এক সময় ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করলে দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ তাদের দেখতে আসতো।

কিন্তু এখন দিন বদলাইছে। আর সেই দিন বদলের ছোয়াটা শিক্ষাখাতেও কম প্রভাব ফেলে নি! এখন সমস্ত এ+/স্বর্ণমণ্ডিত এ+ দের ভীরে যেন ফেল করা ছেলে/মেয়ে গুলোরে খুজে ফেরা দায়! সবাই পাশ করুক তাতে কোন আপত্তি নাই। সবাই এ+ পাবে তাতেও কোন আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু এ+ দিয়ে কি হবে যদি না একটা ছাত্র তার সিলেবাস সম্পর্কে ভালমত জানতে পারে, শিখতে পারে?
বেশিরভাগ স্কুল-কলেজগুলোতে মানের শিক্ষা নেই। ভাল শিক্ষক নেই বা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাবে তারা কার্যকরী সৃজনশীলতার সাথে নিজেরাই অভ্যস্ত হতে পারছে না। আর বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কারণে ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো খাতা-কলমে আর সিগনেচারের শিকলেই আটকে আছে।বেশিরভাগ ছাত্রেরই ইংলিশের অবস্থা ভয়বহ খারাপ।

ইংলিশ মিডিয়ামের একটা ছেলেকে পড়ানোর সুবাদে ইংলিশ মিডিয়ামের আদ্যপ্রান্ত সম্পর্কে স্বল্প ধারণা লাভ করার সুযোগ মিলেছে আমার।সেখানে মুখস্তের কোন বালাই নাই। দরকারী সূত্র, পর্যায় সারণী(রসয়নের ক্ষেত্রে) এগুলো জন্য একটা ম্যানুয়ালই সরবরাহ করা হয় পরীক্ষার সময়।মাথায় কোন প্রকার চাপ ছাড়াই পরীক্ষার হলে যেতে পারে একজন শিক্ষার্থী। আর ওদের সিলেবাসও যথেষ্ট মানসম্মত।বুয়েটের ফার্স্ট ইয়ারের বেশ কিছু টপিক দেখলাম ওদের(শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগ) সিলেবাসে আছে।আর যন্ত্রপাতিও আছে পর্যাপ্ত। ছাত্ররা সবগুলো এক্সপেরিমেন্ট ল্যাবে নিজেরা হাতে করার সুযোগ পায়। তবে পরাশোনার খরচটা আকাশছোয়া। একবার পরীক্ষা দিতে আপনাকে গুনতে হবে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মত!
আমি বলছি না যে আমাদের বাংলা মিডিয়ামকে ইংলিশ মিডিয়ার বানিয়ে ফেলা হোক। তবে আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা কেন আন্তর্জাতিক স্ট্যান্টার্ড থেকে খুব বেশি বিচ্যুত হবে?
বাংলা মিডিয়ামে খাতা মুল্যায়নের ব্যাপারটাও প্রশ্নবিদ্ধ! এখানে কোন অংক উত্তরের সাথে না মিললেই কেটে শূণ্য(০) বসিয়ে দেয় স্যাররা।

সরকার কোচিং ব্যাবসা বন্ধে যে শুভ উদ্যোগ নিয়েছিল তার বাস্তবায়ন আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। নোট-গাইড নিষিদ্ধ করার চেষ্টাটাও হয়তো বৃথা। কারণ স্কুল-কলেজে গুলোতে যদি মান সম্মত ক্লাশের ব্যবস্থা করা যায় তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কোচিং-নোট-গাইড বন্ধ হবে।বুয়েট-মেডিকেল-ডি.ইউ-এস.এস.ইউ এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ে তারা কি কোথাও কোচিং করে? ভর্তি পরীক্ষার সময় করে যা পূর্বের অপসংস্কৃতির বৃথা চর্চা।
শিক্ষকরা যাতে শুধুমাত্র নিজের স্কুল/কলেজেই কার্যকরভাবে শিক্ষাদান করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটা প্রটৌকলের মধ্যে নিয়ে এসে নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।ছাত্রদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিতে হবে-তাদের কি কি সমস্যা তা জানতে।
কেন এদেশে একসময় “নকলে”র একক রাজ্যত্ব ছিল না? এখন নকল একটা রুপকথার গল্পের নাম।

“শুধু এ+ এর সংখ্যা বাড়লেই শিক্ষার মান বাড়ে” এই নিম্নমানের চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এ+ এর সংখ্যা বাড়ানোর আগে শিক্ষার মান বাড়ানো আজ সময়ের দাবী।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:৫৮