somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা: অহরুর অলসতা

২৭ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলার ধারে এক ফড়িং বসে ঝিমাচ্ছিল। চোখ ওর বড় বড় আর টলটলে সবুজ, ঠিক যেন পালিশ করা স্ফটিক। বসেছিল এক হিজল গাছের পাতার ডগায়, উত্তরা বাতাসে দুলছিল পাতাটা। এই দোলাদুলি ফড়িংটার ভালো লাগে -তাই এইখানে বসে থাকে ফড়িংটা খুব। এই ফড়িংয়ের নাম অহরু। অহরু একটু ধীরস্থির, অত চটপটে নয়, খলবলিয়ে উঠা ওর স্বভাববিরুদ্ধ।

অহরুর বাবা, নাম তার কহরু, সেও এক মস্ত সবুজ চোখা লোক। এসে বলে,

‘হ্যারে, তুই দেখছি ভারী অলস, তুই তো একদম...একদম যাচ্ছেতাই। এতক্ষণ কেউ হিজল গাছে বসে থাকে, একেবারে যাচ্ছেতাই তো!

কহরুর দোস্ত এক ভ্যানভেনে মাছি সেও এসেছে কহরুর সাথে অহরুর ঝিমানো দেখতে। ভ্যানভেনিয়ে বলল,

নয়তো এটা ভালো
হিজল গাছের বিজল পাতায়
বসলে অমন-

ম্যাড়মেড়িয়ে উঠবে গা টা
খড়খড়াবে বুকের পাটা
পাখায় ধরবে জং
পিত্ত আর কাশির ব্যামোয়
ধরবে হলুদ রং!

হলুদ রং! অহরুর বাবা কহরু শিউরে উঠে। ‘ এতো ভালো কথা নয় বাবা,শিগগির চল, ওই জারুল গাছে গিয়ে বসি।

ভ্যানভেনে মাছি কিন্তু আবার বলে উঠে-

হিজল আর জারুল পাতা
সবই এক ছাতামাতা
আসল কথা অলসতা
খুব খারাপ-খুব খারাপ

ম্যাড়মেড়িয়ে উঠবে গা টা
খড়খড়াবে বুকের পাটা
পাখায় ধরবে জং
পিত্ত আর কাশির ব্যামোয়
ধরবে হলুদ রং!

অহরুর বাবা আবার শিউরে উঠে। হলুদ রং মোটেও ভাল নয়। তা তুই একটু অলস ঠিকই অহরু। খলবলিয়ে না উঠলে আমাদের ঠিক চলে না-বুঝেছিস। উড়ে আসি চট করে চল, পাখার জং কাটবে তখন।

অহরু কিন্তু বলে বসে, ‘অলস আমি নই মোটেও, বরঞ্চ আমার বন্ধুদের তুলনায় ভীষণ জোড়ে ছুটি। এত জোড়ে যে ওরা খুব বিরক্ত হয় আর বলে ‘ হয়েছে! অত ছুটিস না’

শুনে ভ্যানভেনে মাছি ভনভন করে হেসে উঠে-

ভ্যান ভ্যান ভং
খুব হয়েছে রং তামাশা
খুব হয়েছে ঢং
কানের নীচে দাও দুখানা
উপরে ঝুলাও পাও দুখানা
চিমটি কাটো নাকে
বন্দী করে রাখতে হবে
আলমারীটার তাকে!


‘তা তুই খুব বাজে বকছিস অহরু-সত্যি সত্যিই।’ কহরু বলে।
‘তোর এই মিনমিনিয়ে ছুটে বেড়ানো মোটেও চটপটতার মধ্যে পড়ে না। তোর দোস্তগুলো হয় কানা, নয় আস্ত...আস্ত’ কহরু ভাষায় কুলাতে পারে না।
‘না হয় আস্ত গবেট’ মাছি বলে দেয়।
অহরু এইবার ঝাঝিয়ে উঠে, ‘যাও হয়েছে! আমি আলসে আর আমার বন্ধুরা সব চালসে। হলো তো?’
কথা শুনে কহরু বলে,’ ছি! এমন অভিমানের কথা বলে না, অমন যাচ্ছেতাই অভিমানের কথা বলতে আছে! তারচেয়ে চল তোর বন্ধুদের গিয়ে দেখি!


তারপর তারা তিনজন মিলে রওনা দেয় জলার দিকে। টলটলে জলার মাঝে একখানি ঘাস আর শ্যাওলা মাখা ছোট্ট জায়গা। ঠিক যেন সাগরের মাঝে মাথা উচিয়ে পাথুরে দ্বীপ।ওখানে বসে ছিল এক থপথপানো কাছিম। অহরুরা যখন ওখানে আসে তখন কাছিমটা রোদে আরাম করছিল।
কাছিমের কাছে গিয়ে অহরু বলে-
‘ দেখ না কাছিম, ওরা বলে আমি নাকি অলস। অথচ তুই তো বলিস আমি নাকি ছুটে বেড়াই খুব , এবার আমার হয়ে সাফাই গা তো!

কথাটা বুঝতে কাছিমের সময় লাগে খানিকটা। তারপর ভেবে নিয়ে বলে-
‘উহু, তাতো নয় মোটে। ওর ওড়াওড়িতে খুব তাড়াহুরা, এত তাড়াতাড়ি ওড়াউড়ি খুব বাড়াবাড়ি। ঠিকমত ঠাহর করা যায় না ঘাড় ঘুড়িয়ে, আর অত অত ঘাড় ঘুড়িয়ে কথা বলা দারুন বিশ্রী।

শুনলে তো? অহরুর মুখ ল্যাপটালেপ্টি হাসিতে।

মাছি শুনে টুনে বলে-

কাছিম তোর যাচাই
হচ্ছে না তো মনের মত
শুনতে মোরা যা চাই,
নিজেই তুই এত্ত অলস
থ্যাপথেপিয়ে যেমনি চলস
রাস্তাটা পার হতে
লাগাস দুই ঘন্টা
এমনি করে গেলে
নেমন্তন্নে এলে
পাবি মেঠাই মন্ডা?

কাছিম বলে,মেঠাই মন্ডা আমি খাই না, তবে বলি আমি অলস নই মোটে, বরঞ্চ আমার বাকী বন্ধুদের তুলনায় খুব জোড়ে ছুটি।
শুনে মাছি ভনভন করে হেসে উঠে

ভ্যান ভ্যান ভং
খুব হয়েছে রং তামাশা
খুব হয়েছে ঢং

অহরুর বাবা বলে, না কাছিম এ তোর বাড়াবাড়ি। তোর চেয়ে ধীরে চলে এমন কোন লোক আছে বলে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না, গুল মারছিস না তো!
‘ঠিক আছে ! আমিই সেরা অলস, হলো তো!”
‘ছি! এমন অভিমান করতে আছে! তারচেয়ে চল তোর বন্ধুদের দেখি গিয়ে।‘


তারপর ওরা চারজন রওনা দেয়, জলার কিনারায়। ওইখানে ভিজে মাটিতে, যেখানে ঘাসেরা আর শ্যাওলামাখা সবজেটে নুড়ি পাথর বিছিয়ে আছে, সেখানে গুড়ি মেরে বসে আছে এক ল্যাপলেপিয়ে শামুক।

কাছিম গিয়ে শামুকের কাছে ব্যাপারটা পাড়তেই শামুক বলে,
অলস তুই? মোটেও না। তোর মাথা খুব জোড়ে নড়ে, খোলসের ভেতর আসা যাওয়া করে তৎক্ষনাৎ।

মাছি বিরক্ত হয়ে শামুককে থামিয়ে দেয়-

শামুক তুই এত্ত অলস
ল্যাপলেপিয়ে যেমনি চলস
রাস্তাটা পার হতে
লাগাস এক হপ্তা
এমনি করে গেলে
নেমন্তন্নে এলে
পাবি মাছের কোপ্তা?

শামুক বলে,
‘ব্যাপারখানা নয়তো সোজা
বুঝতে ঠিকই, থাকতো যদি
ঘাড়ে এমন বোঝা।‘
মাছি বলে, বোঝাটাকে থুয়ে
যাস না কেন বিদেশ বিঁভুয়ে

শামুক বলে,
বোঝা থুয়ে বাইরে যাওয়া!
লাগে যদি ঠান্ডা হাওয়া
ভাবলে আসে জ্বর
তারচেয়ে তোদের বুঝিয়ে বলি
বোঝাই আমার ঘর!!

তা ঠিক তা ঠিক, কহরু বলে, বোঝাই তো ওর ঘর, ওর বেশি নড়ে কাজ কী!

কাছিম বলে, খোলসও তো আমার ঘর। আমারও তাই বেশি ঘুরে কাজ নেই।

অহরুর বাবা এবার অহরুর দিকে ফিরে বলল, এবার বুঝলি তো। ঘরই লোকদের অলস করে দেয়। যারা জন্ম থেকেই ঘর নিয়ে থাকে তারা তো গোড়া থেকেই চটপটে নয়, আর যারা পরে ঘর বানিয়ে নেয় তারাও ভারী অলস হয়ে পড়ে। তাই ফড়িং হয়ে তোর এই আলসেমি সুবিধার না। ওদের সাথে মিলিয়ে তুইও অমন গদাই লস্করি চালে যদি চলিস তাহলে কিন্তু-

তাহলে কি হবে সেটা ভ্যানভেনে মাছি বলে দেয়-

ম্যাড়মেড়িয়ে উঠবে গা টা
খড়খড়াবে বুকের পাটা
পাখায় ধরবে জং
পিত্ত আর কাশির ব্যামোয়
ধরবে হলুদ রং!

হলুদ রং!! সবাই শিউরে উঠে।





প্রকাশিত: আজকের দৈনিক কালের কন্ঠের ফিচারপাতা টুনটুনটিনটিন এ ::লিঙ্ক
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×