somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মায়ের ভালবাসা
"মাঝে মাঝে শীতকেও অনুভব করতে হয়, না হলে শীতের পরের উষ্ণতা যে কতটা আরামদায়ক সেটা বোঝা যায় না।।" "দৃশ্যের বাইরেও এমন কিছু অদৃশ্য শক্তি থাকে যার জন্য একজন মানুষও অপরিচিত থেকে অতি আপন হতে পারে, হতে পারে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ।।"

অবশেষে পাওয়া (দ্যা কনক্লুসিভ উইনস অফ লাভ )

২৩ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে পাওয়া (The conclusive wins of Love)
-আলমগীর হোসেন ।

অপুর চতুর্থ বর্ষের প্রথম ক্লাস আজ শুরু । আকাশে মেঘের ছড়াছড়ি, যেকোন সময় নেমে আসবে বৃষ্টির ফোয়ারা । তড়িঘড়ি করে ভার্সিটি এর লাল দোতলা বাসে উঠে পড়ল অপু । বাসে উঠতেই শুরু হয়ে গেল অবিরাম ধারায় বৃষ্টি । বৃষ্টির তালেতালে বাস এসে থামল একেবারেই ভার্সিটি এর মেইন গেইটের সামনে । সেখানেই বৃষ্টিসিক্ত নীল রঙয়ের ছাতা মাথায় দাড়িয়ে আছে সহজ-সরল প্রকৃতির চেহারার একটি মেয়ে । এতোটা মায়া জড়িয়ে আছে ওই চেহারার যে, দেখেই অপুর ভেতরে কেমন একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা বলে বোঝানো যাবে না । অপু দেরি না করে কাগজ বের করে লেখেছে “রিমঝিম বৃষ্টি, সহজ-সরল প্রকৃতির চেহারা সাথে সুস্পষ্ট বিরক্তির ছাপ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে আপনাকে” আর ফেলে দিয়েছে ওই অপরিচিতার সামনে । মেয়েটি কাগজটিকে তার সামনে পড়তে দেখে তুলে নিয়ে কিছুক্ষন ভাবুক মনে তাকিয়ে থেকে রেখে দিল নীল রঙের ব্যাগের ভেতরে ।

প্রথম দেখাতেই অপু মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেছে কিনা জানে না, তবে ও ওই অপরিচিতার সাথে কথা বলবে । আর তাই প্রতিনিয়ত খুঁজে চলেছে ভার্সিটি এর প্রত্যেক প্রান্তে প্রান্তে । এভাবেই নিজের অজান্তে অপরিচিতার খোঁজে কেটে গেছে অনেক দিন । হঠাৎই একদিন আকাশের বুক চিরে নেমে এসেছে বৃষ্টির ধারা । সবুজের সমারোহে ঘেরা বৃষ্টিস্নাত বিশ্ববিদ্যালয় সেদিন ঈর্ষনীয় সৌন্দার্যে সেজেছে । মাঠে বেধে যাওয়া পানির উপরে দেখা যাচ্ছে দূর্বাঘাসের শাখা-প্রশাখাগুলো আনন্দচিত্তে ঝিরিঝিরি বাতাসে নৃত্তে মেতে আছে । দুপাশে ফুলগাছের সারি আর মাঝে পিচঢালা রাস্তা নিয়েছে এক অপরূপ । সবকিছু কেমন যেন বৃষ্টি পেয়ে আনন্দ প্রকাশে বিন্দুমাত্র কৃপণতা করছে না । এমনই সময়ে ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে অপু । প্রতিদিনের মতই রক্তিম চোখে খুঁজে চলেছে সেই অপরিচিতাকে । দূরত্ব যাইহোক অপুর দৃষ্টি সহসাই চলে যায় বৃষ্টিতে গাড় হওয়া লাল বাসের নিচে । আর সেখানেই প্রথম দেখায় মোনের আকোকে আশ্রিত সেই সহজ সরল প্রকৃতির চেহারার কাউকে দেখা যাচ্ছে । নিজের অজান্তেই কেন যেন আজ বুকের মাঝে ধুক- ধুকানি শুরু করেছে । প্রতিনিয়ত যাকে খুজেছে, দিনশেষে তাকে খুঁজে না পেলও এমন হয়নি । যতটা ওর দিকে আগাচ্ছে ধুক-ধুকানি যেন ততটা বেড়ে চলেছে । যে সুযোগ আজ অপু পেয়েছে সেটাকে ও হাতছাড়া করবে না । যেভাবেই হোক কথা বলতেই হবে । বুকে অনেকটা সাহস নিয়ে অপু এগিয়ে গেল ওর দিকে---
অপুঃ এইযে আপু-----
অপরিচিতাঃ জ্বি আমাকে বলছেন----!!!!
অপলক দৃষ্টিতে অপু তাকিয়ে আছে আর ভাবছে গাম্ভীর্যবিহীন সহজ-সরল চেহারার কোন মানুষ এতোটা মনোমুগ্ধকর হতে পারে ।
অপুঃ হ্যাঁ, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে ?
অপরিচিতাঃ জ্বি বলুন ।
অপুঃ আসলে আমি আপনাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজে চলেছি একটা কথা বলার জন্য ।
অপরিচিতাঃ কি কথা?
অপুঃ আপনি ঐশী নামে কাউকে চেনেন?
অপরিচিতাঃ না, কেন বলেন তো??
অপুঃ না ... আমি ঐশী নামে একজনকে চিনতাম যার সাথে আপনার চেহারার অনেক মিল । (যদিও অপু ঐশী নামে কাউকে চিনত না) ।
অপুর কথাগুলো শুনে ওর আর বুঝতে বাকি রইল না যে, এই সেই মানুষটা যে তাকে গেইট এর সামনে থাকা অবস্থায় কাগজে লেখে দিয়েছিল কিছু একটা ।
অপরিচিতাঃ আপনি অপু তাই না?
অপুঃ হ্যাঁ । আপনি কি করে জানেন ?
অপরিচিতাঃ একজন মানুষ প্রতিদিন কোন একজনের প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করবে আর সে জানবে না……!!!!
অপুঃ আপনার চেহারা অনেক সরল আর সরলের ভেতর দিয়ে কতটা সৌন্দার্য ফুটে ওঠে সেটা বলে বোঝাতে পারব না।
অপরিচিতাঃ আমাকে ডেকে কথা বলে আবার লজ্জা দিচ্ছেন কেমন হয়ে যাচ্ছে না ...? আর একথা তো একবার লিখেই দিয়েছেন ।
অপুঃ আচ্ছা আপনি অপরিচিতা মিথিলা কেন ?
অপরিচিতাঃ সবকিছু একদিনে না জানলে হবে না ?
অপরিচিতার মুখে যে লজ্জার অক্রমে আনন্দের ফোয়ারা ছুটছিল সেটা আর অপুর বুঝতে বাকি রইল না । বাস ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে । মিথিলা চলে গেল । জানা হল না ওর আসল নাম । অপুর মনে আজ আনন্দের জোয়ার বইছে । এতদিন যার খোঁজ করে আসছে আজ তার সাথে দেখা হয়েছে এবং কথাও হয়েছে ।
দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে । আজ আর ভয় কিসের । নোটিফিকেশন বক্স এর দিকে চাতকের মত চেয়ে আছে অপু। অপরিচিতা শুধু রেকুয়েস্ট অ্যাকছেপ্টই করে নি, লেখে দিয়েছে কি করছিলেন ...?
অপুঃ অপেক্ষা । আচ্ছা অপরিচিতা মিথিলা কেন বললেন নাতো-----
অপরিচিতাঃ ইচ্ছা হয়েছিল তাই নাম দিয়েছিলাম । আর নাম জেনেও কি হবে---সবাই কেন এক নামেই মানুষকে চিনবে—আপনি অন্য নামে চিনুন না---
অপুঃ তাহলে আপনাকে আমি অমি বলি---
অপরিচিতাঃ অমি কেন ?
অপুঃ অপরিচিতা মিথিলা থেকে অমি ।
অপরিচিতাঃ আপনি তো দেখি মানুষের খুব সুন্দর নামও দিতে পারেন ।
অপুঃ কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা বলি ?
অমিঃ কি কথা ?
অপুঃ আমরা কি কাল দেখা করতে পারি ?
অমিঃ আপনি আমাকে আপনি করে না বলে তুমি করে বললে আমি খুশি হব । কোথায় দেখা হবে আমাদের ?
অপুঃ গন্ধরাজ বাগানের পাশে যেখানে অদৃশ্যে থেকে ওরা কিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই সুবাস বিলিয়ে যায় ।
পরদিন অপু আটটি নতুন ফোঁটা বকুল ফুল নিয়ে অমির সাথে দেখা করেছে ।
অমিঃ আপনি তো সুন্দর লেখালেখি করেন ।
অপুঃ পড়েছ তুমি ?
আমিঃ হুম ।
আপুঃ অনেক ধন্যবাদ । আচ্ছা অমি, কেউ যদি তোমার সৌন্দার্য তোমার কাছ থেকে অবলোকন করে তোমাকে তার লেখনির উপকরণ করতে চাই তাহলে তাকে সেই অধিকার দেবে ?
অমিঃ ভেবে দেখতে হবে ।
আপু আজ ফেসবুকে পোস্ট করেছে “ভালবাসা এমনই এক অপরিসীম শক্তির নাম যার জন্য অপরিচিত একজন মানুষ হয়ে যায় অতি পরিচিত, হয়ে যায় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ” । আর রাতে বসে বসে না ঘুমিয়ে রচনা করেছে অমিকে নিয়ে “আমার হৃদয়েশ্বরী” নামে কবিতা, পাঠিয়েও দিয়েছে অমিকে ।
হঠাৎ পরিচয়, কিন্তু আজ
জলন্ত শিশিরবিন্দু হতে সুর্যডোবা গোধূলি পর্যন্ত
আমি তোমায় খুঁজে ফিরি ।
আমি লালন করি তোমার অস্তিত্বকে
অনুষ্ণ, উষ্ণ প্রতিদিন পুরোটা রজনীতে ।

কোকিলীয় আবেগী কন্ঠে যখন ভেসে আসে
তোমার ভালবাসার অনুনয় ---
আমি না, থাকি না তখন এ ব্রহ্মাণ্ডে
ভেসে বেড়ায় মুক্তমনার মত তোমার ভুবনে ।
কি এমন মোহিনীশক্তিতে আবদ্ধ করেছো শুনি !!!
আমার যে সবকিছু এখন শুধুই তুমি ।

ওগো – প্রণয়িনী
কি আছে তোমার ওই যাদুমাখা ঠোঁটে...!!!!
আমার যে ইচ্ছে করে সারাক্ষণ আলতো ছোয়ায় স্পর্শ করতে ।
দিব মালিকানা তোমায়, আমার এই মর্মদেশের
যতন করে রেখো তুমি, তোমার মত করে ।

নিরন্তর সময়ে তোমায় নিয়ে লালন করা ভালবাসায়
আমি যে খুঁজে পায় সুখের ঠিকানা ।
রাখব তোমায় আমার চিত্তের সেই মনিকোঠায়
যেখানে তুমি, আমি হব একাকার
শক্তি নিয়ে আমাদের ভালবাসার ।

একবারও ভেবেছো কী ?
সেদিন ছিলে অপরিচিতা---
আজ তুমি আমার হৃদয়ের হৃদয়েশ্বরী ।

এমন কবিতা অমিকে নিয়ে কেউ লিখতে পারে সেটা ও কখনও ভাবেনি । ওর যেন মনে হচ্ছিল ও পৃথিবীর একমাত্র সুখী মানুষ । অভিনন্দন জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল কারন ও কবিতা অনেক ভালবাসে । আর যে কবিতাটা ওকে নিয়েই রচনা করা হয়েছে । খুশিতে ও আজ যেন গদগদ । প্রায় একশটা ধন্যবাদ এর সাথে কয়েকটা গোলাপের স্টিকার দিয়ে মেসেজ করে দিয়েছে অমি ।

মাঝে মাঝে দেখা আর ফেইচবুকে কথা এভাবেই চলে যাচ্ছে অপু-অমির দিন ।
কিছুদিন পর হঠাৎই অমি লেখেছে----
শুনেছি যারা লেখালিখি করে তারা নাকি অনেক সুরেলাও হয় । আমি কি বলতে চাইছি আপনি অবশ্যই বুঝেছেন । কারণ আমি জানি আপনি অনেক মেধাবী একজন মানুষ ।
গান শুনতে চাইছো তাইনা ?
একি আপনি তো দেখি আমার মনকেও পড়তে শুরু করেছেন ।
পুরোটা সময় যে মস্তিস্কের সবটিকু জায়গা দখল করে থাকে তার কথা শুনলেও তো অনেক কিছু বোঝা যায় ।
নিজে নিজে সবাই গান গায় । অপুও গেয়েছে কিন্তু কাউকে কোনদিন শুনাইনি ।
অপুঃ সুরের ভুবনে আমি এখনও নবীন পথচারী । সুতরাং তোমার মনের মত করে যদি আমি গান না শুনাতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাকে ক্ষমা করে দিতে হবে । বল কি গান শুনবে ?
অমিঃ আপনার ইচ্ছা তবে বিশেষ কিছু হলে ভাল, যেটা সবার থেকে আলাদা, কারণ আমি চাই আপনার সবকিছু সবার থেকে আলাদা হোক ।
অমির ইচ্ছা পুরন করতেই অপু আজ গান শুরু করেছে ।

দূর থেকে দেখা …
দূর থেকে দেখা
পানি বিহীন ওই সমুদ্র---
আমি ভরেছি আমার ভালবাসায়
শুধু যে তোমার জন্য
আমি ভরেছি আমার ভালবাসায়
শুধু যে তোমার জন্য
আহা-হা-হা-হা-হা
আমি ভালবাসি তোমায়
আমি ভালবাসি তোমায় ---------------------------
এ সুর আর কথার গান অমি আগে কখনও শোনে নি । ওর বুঝতে বাকি রইল না যে অপু অমির জন্যই এই গান রচনা করে নিজেই সুর করেছে ।
অমিঃ এক কথায় অসাধারণ ।
অপুঃ তোমাকে ঘিরেই তো আমার সব কিছু । আর তোমার জন্য এই গানটি ছোট্ট একটা উপহার । অমি-অপু হয়তো একদিন থাকবে না এই পৃথিবীতে, কিন্তু অমিকে নিয়ে অপুর রচনা করা গানটি আজীবন থেকে যাবে এই বিশ্বসংসারে ।
অমিঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । আপনার মত একজন মানুষ পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত ।
আজ অনেক খুশি অমি । তাইতো কিছুক্ষণ পরে সাজুগুজু করে অনেকগুলো ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে অপুর কাছে । অপু লিখে দিয়েছে “আজ আমি আকাশকে বলে দিব ও যেন প্রদীপ না জ্বেলে, বাতাসকে বলে দিব ও যেন নয়ন না খোলে । আমার পাখি আজ যে অপরূপ সৌন্দার্যে সেজেছে তাতে লজ্জা ওকে ছেয়ে ধরতে পারে ।

ঈদের ছুটি হয়েছে,অমি অনেক আগেই বাড়িতে চলে গেছে । ঈদের কয়েকদিন আগে অপু বাড়ি পৌঁছেছে । বাড়িতেও আজ মেঘের ঘনঘটা । বৃষ্টি এসে গেছে । বৃষ্টিতে সিক্ত হচ্ছে উষ্ণ মাটির বুক । বৃষ্টি পেয়ে আনন্দচিত্তে কদম তার সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে আর দেখতেও অসাধারণ লাগছে । অপু যে ওর রঙ্গিন পৃথিবীর চারিপাশে গাছগাছালির ভেতর ছোট্ট একটা ঘর বাধবে আর সেই ঘরের উত্তরের জানালার পাশে রোপন করবে সারিসারি কদমের গাছ । বর্ষায় সিক্ত কদমের সৌন্দার্য অমি পাশে থাকলে নিশ্চয় হাজারগুন বেড়ে যাবে । এরকম ভাবতে ভাবতে আর অমিকে অনুভব করতে করতেই নতুন এক সপ্নজগতে বিচরন করতে থাকে অপু ।

যেই অনুভূতির নাম ভালবাসা সেটা কখনও বলে বোঝানো সম্ভব না । এ যে এক অদৃশ্য শক্তির মায়াজালে বাধা পড়েছে অপু যার জন্য সম্পূর্ণ অপরিচিতা থেকে অমি এমনই একজনে রূপান্তরিত হয়েছে যে অমি এখন অপুর রঙ্গিন পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ । অপরিচিতা থেকে অমিই এখন অপুর জীবনের ধ্যান-জ্ঞান, সবকিছু । সব চিন্তা চেতনা অমিকে ঘিরেই । অমি নিয়ে ও আজ আবার কবিতা লিখতে শুরু করেছে । এমন সময় অমি আপুকে মেসেজ দিয়েছে কি করছেন???
অপুঃ কি করছি সেটা তো তোমাকে বলবো না!!!!
অমিঃ না, না বলুন না প্লীজ !!!
অপুঃ তোমার জন্য একটা উপহার আছে...।
অমিঃ কি উপহার???
আমি ভাবছি তোমায়
সময় তার নিজের গতিতেই পার হচ্ছে---
তোমায় দেখার তৃষ্ণাও যে আমার বাড়ছে……

মায়াবী ঐ দুটি চোখ তোমার
ভালবাসাময় বেগুনী ঠোঁট...
সমান তালে ছড়িয়ে যাচ্ছে ওরা ওদের আবেদন
প্রতিটা দিনই মুগ্ধ হচ্ছি আমি
দৃশ্যের বাইরের তোমার কিছু অদৃশ্য শক্তি দ্বারা...
ভালবেসেছি তোমায়, অনেক ভালবাসি ।

এই তুমি বলতো -
এরকম কেন হয়...
যেদিকে তাকায় আমি দেখিযে তোমায়
ক্লান্ত সময় চাইযে তোমার উপস্থিতি
ভালবেসেছি তোমায় আমি, আরো ভালবাসতে চায়...
আমি ভাবছি তোমায়, হ্যাঁ আমি এখনও তোমায় ভাবছি ..
আজ ও নতুন এ কবিতা শুনে অসম্ভব এক ভালোলাগা তিরী হয়েছে অমির মনে । আজ ও আভিবাদন জানানোর ভাষাটাও যে হারিয়ে ফেলেছে । ।
এভাবে ভালই চলছিল অমি-অপুর রসায়ন । ওরা যেন একটা রঙ্গীন জগত তৈরী করে ফেলেছে যেই রাজ্যের একমাত্র রাজা অপু আর একমাত্র রাণী অমি । আশেপাশের সবকিছুকে ছাড়িয়ে ওদের মায়ার বন্ধনে মাধুর্য যেন দিনদিন বেড়েই চলছিল ।
চতুর্থ বর্ষের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে অমি । নামের পাশে জমা হয়েছে থিসিস এবং কয়েকটা প্রোজেক্ট । দিনে ক্যাম্পাস, সন্ধা থেকে রাত্রি অবধি টিউশনি আর বাসায় ফিরে সবকিছুর চাপ অপুর কাছে দিন যেন এখন ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার হলে ভাল হয় । ব্যস্ত অপু এখন আর আগের মত ওতটা সময় অমিকে দিতে পারছে না । দিনে দু-একবার কথা আর মাঝে মাঝে ফেইচবুকে এস. এম. এস. । এভাবেই দিন পার হচ্ছে ওদের । দিনে-দিনে অমি বুঝতে পারছে অপু আর আগের মত ওর সাথে কথা বলছে না । অনেকটা একাকিই দিন পার করছে ও । অমি এখন তার পাশের মানুষগুলোকে দেখছে । যারা ভালবাসার মানুষটি, যার সাথে ঘর বেধে আজীবন কাটিয়ে দেবে তারা কতটা রঙ্গীন সময় পার করছে । অমি কথা বলবে অপুর সাথে, এরকম তার আর ভাল লাগছে না । দিনশেষে ক্লান্ত অপুর কাছে অমির কল এসেছে । অপুও অমির আবেগকে বুঝতে না পেরে উল্টাপাল্টা কথা বলেছে । অমি রাগে-অভিমানে কল কেটে দিয়েছে । অপুকে একটা কথা খুবই আলোড়িত করছে সেটা হল, যাকে আমি এতো ভালবাসি সে কেন আমার পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা না করে আমাকে অবিশ্বাস করে অন্য মানুষের সাথে তুলনা করবে । বিন্দুমাত্র অনবশিষ্ঠ্য বিশ্বাসে যদি একদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তাহলে বিশ্বাস বিহীন ভালবাসা সে তো এক ক্ষণস্থায়ী মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই না । কষ্টের তীব্রতা এতোটা বেড়েছে যে ও আজ পোস্ট করেছে “যোগ্যতার তুলনায় অর্জিত সম্পদকে বিবেচনা না করে মানুষ নিজেকে উৎসর্গ করলেও অহংকারকে বেধে রাখে আজীবন” । অভিমানী অমি তার আভিমানকে এতটাই বাড়িয়েছে যে অপুর দেওয়া কলের অপেক্ষা করেছে কিন্তু অপুকে কল দেইনি । এভাবেই কেটে গেছে কয়েকটা দিন । প্রকৃতির কি নিয়ম এর মাঝে অমির বাড়ি থেকে কল এসেছে তারা অমির জন্য ছেলে দেখেছে । অমি তার অভিমানকে এতোটা প্রসিদ্ধ করেছে যে কোন কিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দিয়েছে । কষ্টের তীব্রতা এতোটা বেড়েছে যে অপু আর সহ্য করতে না পেরে অমিকে কল দিয়েছে । কল রিসিভ হতেই ও পাশ থেকে শোনা যাচ্ছে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আপনি আমাকে কল না দিলে আমি অনেক খুশি হব । অভিমান থেকে এখন রাগটা মনে হয় আরও বেড়ে গেছে অপুর । ও শুধু বলেছে আবেগের বশীভূত হয়ে এখন তুমি যেটা করবে সেটা ভুল আর এখনের একটা ভুল হতে পারে সারা জীবনের কান্না । যা করবে অবশ্যই ভেবে করবে । ভালো থেক । আর হ্যাঁ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা নয় প্রতিক্ষা করব ।

এভাবেই কেটে যাচ্ছে প্রেমহীন, আপন হওয়া অপরিচিতা অমি বিহীন অপুর জীবন ।
যেই মায়াবী হাসিতে সকলে মুগ্ধ হয়ে যেত, সেই হাসিই অপুর মুখে আর দেখা যায় না । ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্তগুলো যেন বিষাদে রূপান্তরিত হয়েছে । এমন কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত যেগুলো জীবনে একবারের বেশি আসবে না জেনেও, সেগুলোর মাঝে বিন্দু পরিমান সুখ খুঁজে পায় না অপু । পাখি হয়ে উড়তে চেয়েছিল যেই পৃথিবীতে সেই পৃথিবীই আজ অপুর কাছে কারাগার বিবেচিত হচ্ছে । এ যেন প্রদীপ জ্বেলে কারো জন্য অপেক্ষা করে হাজার বছর পার করে সে আসার আগেই প্রদীপকে নিভিয়ে ফেলা ।

সময় চলে যেতে থাকে, দিন থেকে মাস । এভাবেই লুকানো কষ্ট আর অমিকে পাওয়ার আশা নিয়েই শেষ হয়ে যায় অপুর বি. এস. সি. ইঞ্জিনিয়ারিং । কিছুদিনের ভেতর ভালো একটা চাকরিও পেয়ে যায় অপু । এখন দিনগুলো ব্যস্ত পার হলেও নিঃশব্দ রজনীতে পুরো মাথাটা দখল করে নেয় অমি । এভাবেই চলে গেছে অনেকগুলো মাস ।

আজ ২৫ এপ্রিল । আজ অপুর বিয়ে । হ্যাঁ, আসল নাম না জানা সেই অমির সাথেই । ভাবছেন কিভাবে এটা সম্ভব তাই না ?
কয়েকদিন আগে অপুর মোবাইলে একটা এস. এম. এস. এসেছিল যদি সত্যিই আমার জন্য প্রতিক্ষা করে থাকেন আর আমাকে ভালবেসেই থাকেন তাহলে আমার পরিবারের সাথে কথা বলে ২৫ এপ্রিল-ই বিয়ের তারিখ ঠিক করুন । আর একটা অনুরোধ থাকবে আপনার কাছে, আপনি বিগত দিনের কোন কিছু আমার কাছে জানতে চাইবেন না, শুধু এততুকু জেনে রাখুন সেদিন আমার বিয়ে হয় নাই । অমির সেই আগের নাম্বার থেকেই এস এম এস এসেছিল, ভাষা ছিল পরিচিত, লেখার ধরন ছিল সেই আপরিচিতার মতই । পিপাসিত অপুর মনে আজ শান্তির ফোয়ারা ছুটছে নাকি কোন প্রভাব পড়ছে না সেটাও বুঝতে পারছে না । শুধু মনে হচ্ছে “সেই অভিমানটাই প্রিয়জনের উপর করা উচিত যার জন্য প্রিয়জন প্রিয় থেকে অধিক অধিক আপন হতে পারে । সামান্য কিছু ভুল যদি কারো চোখের কান্নার জন্য দ্বায়ী হয় তাহলে সেই ভুলগুলো না করলেই তো সুখের ক্ষণস্থায়ী জীবনগুলো তৃপ্তিতে ভরে ওঠে” ।

কল্পনায়ঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।




ছবি: যুগান্তর পত্রিকা
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:২৫
০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×