'জো' নামের ইংরেজি একটি বই লেখেছেন তিনি, হয়েছেন চারুকলায় স্নাতক। প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল থেকে স্কুল কলেজের শিক্ষা পার করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপিঠে শিক্ষা অর্জন করেছেন, শিখেছেন রঙ ও কাগজের মিশেলে কীভাবে শিল্প তৈরি করতে হয়। শোনা কথা, ইংল্যান্ড থেকে ডিপ্লোমাও করে এসেছেন তিনি। ভালোভাবে সম্মান নিচে বেঁচে থাকার জন্য এই পৃথিবীর মনিবেরা ঠিক যা যা করতে বলেছিল, মি. নাথান বম ঠিক তা-ই তা-ই করেছেন।
কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য সামান্য একটি চাকরি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। পর্যটন ব্যবসায় জড়িত হয়েও লস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে মি. বম সমাজের চোখে পৃথিবীর একজন ব্যর্থ মানুষে পরিণত হয়েছেন, কিন্তু তার কথা কেউ বলছে না, দিচ্ছে না একটি চাকরি। খেয়ে না খেয়ে মি. বম বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন।
এভাবেই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে লক্ষ লক্ষ নাথান বমেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদেরকে একজন সশস্ত্র নাথান বম হওয়ার আগে কেউ চিনবে না। কেউ জানবে না রঙের তুলি কীভাবে স্টেনগানে পরিণত হয়। একজন শিল্পী হয়ে উঠেন ঘাতক, রঙের পাত্র হয়ে উঠে জীবনঘাতি গ্রেনেড।
অমর্ত্য সেনের আপেক্ষিক বঞ্চনা তত্ত্ব বলে মানুষ তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে নিজের অবস্থানের তুলনা করে যখন নিজের প্রতি অসম আচরণ দেখতে পায়, তখন তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আর রাষ্ট্র সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে। এই সেই তত্ত্ব, যার জন্য নোবেল পেয়েছিলেন তিনি। নাথান বম মনে করেছেন, সংখ্যায় বেশি হওয়ার জোড় থাকায় চাকমা কারো চাকরি হলেও তার হয়নি। রাষ্ট্র বমের সাথে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেনি, আর তা-ই বম হয়ে উঠেছেন ইনসার্জেন্ট।
ভাবুন তো মি. বম যদি রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ পদে কাজ করতো, তাহলে কেমন হতো? এতো বড় সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন, একটি উপজেলা কিংবা জেলা চালানো নিশ্চয়ই তার জন্য কঠিন কিছু হতো না।
এজন্য রাষ্ট্রের উচিত বমদেরকে মহান শিল্পী হতে সাহায্য করা, ইনসার্জেন্ট বানিয়ে দেওয়া নয়। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, যেসব দেশ তার নাগরিকদের মধ্যে ইনসাফ তৈরি করতে যতোটা ব্যর্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ততো বেশি আরাকান আর্মি, তামিল টাইগার কিংবা নকশালদের৷
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চোরটা-ও তুলনামূলক সভ্য কোন দেশে গিয়ে নিরাপদ ও নির্ভেজাল জীবন খুঁজে নেয়।