somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাশ-নুর
পেশায় সরকারি চাকুরে। বই আমার কাছে একটা বিশাল জানালার মত। যে জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়, সাগর দেখা যায়, পাহাড় দেখা যায়। ঘোরাঘুরি আমার নেশা। পাশাপাশি খেলাধুলা ভালবাসি। ছোটবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি। একটাই জীবন, তার প্রতিটি দিনই 'বাঁচতে' চাই।

মৃত্যুর কোল থেকে

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবনে আমি বেশ কয়েকবার কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখেছি। তার একটা লিখি আজকে। কিছু স্মৃতি থাকা দরকার।
.
এপ্রিল ২০১৬। আমি তখন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ক্যাডেট। আমাদের ফাইনাল এক্সারসাইজ শেষ হবার পর আমরা কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। কলাতলী বিচে গিয়ে সোজা সমদ্রে ঝাঁপ দিলাম পুরো কোর্স। আবহাওয়া বেশ ভাল ছিল। অনেক বড় বড় ঢেউ আসছিল। একেকটা ঢেউ আসছিল, আর আমরা ঢেউ এর দিকে লাফিয়ে পড়ছিলাম। এগুতে এগুতে যতই গভীরের দিকে যাচ্ছিলাম, ততই কেমন যেন একটা বাঁধন ছেঁড়া স্বাধীনতার অনুভূতি পাচ্ছিলাম। এই শেকল পরা জীবনে শেকল ছেঁড়ার আনন্দ কেমন তা আমাদের থেকে ভালো করে আর কে জানে!
.
এগুতে এগুতে প্রায় বুক সমান পানিতে চলে গেলাম। ঢেউগুলো যখন আসছিল তখন লাফ দিতে হচ্ছিল ঢেউ এর উপরে ভেসে থাকার জন্য। এভাবে লাফাতে লাফাতে হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আমার পায়ের নিচে আর মাটি খুঁজে পাচ্ছি না। বুঝতে পারলাম আমি বেশ খানিকটা গভীরে চলে এসেছি। আশেপাশে তাকালাম। ঐতো আমার কোর্সমেটদের দেখা যাচ্ছে খানিকটা দূরে। সবাই ঢেউ এর সাথে লাফ দিতে ব্যস্ত। তার মানে মাটি বেশি দূরে নয়। সাঁতরে খানিকটা যেতে পারলেই আপাতত এই ফাঁড়া থেকে বের হওয়া যায়।
.
সাঁতরাতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আমি যতই সাঁতরাতে চাই, ততই গভীরের দিকে চলে যাচ্ছি। ঢেউগুলো আছড়ে পড়ার পর পিছিয়ে পড়ার সময় আমাকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছে। এবার কিছুটা ভয় পেলাম। স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতরানোর মত ভাল সুইমার না আমি, তাও আবার সমুদ্রের স্রোত। আরো কিছুক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে গেলাম তীরের দিকে ফেরার। কিন্তু কোন সুবিধা করতে পারছিলাম না।
.
ভয় পেলেও মাথাটা পরিষ্কার কাজ করছিল। বুঝতে পারছিলাম কোর্সমেটদের ডেকে আপাতত তেমন কোন লাভ হবে না। পোলাপান যে হারে চিল্লাচিল্লি করছে, আমি ডাকলেও ওরা শুনতেই পাবে না। তাছাড়া যে আমাকে বাঁচানোর জন্য এখানে এগিয়ে আসবে সেও আমার মত একই পরিস্থিতিতে পড়বে। একসাথে দুজনকে বিপদে ফেলার কোন মানে হয় না।
.
এর চেয়ে একা একাই ঢেউ এর সাথে দাপাদাপি করে যাচ্ছিলাম। ফলাফল হচ্ছে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম মোটামুটি এর আশেপাশেই ঘুরছি আমি, আগাচ্ছিও না পিছাচ্ছিও না। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছিলাম, এভাবে আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবো না।
হঠাৎ আমাদের প্লাটুন কমান্ডার মেজর জুনায়েদ স্যার আমাকে দেখতে পেলেন। দেখেই রেগে গেলেন, কারণ আমি সবার থেকে আলাদা হয়ে আরো গভীরের দিকে চলে গিয়েছি। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘মাশনুর গেট ব্যাক! আই সেইড গেট ব্যাক!’
.
আমি তো গেট ব্যাক করারই চেষ্টা করছি তখন, চেষ্টা করতে করতে টায়ার্ডও হয়ে পড়ছি। তখন উনাকে সেটা বোঝাবে কে?! আমি কোন কথা না বলে আমার মত চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। ওনার কমান্ডের কোন প্রগ্রেস না দেখে জুনায়েদ স্যার আবার চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘মাশনুর?! কি বলছি তোমাকে আমি?!’ আমি শান্ত গলায় স্যার কে বললাম, ‘স্যার আই অ্যাম ট্রাইং, বাট আই ক্যাননট মেক ইট।’ ঐ সময়ে ঐরকম শান্ত ছিলাম কিভাবে কে জানে!
.
যাই হোক, জুনায়েদ স্যার বুঝতে পারলেন যে আমি বিপদে পড়েছি। উনি আশেপাশে আমার যত কোর্সমেট ছিল, সবাইকে একসাথে করে হিউম্যান চেইন বানিয়ে আমার কাছে পাঠালেন। সেই হিউম্যান চেইন গিয়ে অনেক কসরত করে আমাকে তুলে নিয়ে আসলো অবশেষে। ওখানে কে কে ছিল সেটা খুব একটা মনে নেই, তবে Syed Shawon, Masud Rana আর Rayan Alif ছিল, এটুকু মনে আছে।
.
আমি পড়েছিলাম একটা ছোটখাট ঘূর্ণির মধ্যে, আর কখন যে ভাটার টান শুরু হয়ে গিয়েছিল আনন্দের চোটে সেদিকে খেয়াল ছিল না কারো। যাই হোক, ঐ দিন জুনায়েদ স্যার আর আমার ঐ কোর্সমেটগুলো না থাকলে আজকে বসে বসে এই কাহিনী লেখা হত না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি যখন বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি মোটামুটি বড়সড় একটা বিপদে পড়েছি এবং সম্ভবত মারা যাচ্ছি, কেন যেন খুব বেশি একটা ভয় লাগেনি, বরং কেমন যেন একটা দুঃখ এসে ভর করেছিল। মনে হচ্ছিল, অনেক কিছুই রয়ে গেছে যা করার কথা ছিল কিন্তু করতে পারিনি। তবে সেই দুঃখের অনুভূতিটা, আসলে দুঃখ না ঠিক, কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লেগেছিল বুকের মধ্যে। কেমন প্রাচীন একটা অনুভূতি, সেই শূন্যতার অনুভূতির সাথে এ জগতের আর কোনকিছুর কোন মিল নেই।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×