বছর ঘুরে এবারও এসেছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী সেই মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী, শোকাহত ১৫ আগস্ট, জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক দিন! শত শত বছর ধরে বাঙালী জাতি ছিল পরাধীনতার জালে বন্দী, শোষণ নিপীড়নে ছিল জর্জরিত! সেই ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত অনেক নেতাই বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন আবাসভূমি উপহার দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সংগ্রাম করেছিলেন কিন্তু কেউ সফল হননি! পাকিস্তান হওয়ার পর ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে বাঙালী জাতি কিছুটা সফলতা অর্জন করেছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ক্ষেত্রে, কিন্তু বাঙালীদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ, বঞ্চনা থেমে থাকেনি এতে, বরং তা বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণে! বাঙালীর ‘সোনালী আঁশের’ পয়সায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা করাচী, লাহোর, পিন্ডি আর ইসলামাবাদকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করেছিল! সরকারী চাকরি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যে সব কিছুতেই ছিল পশ্চিমাদের একচেটিয়া আধিপত্য! সেই সময় অনেক বাঙালী নেতা ছিলেন রাজনীতিতে সক্রিয় ; কিন্তু কেউ পশ্চিমাদের এই শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন করতে পারেননি! স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের রক্ত চক্ষুর ভয়ে অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাহস হয়নি আন্দোলন করতে! অনেকে আবার মোনায়েম খানের মতো আইয়ুব খানের চাটুকারিতা করতেই ছিলেন ব্যস্ত! কিন্তু একজন ছিলেন ব্যতিক্রম, তিনি হলেন তখনকার টগবগে তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পশ্চিম পাকিস্তানী বিশেষ করে পাঞ্জাবীদের শাসন আর শোষণ থেকে বাঙালীদের বাঁচাতে এই তরুণ নেতা ১৯৬৬ সালে খোদ লাহোর গিয়ে বাঙালীর মুক্তি সনদ ৬ দফা পেশ করলেন! পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে শেখ মুজিবকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে আখ্যায়িত করলেন? শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে এসে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সামনে বাঁচার দাবি ছয় দফা তুলে ধরলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় শেখ মুজিব কোন নেতারই সমর্থন পাননি সেদিন! কেউ কেউ শেখ মুজিবকে ভয় দেখালেন‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে সরকারের কঠিন শাস্তির ব্যাপারে! কিন্তু মুজিব দমবার পাত্র নয়, আইয়ুব শাহীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে উল্কার গতিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছয় দফার প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বাংলার মানুষও লুফে নিল ছয় দফাকে তাদের বাঁচার সনদ হিসেবে! ছয় দফার অনুকূলে চারদিকে পড়ে গেল সাজ সাজ রব! লৌহমানব আইয়ুব শাহী প্রমাদ গুণলেন! অনবরত জেল-জুলুম দিয়েও যখন শেখ মুজিবকে ছয় দফা আন্দোলন থেকে নিবৃত করা গেল না, তখন চিরতরে তাঁকে শেষ করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হলো! কিন্তু বাংলার মানুষ বিশেষ করে তরুণ ছাত্র সমাজ চুপ করে বসে রইলো না, তারা দলবেঁধে রাস্তায় নেমে এল এই মিথ্যা মামলা থেকে শেখ মুজিব আর তাঁর সঙ্গীদের মুক্ত করতে। ক্রমে সেই আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নিল এবং স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর পতন ঘটিয়ে ছাত্র-জনতা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে জেল থেকে মুক্ত করে আনল আর মুজিবও হয়ে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা!
বিএনপি,জামায়াত,জাতীয়পার্টি যে দলেরই হউক না কেন, বাঙ্গালী মানেই তাকে স্বীকার করতে হবে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ!.......(পর্ব-১)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???
কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???
আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুরসি নাশিন
সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন
বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!
যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!
ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন