’৬৯-এর সেই ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলনের সূচনায় ভাসানীসহ পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য নেতা পর্দার আড়ালে ছিলেন ; কিন্তু গণ-আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন এই সব সুবিধাবাদী নেতা বিশেষ করে মওলানা ভাসানী রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্য ‘মুজিব মুক্তির’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন! তার পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। মুক্তির সনদ ছয় দফার আলোকে ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে উপহার দিলেন এক অবিস্মরণীয় বিজয়। আজ একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ওই স্মরণীয় বিজয় ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চাবিকাঠি! আজ স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গেলে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ’৫২ থেকে এক লাফে ’৬৯-এ চলে আসে, ইচ্ছে করেই ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনকে তারা পাশ কাটিয়ে যায়। যেহেতু ছয় দফার কথা বললে শুধু বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে বাহবা দিতে হয়, সেহেতু এইসব ঈর্ষাপরায়ণ, পরশ্রীকাতর, আওয়ামী বিরোধীরা স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে ৬ দফাকে আড়াল করতে চায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘সাহস এবং প্রত্যয়’ দিয়ে বাঙালী জাতিকে এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন যে নিরস্ত্র বাঙালী সহসাই সশস্ত্র বাঙালীতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ আমরা মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে শক্তিশালী পাক বাহিনীকে পরাজিত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করি! বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই কালজয়ী ‘বজ্রকণ্ঠ’ ছিল বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অনুপ্রেরণা! তা ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর দেশ হানাদারমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধুর অভাবে সবার ভেতরে হচ্ছিল রক্তক্ষরণ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিলেন কবে ফিরে আসবেন তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা, জাতির জনক! অবশেষে ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি বীরের বেশে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসার পরই আমাদের রক্তস্নাত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। তাই এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু!’
চলবে.........
(১ম পর্ব দেখতে ক্লিক করুন এখানে http://omarbangla.com/?p=12409)