ডাক্তার: দোস্ত, এই দেশের কোন উন্নতি হইব না। এই দেশ যারা চালায় তারা সবাই অমানুষ, দূর্নীতিবাজ,সন্ত্রাসীর মদতদাতা, জঙ্গী,বিদেশী শোষকদের এজেন্ট, একটা নাইকো গাড়ীর বিনিময় দেশকে বেচতে বিবেকে বাধে না।
প্রগ্রামার : হতে পারে, তবে আমরাও খুব বেশি ভাল না।
ডাক্তার : কি বলিস? আমাদের হাতে দেশ চালানোর ক্ষমতা দিলে দেশটাকেই বদলে দিতাম,দেশ থেকে অমানুষদের সরায়ে সোনার বাংলাদেশ বানাই দিতাম ।
প্রগ্রামার : হুম। হতে পারে... যাইহোক, তুইতো ইন্টার্নি করছিস। কিছুদিন পরেই পরিপূর্ণ ডাক্তার হবি। তুই তোর জায়গা থেকে দেশের জন্য অনেক কিছুই করতে পারবি।
ডাক্তার : সম্ভব না, কিছুই করা সম্ভব না। পুরা সিস্টেম টাই নষ্ট হয়ে গেছে। এই সিস্টেম-এ কিছুই করা যাবে না।
প্রগ্রামার : কেন?
ডাক্তার : যেমন ধর, আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে খ্যাপ মারতে যাই। কিছু ক্লিনিক আছে, যেখানে রোগীর কোন রোগ না থাকলেও নানাভাবে ক্লিনিকে আটকে রাখে। নানাভাবে টাকা বের করে রোগীর কাছ থেকে। এইসব ক্লিনিক গুলা চালায় আবার হর্তা-কর্তা ব্যক্তিরা। এদের বিরুদ্ধে কিছু করাও সম্ভব না।
প্রগ্রামার : এইসব ক্লিনিকে না গেলেইতো পারিস। তোদের মত সবাই এইসব ক্লিনিকগুলোতে সার্ভিস না দিলেইতো হয়।
ডাক্তার : আরেহ তা কি সম্ভব। ডাক্তারা তাহলে পেট চালাবে কি করে? ইন্টার্নি থেকে কিংবা সরকারী হাসপাতালে কাজ করে যা পাওয়া যায় তাতে কি এই বাজারে চলা সম্ভব?
প্রগ্রামার : দোস্ত, আমারতো মনেহয়, ডাক্তাররা কিছু না করে, জাস্ট গ্রামে গিয়ে ৫০টাকা ভিজিটে রোগী দেখলেও মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা কামাতে পারবে।
ডাক্তার : কি বলিস তুই? ৫-৬ বছর এত কষ্ট করে মেডিকেল-এ পড়লাম কি মাসে ২০হাজার টাকা কামাবো বলে? তারপর, গ্রামে থাকলে, আমার বাচ্চাকাচ্চারা ভাল স্কুল-কলেজ-এও পড়তে পারবে না।
প্রগ্রামার : কেন? ২০হাজার টাকাতে কেউ কি চাকরী করে না? কেউ কি গ্রামে থাকে না?
ডাক্তার : দোস্ত, এইসব নীতি কথা বলে লাভ নাই, বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমার সহপাঠীরা সবাই অনেক টাকা কামাবে, গাড়ী-বাড়ি করবে। আমি কি এসব তাকাইয়া তাকাইয়া দেখব?
প্রগ্রামার : হুম। তোকে তাহলে কিছু প্রশ্ন করি। আচ্ছা আমাদের দেশে একজন এমপি-র বেতন কত হবে?
ডাক্তার : কত আর? ৩০-৫০হাজার।
প্রগ্রামার : তুই জানিস, একজন এমপি যখন ইলেকশান-এ জিতে তখন কর্মীদের মিস্টি খাওয়াতেই তার লাখ খানেক টাকা যায়। তারপর এমপির ছেলেপুলেরাতো আর যেখানে সেখানে পড়ালিখা করতে পারে না। তারপর এমপির বউতো যে-সে জামাকাপড় পড়ে বের হতে পারে না। দামী শাড়ী-গহনা লাগবে। দামী গাড়ী লাগবে... তার স্ট্যাটাস বজায় রাখতে আরো নানা কিছু লাগবে তার... এখন এতো টাকা কিভাবে সে জোগাড় করবে? নিশ্চয়ই দূর্নীতি করে?
ডাক্তার : হা, কিন্তু তুই এসব কথা কেনো বলছিস ?
প্রগ্রামার : বললাম এই কারনে যে, তুই বলেছিস “এই দেশ যারা চালায় তারা সবাই অমানুষ, দূর্নীতিবাজ”. আমি শুধু বলতে চাই, তোর আর আমার মতো মানুষরাই দেশটা চালাচ্ছে। আমরা সুযোগ পেলেই অন্যের দোষ দেই, কিন্তু আমরা নিজেরাই দোষের উর্দ্ধে না। যে যার সুযোগ মতো স্বার্থস্বিদ্ধি করছে,কিন্তু দোষ দিচ্ছে সিস্টেমকে।
ডাক্তার : তুই উল্টা-পাল্টা তুলনা আনছিস... ...এমপি মিনিস্টারের সাথে কি সাধারন মানুষের তুলনা হয়? আর তুই বেতন বেশীর লোভে বছর শেষ হতে না হতে হঠাৎ হঠাৎ কোম্পানী বদলাও আর বিদেশে যাওয়ার ধন্ধায় আছো, উন্নত দেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্নো দেখো.......
প্রগ্রামার : তোর কথা মেনে নিলাম, এতে তো দেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না, দেশের দুর্নীতির সাথে তো আমরা কোনভাবেই জরিত হচ্ছি না ।
ডাক্তার : তুই ভালো করে জানিস সরকার আমাদের তৈরী করতে(ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার) কতো টাকা খরচ করছে । আর এই টাকা কোটি মানুষের ট্যাক্স থেকে,এমনকি রিক্সাওয়ালা/মেহনতী মানুষ টাকার অভাবে সকালে রুটি/বিস্কুট খায় সেখানে যে ট্যাক্স নেওয়া হয় তা দিয়ে আমাদের পড়ালেখার ব্যাবস্খা করেছে ।এই ঋন ভুলে গিয়ে স্বপ্নের পিছনে ছুটছো ,দেশ ও জাতীর কাছ থেকে দুরে সরে যাওয়ার ধান্ধা করছো , কিছু দিন পরে তুমি যে বাঙ্গালী ছিলে সেটাও অস্বীকার করবে !!
প্রগ্রামার : দোস্ত আসো আমরা তথাকথিত দেশপ্রেমিক না হয়ে আসল দেশপ্রেমিক হয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করি..
ডাক্তার : হ আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে আমাদের জায়গা থেকে কখনো কোন অনিয়ম করবো না এবং অনিয়ম হতে দেব না.......(সংগৃহীত ও সংযোজিত)..
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১০