(গল্পটি মূলত হাজার বছরের পুরোনো একটা উপকথা। ঈশপের গল্পের মতো। আমি স্রেফ অনুবাদ করেছি মাত্র।)
অনেক অনেক আগে, ১টি দ্বীপ ছিল যেখানে সব অনুভূতিগুলো একসাথে বাস করত। সুখ, দুঃখ, জ্ঞান, এমন আরো অনেকের সাথে প্রেমও বাস করত সেখানে। একদিন দ্বীপে বসবাসরত সকল অনুভূতিকে ঘোষণা করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শীঘ্রই এই দ্বীপটি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এই শুনে সবাই খুব দ্রুত নৌকা বানিয়ে ফেললো আর দ্বীপ ছাড়তে শুরু করলো শুধুমাত্র প্রেম ছাড়া। প্রেম ছিল একমাত্র ব্যক্তি যে দ্বীপে থেকে গেল। প্রেম টিকে থাকার শেষ সম্ভাবনাময় মুহুর্তটি পর্যন্ত থেকে যেতে চাইলো। যখন সে দেখল, প্রায় পুরো দ্বীপটি ডুবে গেছে, সে সাহায্য নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
খুব রাজকীয় একটা নৌকায় চড়ে প্রাচুর্য তখন প্রেমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। প্রেম তাকে বললো, “প্রাচুর্য, তুমি কি আমাকে তমার সাথে নিতে পারো?” প্রাচুর্য উত্তর দিলো, “দুঃখিত, আমি পারছিনা। আমার পুরো নৌকাটিই সোনা-রূপায় পুর্ণ। এখানে আর জায়গা নেই।”
প্রেম তখন সিদ্ধান্ত নিল সে অহমিকার কাছে আশ্রয় চাইবে, যে তখন খুব সুন্দর একটা নৌযানে চড়ে তার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। “এই অহমিকা, দয়া করে আমাকে সাহায্য কর!” “আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছিনা, প্রেম। তোমার সারা শরীর ভেজা। আমার নৌকাটাই নষ্ট হয়ে যাবে তুমি উঠলে।” অহমিকা চলে গেলো।
এমন সময় দুঃখ তার কাছ দিয়ে চলে যাচ্ছিল তাই প্রেম তাকে বললো, “দুঃখ, আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।” “হায় প্রেম, আমি আসলেই খুব দুখের ভেতর আছি। আমি নিজের সাথে নিজে একা থাকতে চাই!” সুখও পাশ দিয়ে গেলো, কিন্তু সে এতটাই সুখি ছিল যে, প্রেমের ডাকই তার কানে পৌঁছায়নি।
হঠাত কেউ একজন ডেকে উঠলো, “এস, প্রেম, আমি তোমাক আমার সঙ্গে নেবো।” তিনি ছিলেন এক বৃদ্ধ। প্রেম নিজের সৌভাগ্যে এতটাই আপ্লুত হয়ে উঠল যে, সে বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করতেই ভুলে গেলো- তারা কোথায় যাচ্ছে। যখন তারা শুষ্ক ভূমিতে এসে নামলো, বৃদ্ধ নিজের পথে চলে গেলো। তার প্রতি বৃদ্ধের এতো বড় মহানুভবতার কথা উপলব্ধি করে প্রেম আরেক বৃদ্ধ জ্ঞানের কাছে জানতে চাইলো, “কে এই ব্যক্তি যিনি আমাকে সাহায্য করেছেন?” “সে ছিল সময়,” জ্ঞান উত্তর দিলো। “সময়?” প্রেম জিজ্ঞাসা করল, “কিন্তু সময় কেন আমাকে সাহায্য করলো?”গভীর প্রজ্ঞায় জ্ঞান মুচকী হেসে উত্তর দিল, “একমাত্র সময়ই জানে প্রেমের মুল্য কতো!”
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:৪৮