ্যত্বহীন অমানুষদের কাছেই এসো,
তবুও তোমরা পুড়ে গিয়ে, মরে গিয়ে, চাপা পড়ে প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রেখো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:০৯