মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠতেই রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে দোস্তের হুংকার,কিরে তুই কি মঙ্গলগ্রহ থেকে আসছিস নাকি যে এতক্ষন লাগছে?
-আরে মঙ্গলগ্রহ থেকে আসলে তো কথাই ছিলনা।মঙ্গলগ্রহ থেকে লাফ দিলে আরো আগেই তোর বাসায় পৌছে যেতাম।
-মশকারি করবি না বললাম।
-২ঘন্টা ধরে জ্যামে আটকা পড়েছি আর তুই বলছিস মশকারি করছি।আরে মশকারি করছে ডিজিটাল দেশের ডিজিটাল রাবনওয়ালারা।পানি,গ্যাস,বিদ্যুৎ তো দিতেই পারে না রাস্তা বেরুলে যানজটে আটকিয়ে রোদ না খাইয়েও ছাড়বে না।
-এ জন্যই তো মশকারি বলছি।যারা গ্যাস,পানি,বিদ্যুৎ দিতে পারেনা তাদের কাছ থেকে যানজটমুক্ত চলাফেরা আশা করা মানে নিজের সাথে মশকারি করা।২ঘন্টা জ্যামে বসে সিদ্ধ হওয়ার চাইতে হেঁটে চলে এলে আরো আগে এসে যেতি।
আচ্ছা তাই করছি বলে লাইন কেটে দিয়ে রিক্সাওয়ালা ভাইকে ভাড়া দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম।রিক্সা,ঠেলাগাড়ি,সিএনজি,বাস আর প্রাইভেট কারের লম্বা লাইনকে বাই বলে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করব এমন সময় ‘আরিফ’ ‘আরিফ’ আওয়াজ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি বন্ধু রাহাতের ভাবী টয়োটা করোলা গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আমাকে ডাকছে।গাড়ির পাশে যেতেই ভাবীর ইঙ্গিতে পাশের সিটে উঠে বসতেই এসির ঠান্ডা হাওয়া আর পারফিউমের ঘ্রানে যানজটের ক্লান্তি ভুলে গেলাম।
-এই ভর দুপুরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে ?
-বন্ধুর বাসায়।তা আপনি সাজুগুজু করে কোথায় যাচ্ছেন?
-আরে সাজুগুজু করলাম কোথায়?আগের মত সময় কি এখন আর আছে?প্রতিদিন সভা সেমিনার,আলোচনা অনুষ্টান একটা না একটা লেগেই আছে।আজ সে যে সাত সকালে বেরিয়েছে এখনো ব্যস্ত।সকাল থেকে ৩টি বিশেষ আলোচনা অনুষ্টানে যোগ দিয়ে এখন যাচ্ছি আরেক অনুষ্টানে।
মনে মনে বললাম সময় পাননা বলে এত মেকআপ আর সময় পেলে যে আপনার মুখে কয়েক সেন্টি মেকআপের আস্তর থাকত তাতে কোন সন্দেহ নেই।কিন্তু মুখে বললাম,আজ এত ব্যস্ত কেন?
-আরে তুমি জাননা আজ মা দি.. ভাবীর কথা শেষ হওয়ার আগেই ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজার গ্লাসে কয়েকটা টোকা দিল ছেঁড়া শাড়ি পরিহিতা ২৫-৩০বছর বয়সী এক মহিলা। কোলে ৩-৪বছরের একটি শিশু।মহিলা আরেকবার টোকা দিতেই ভাবী রেগে উঠে গ্লাস নামাতে নামাতে বলল,ফকিরনীগুলোর যন্ত্রনায় রাস্তা-ঘাটে চলা দায়;দেখলে কেমন করে গ্লাস নোংরা করে দিল।গ্লাস নামতেই ভিখারিনী মহিলা আকুতি করে বলল,‘আম্মা,কাইল রাইত থেইকা পোলাডা না খাইয়া আছে ।২টা টেহা দেননা আম্মা।
-খাওয়াতে পারবিনা জন্ম দিস কেন?
-আল্লায় দিলে কি করুম আম্মা।
বিষ খেয়ে মরতে পারিস না বলে অটো সুইচে চাপ দিয়ে ভাবী গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিল।অবাক বিষ্ময়ে কখন যে এসি গাড়ির শীতল হাওয়া থেকে বেরিয়ে এলাম টেরই পেলাম না।গাড়ির ভেতরের ঠান্ডা হাওয়ার চাইতে বাইরের গরম হাওয়াকে অনেক আপন মনে হল।
-আরে আরে তোমার কি হল ?নেমে গেলে কেন?
-ভাবী,গাড়িটা যদি আমার হত তাহলে ধাক্কা দিয়ে আপনাকে ফেলে দিয়ে মহিলাটিকে আর তার ক্ষুদার্ত্ব সন্তানটিকে শেরাটনে নিয়ে খাইয়ে আনতাম।সকাল থেকে যে মা দিবসের আলোচনা অনুষ্টানগুলোতে সস্তা বুলি আওড়িয়ে হাততালি পেয়ে মা দিবস উদ্ধার করার নেশায় মেতে আছেন অথচ একজন মা যখন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে ২টাকা চাইল আপনি বিষ খেয়ে মরার বুদ্ধি দিলেন!!গুষ্টি কিলায় আপনাদের তথাকথিত মা দিবসের।আমার কাছে প্রতিটি দিনই মায়ের জন্য।আপনি যান আপনার আলোচনায় অনুষ্টানে আর আমি যাচ্ছি শিশুটিকে খাইয়ে দিয়ে একজন মায়ের হাসি মাখা মুখ দেখতে বলে জোরে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
প্রিয় পাঠক,আসুন কোন রকম দিবসে বিশ্বাসী না হয়ে প্রতিদিনই সমাজের অগনিত মায়েদের মুখে হাসি ফোটায় নিজের সাধ্য দিয়ে।
(লেখাটি আজকের দৈনিক আমার দেশের ভিমরুলে প্রকাশিত।
Click This Link
লিখেছেন ভিমরুলের নিয়মিত লেখক সহ ব্লগার ডিজিটাল দুষ্ট ছেলে
Click This Link