বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত আমাদের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাইতে গিয়া কইছেন “এটা অগ্রহণযোগ্য।” এটা শোনার পর আমি খুব বিরক্ত হইছি। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের উপরে না, আমার মেজাজ খারাপ হইছে যেই সাংবাদিক রিপোর্টটা করছে তার উপরে আর সেই সব একচোখা মানুষগুলার উপরে যারা এই রিপোর্ট দেখার পর মনে মনে “পাইছিরে” কইয়া ফিলিস্তিন আর ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের উপরে ঝাঁপায়া পড়ছেন।
বিরক্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত অ-রাষ্ট্রদূতসূলভ কোন কথাই বলেন নাই। তিনি একটা ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যে ভাষায় কথা বলা উচিৎ সে ভাষাতেই বলেছেন। তিনি যদি ভুল কিছু বলতেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মানুষজন আঙুল চুষেন না যে, দুইদিনেও এর শক্ত প্রতিবাদ করবেন না। ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের কোন ঠেকাও নাই, আর ফিলিস্তিনরে আমাদের ডরানোরও কিছু নাই। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুধুমাত্র বলেছেন, রাষ্ট্রদূতের মতামত অপ্রাসঙ্গিক। তাইলে সমস্যাটা কই হইলো?
একটা কথা আছে আপনার নিয়ত আপনার বুঝ ব্যবস্থা নির্ধারন করে। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত তো বাংলা জানে না, তবে তিনি একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার ভালই জানেন। সমস্যা হইলো যেই সাংবাদিক নিউজটা করছে, তার ইংরেজিতে বিদ্যার দৌড় বেশি না। আর তিনি ইংরেজি জানলেও তার অনুবাদ একটু ঘুরায়া করলে নিউজটা ভালো হয়। একই কথা যারা এই খবরে লাফায়া উইঠা ফিলিস্তিনরে ধুইতে শুরু করছেন তাদের বেলায়ও প্রযোজ্য। তারা শুধুমাত্র রিপোর্টটা শুনছেন। বাংলায়। তাদের বেলায়ও প্রবলেম হইলো তাদের নিয়ত। তাদের নিয়তের গ-গোলের কারণে তারা একটু যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজনও অনুভব করেন নাই। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের পিছে আঙুল দিতে শুরু করলেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার ইংরেজিতে কইছেন," It cannot be acceptable for us.” যার বাংলা হইলো, “এইটা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না।” খুব সুন্দর কূটনৈতিক ভাষা। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়া এইটারে বানাইছে, “এটা অগ্রহণযোগ্য,” ইংরেজি করলে যা দাঁড়ায়, “It is not acceptable,” যা তিনি কখনো বলেনই নাই। বাক্য দুইটা আপাত এক মনে হলেও এতে ভাবগত বিশাল ফারাক আছে। যারা অনুবাদের সাথে যুক্ত বা লেখালিখি করেন তারা ব্যাপারটা বুঝবেন।
আচ্ছা সাংবাদিক নাইলে ইংরেজি জানে না তাই এমনটা করছে, কিন্তু যারা এইটা নিয়া হাউকাউ করতাছে তারাও কি ইংরেজি জানে না? সমস্যা হইলো আমাদের নিয়তে। বাংলাদেশের মিডিয়া সংবাদটা ভালভাবে বেচার জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের ভাষাটারে একটু পরিবর্তন কইরা দিছে। আর পিছে আঙুল দেয়ার স্বভাব যেই মানুষগুলার তারা কোন বিচার বিবেচনার তোয়াক্কা না কইরা বেকুবের মতো ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতরে ধুয়ে দেয়ার চান্সটা মিস করতে চায় নাই। এইসব বিষয়ে ডিল করার আগে আমাদের বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিটা শিখতে হবে আর নিজেদের একদেশদর্শী মনোভাব পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের ভাষা বুঝার ও উপলব্ধি করার সামর্থ অর্জন করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫৬