somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাশ-নুর
পেশায় সরকারি চাকুরে। বই আমার কাছে একটা বিশাল জানালার মত। যে জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়, সাগর দেখা যায়, পাহাড় দেখা যায়। ঘোরাঘুরি আমার নেশা। পাশাপাশি খেলাধুলা ভালবাসি। ছোটবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি। একটাই জীবন, তার প্রতিটি দিনই 'বাঁচতে' চাই।

গল্পের বই ও ছেলেবেলা

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা গল্পের বই পড়া দেখতেই পারতেন না। তার কাছে মনে হত গল্পের বই পড়া মানে হচ্ছে সময়ের অপচয়। এই সময়টা পড়াশোনা করে কাটালে ক্লাসে ফার্স্ট সেকেন্ড কিছু একটা হয়ে যাওয়া যাবে। স্কুলের টিফিন বা হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে লুকিয়ে গল্পের বই কিনতাম তখন। বন্ধুদের কাছ থেকে “পড়ে ফেরত দেব” নাম করে কত বই যে গায়েব করে দিয়েছি তার কোন হিসাব নেই। দোকানে সাজানো বইগুলো দেখে আজও ভিতরে সেই পুরোনো প্রেম জেগে উঠলেও সেগুলো আর ছুঁয়েও দেখা হয়ে ওঠেনা। প্রশ্নটা হচ্ছে, কেন?
.
যুগ বদলেছে। দিনদিন আমরা আরো আধুনিক টেকনোলজির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। ছেলেবেলায় ঐ এক বিটিভির ক্যাপ্টেন প্লানেট, গডজিলা আর জুমানজি-ই ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। সে তুলনায় বইয়ের জগৎটা ছিল আরো অনেক বিশাল এবং বিস্তৃত। তিন গোয়েন্দার সাথে আমাজনের গহীন জঙ্গলে আমিও ঘুরে বেড়িয়েছি, পাহাড়ি সেই বাচ্চাটার সাথে টি-রেক্সের সন্ধানে সাঙ্গু নদীতে আমিও ছুটে চলেছি। কখনও বা শঙ্খনীল কারাগারের জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে ডাক শুনে বিষাদে হাহাকার করে উঠেছে বুক। কেউ কি এই তীব্র বিষাদের অনুভূতিটা অন্য যে কোন কিছুর বিনিময়ে ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে? পারবে কি ক্লিওপেট্রার পিছু পিছু ফায়ার অফ ইয়োথ আবিষ্কারের অ্যাডভেঞ্চার এনে দিতে?
.
আজ আমাদের হাতে স্মার্টফোন, সবখানে ওয়াই-ফাইয়ের ছড়াছড়ি। আছে ফেসবুক-ইনস্ট্রাগ্রামের মত সোশাল নেটওয়ার্ক। ঘরে বসেই দেড়-দু’হাজার মানুষের সাথে কানেক্টেড আমি। সিরিজের যে পর্বটা দেখার জন্য আগে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকা লাগত, এখন সেটা ডাউনলোড করে নিতে সর্বোচ্চ ঘন্টাখানেক সময়ের প্রয়োজন। ইউটিউবের অমোঘ আকর্ষণের কথা তো বাদই দিলাম।
.
জীবনযাত্রার মান এরকম সহজ হয়ে পড়ার কারণে এখন আমাদের আর কষ্ট করতে ভাল লাগে না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, কবিতার কথা বলি। আমাদের আগের জেনারেশনেই কবিতাকে সাহিত্যের খুবই মূল্যবান একটি শাখা হিসাবে বিবেচনা করা হত। ভার্সিটির ছেলেরা চুল-দাঁড়ি বড় রেখে কাঁধে চটের ব্যাগ নিয়ে ঘুরত। সেটাই ছিল ঐ সময়ের বিশাল ফ্যাশন। আর বর্তমানে কবিতা দেখলে দুইশ গজ নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে চলে যাই। ছেলে কবি শুনলেই মনে হয় নির্ঘাত গাঞ্জা খেয়ে পড়ে থাকে টিএসসিতে। মোর্দা কথাটা হচ্ছে, যে জিনিস একবার পড়ে মাথামুন্ডু কিছু বোঝা যায় না, সেটা নিয়ে এত মাথা ঘাঁটাবে কে বল দেখি বাবা?! তার নাকি আবার নানান ভাবার্থও আছে, মাফ চাই!
.
একইভাবে গদ্যের প্রতিও আমাদের নিরাসক্তি চলে আসছে। ইন্টারনেটের মত সহজ বিনোদন মাধ্যম থাকতে একটা বই হাতে নিয়ে কষ্ট করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পুরোটা পড়া, সাথে সাথে আবার চরিত্রগুলো মনে মনে কল্পনা করে নেয়া – অনেক কষ্টকর মনে হচ্ছে আমাদের কাছে। এর মধ্যে ফ্রেন্ডস এর তিন-চারটা এপিসোড দেখে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
.
লেখা আর বেশি দীর্ঘায়িত করব না, এমনিতেই অনেক হয়ে গেছে। গদ্যের লেভেলে চলে গেলে এই লেখাও পড়বে না কেউ। তবে, সে দিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের বই পড়ার অভ্যাস এমন হবে যে প্রাইমারি লেভেল পরীক্ষায় “মাই হবি” প্যারাগ্রাফ এলে বিলুপ্তপ্রায় ‘গার্ডেনিং’ এর মত ‘বুক রিডিং’-ও একই কাতারে স্থান পাবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×