somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাশ-নুর
পেশায় সরকারি চাকুরে। বই আমার কাছে একটা বিশাল জানালার মত। যে জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়, সাগর দেখা যায়, পাহাড় দেখা যায়। ঘোরাঘুরি আমার নেশা। পাশাপাশি খেলাধুলা ভালবাসি। ছোটবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি। একটাই জীবন, তার প্রতিটি দিনই 'বাঁচতে' চাই।

পাসিং আউট প্যারেড

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাসিং আউট প্যারেড বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর সবচেয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। ২ বছর ট্রেনিং শেষে কিছু ক্যাডেট সামরিক অফিসার হবে - দিনটি সবার জন্যই অনেক আনন্দের। আমার পাসিং আউটের কথা বলি। প্রথমত, বিএমতে ঢোকার আগে থেকেই আমার এই দিনটা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল। এরপর ট্রেনিং-এ যখনই কষ্ট হয়েছে, স্টাফ থেকে শুরু করে প্লাটুন কমান্ডার সবাই আমাদেরকে ‘ওয়ান ফাইন মর্নিং’ এর স্বপ্ন দেখাতেন। রূপকথার সেই ফাইন মর্নিং হচ্ছে এমন একটা দিন, যেদিন আমরা এখান থেকে বের হতে পারব, আর এরপর আমাদের জীবনের আর কোন কষ্ট থাকবে না। কাউকে শর্তহীন খাটাতে চাইলে তার সামনে একটা মূলা ঝুলিয়ে দিতে হয়। ওয়ান ফাইন মর্নিং ছিল আমাদের জন্য সেই মূলা।

বিএমতে যাবার পর পোডিয়ামটাকে মাঝেসাঝে দেখেটেখে রাখতাম। কয়েক ধাপের দু’মাথাওয়ালা একটা সিঁড়ি, সেটাকেই অন্য জগতের কোন কিছু মনে হত। রাতের বেলা ইআরসি করার সময় মাঝেমাঝে স্টাফ যখন পোডিয়াম টাচ অ্যান্ড ব্যাকে পাঠাতেন, পোডিয়ামটার গায়ে হাত বুলিয়ে দেখে আসতাম আসলেই জিনিসটা সত্যি নাকি। হতেও পারে ব্যাপারটা অপটিক্যাল ইলিউশন, কোন কিছুই বলা যায় না!
ফার্স্ট টার্মের মোটামুটি শেষের দিকে ৭০ লং কোর্সের পাসিং আউট প্যারেড। আমরা ফার্স্ট টার্ম হিসেবে প্যারেডে মিলতে পারলাম না, গ্যালারিতে বসে সবাইকে হাততালি দিয়ে গেলাম। হাতের তালি কেন তালে তালে হল না সেটা নিয়েও অবশ্য একটা পাঙ্গা খেয়েছিলাম, কারণ পোলাপান ওখানে বসেও ঘুমিয়ে পড়েছিল। প্যারেড শেষে পোডিয়ামের ওপাশে ফাইনাল টার্মের সেই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল, মনে আছে এখনো।

এরপর আরো ৩ টা পাসিং আউট প্যারেড দেখেছি। কিভাবে কিভাবে সবগুলো প্যারেডেই মিলতে হয়েছে আমাকে। এক পার্টি ছিল যারা এই প্যারেডের মৌসুম এলেই কিভাবে কিভাবে যেন হসপিটাল থেকে নানান রেস্ট ম্যানেজ করে ফেলত। আমি বোকাসোকা মানুষ, আমি এগুলো বুঝতাম না, আমি বলদের মত প্যারেড করেই যেতাম। অবশ্য প্যারেড করতে যে খারাপ লাগত তা না, তবে টানা ১ মাস রোদে দাঁড়িয়ে থাকার পর আমাকে অন্ধকারেও আর দেখা যেত না, এটাই সমস্যা। অবশ্য এই প্যারেড করতে করতেই কিভাবে দাঁড়িয়েও ঘুমিয়ে পড়া যায় সেটা আবিষ্কার করেছিলাম। সেটা একটা বড়সড় অ্যাচিভমেন্ট বলা যায়।

কষ্ট লেগেছিল ৭৩ লং কোর্সের প্যারেডে। আমার সাথে আমার মত আর যারা ছিল তারা কেউই এই প্যারেডে মেলেনি। আমি ওখানেও কিভাবে যেন আটকে গেলাম, প্যারেডটা করাই লাগল। ৭৩ যখন লাস্ট মার্চটা করে বের হয়ে যাচ্ছিল পোডিয়ামের দিকে, আমি তখন দাঁড়িয়ে ছিলাম জুনিয়র ডিভিশনের সাথে। অনুভূতিটা একটু অন্যরকম, যাই হোক, সেটা নিয়ে আফসোস করে লাভ নেই, সময়টা পেরিয়ে গেছে।

দেখতে দেখতে আমাদেরও পাসিং আউটের সময় চলে আসল। ১ মাস ধরে এপ্রিল-মে মাসের কড়া রোদে স্টাফদের সাথে অনেক খেলাধুলা হল। ঘাপলা পার্টি এখানেও ঘাপলা। একজনের নাকি চোখের ক্লোরোফিল বেড়ে গেছে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। ভাবটা এমন যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে তার চোখের মধ্যেই খাবার উৎপাদন শুরু হয়ে যাচ্ছে। স্টাফরা এত কিছু বুঝত না, তাদের হিসাব ছিল হসপিটালের চিট। হসপিটালের চিট থাকলে ক্লোরোফিল পার্টিও মাফ, না থাকলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া হলেও লাভ নাই। কোনমতে হসপিটালের একটা চিট দেখাতে পারলেই তারা খুশি। পাসিং আউটের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হচ্ছিল, গত দুই-আড়াই বছর ধরে আমরা যে ওয়ান ফাইন মর্নিং এর কথা শুনে আসছি, আজই কি সেই দিন? ব্যাপারটা আসলে বিশ্বাস হতেই চাচ্ছিল না।

পুরো প্যারেডটা জুড়েই বাদক দল নানান বাজনা বাজায়। প্যারেডের শেষ পর্যায়ে যখন আমরা পোডিয়ামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন ট্রাম্পেটের সুরে পুরোনো সেই দিনের কথা শুনতে শুনতে কখন যে চোখ ভিজে গিয়েছিল তা বলতে পারি না। শুধু খেয়াল করলাম পোডিয়ামের সিঁড়ির ধাপগুলো কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আর পোডিয়ামটা পেরোনোর পরে সেই বাঁধন ছেঁড়া উচ্ছ্বাস, সেই কথা কি ভোলা যায়?

শেষ করি। গ্রাজুয়েশন শেষ করলাম কয়েকদিন আগে। ভার্সিটিতে নাকি কনভোকেশনও হয়ে গেছে। মানুষজন বগল বাজাতে বাজাতে গিয়ে কনভোকেশন করে আসল। আর আমি এখানে বসে ওদের ছবি দেখি আর ওয়াও রিয়্যাক্ট দিয়ে যাচ্ছি। তবে কথা হচ্ছে, আমি কনভোকেশন দেখিনি, কালো রোব পরে হাতে সার্টিফিকেটটা নিয়ে গ্রাজুয়েশন ক্যাপটা উপরে ছুঁড়ে মারার অনুভূতি কেমন আমি জানি না। কিন্তু পোডিয়াম পেরোনোর পর মাথার সবুজ বেরেটটা উপরে ছুঁড়ে মারার যে অমানুষিক আনন্দ, সেটা পেয়েছি। এক জীবন পার করে দেবার জন্য এই স্মৃতিটাই যথেষ্ট, কনভোকেশন না হলেও চলবে আমার।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৩১
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×