বিষন্ন সন্ধ্যার বিষন্ন বৃষ্টি দেখতে দেখতে মনটাও বিষন্ন । বৃষ্টির আঁচ ভিজিয়ে দিচ্ছে। বাইরে ভিজছে গোটা শহর। ভিজছে দালানকোঠা। বৃষ্টির জলে ভেসে যায় মৃত শালিকের পালক। সুখের জলে ভেজে দূর্বাঘাস, দেবদারুর পাতার শরীর বর্ষার জলে স্নান করে। ল্যাম্পপোষ্টের ওপরে ভিজছে নিঃসঙ্গ কাকটাও। কী আশ্চার্য কাকটিও একা, ঠিক যেন আমার মতো। হায়, তবুও এখন আমার কাক ভেজা হয় না।
ঘোরলাগা চোখে চেয়ে দেখি সামনে, সুমনাও ভিজছে। বৃষ্টি ওর কত প্রিয়। আজ সেই মেয়ে ভিজছে ঠিক আমার চোখের সামনে। কত সুখেই মেয়েটি বৃষ্টির জলে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। একসময় এগিয়ে আসে আমার দিকে। হাত বাড়িয়ে ডাকে, ‘আসো দু’জনে এক সাথে ভিজি।’ সুমনার আহবানে খুশিতে নেচে ওঠে মন। উঠে দাড়াই, পা বাড়াতে আর এক সেকেন্ড মাত্র।
আজকের ঝলজলের রাতেও ঘরের জানালা খুলে রাখি। যদি সুমনার ভুল করে চলে আসে আমার ঘরের দরজায়। রাতে যদি ভিজতে ভিজতে এসে বলে, ‘এই দরজা খোলো। আমি এসেছি।’ তারপর ভিতরে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে যদি বলে, ‘কই তোয়ালে দাও।’ তখন আমি ওর কোন কথাই শুনবো না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকব। আমার কত প্রিয় ওর দীঘল কালো চুলগুলো। দেখো, কীভাবে না বৃষ্টির জল মিশে রয়েছে। অবিশ্বাস্য সুন্দর ওই মুখে বৃষ্টির আঁচড়। আহা কী সৌভাগ্য বৃষ্টির, এমন ভাবে তো আমিও মিশে থাকতে পারতাম না। যদি আবার জন্মনি, তবে বৃষ্টি হব। তুমি কি আর রাজী হবে হাত ধরে দুপুর রোদে পুড়তে, বৃষ্টিতে শালিকভেজা ভিজতে, শেফালীর ঝরে পড়া দেখতে? জীবন-মনের আলভাঙ্গা সমুদ্রের কালো বেদনার এ ছন্নছাড়া বৃষ্টি আমার বুকের গভীরে।
তুমি আমার মেঘ বালিকা। তুমিতো মেঘের দেশেই থাক। এই পোড়া চোখের সামনে যখন-তখন তুমি আসো। আসো-কথা বলো, কথা বলি। আবার নিমিষে কোথায় তুমি হারিয়ে যাও, খুঁজে পাই না। আকাশের মেঘপরী হয়ে যাও তুমি তখন। মেঘের শাড়ি পরা মেয়ে, যার ভিতর-বাহিরে শূন্য।