অন্তর ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশটাকে দেখছিলো। কত বিশাল এই আকাশ। সাথে বৈশাখের গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না। এরকম রাতে কেন জানি অন্তরের ভিতরকার কষ্টগুলো জেগে উঠে। মনে পড়ে যায় অনেক দিন আগের কথা...
চাইনীজ রেস্টুরেন্ট। চারজনের একটি পরিবার। বাবা-মা, আর দুই ভাই। ছোট্ট ছেলেটি বেশি দুষ্টু, সে বারবার তার বাবার হাত ধরে টানাটানি করছে। সবাই খাবার আসার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আজ বাবা একটু বেশি গম্ভীর। ছোট্ট ছেলে অন্তর তাই তার বাবার হাত ধরে টানাটানি করছিলো আর বলছিলো, বাবা, গল্প বল, চুপ করে আছো কেন? অন্যদিনে বাবা খুব গল্প করেন। আজ কেন জানি চুপচাপ বসে সবার দিকে নীরবে তাকিয়ে আছেন।অন্তর বুঝতেই পারছে না, আজ বাবা কেন এত চুপচাপ। অবশ্য পরিবারের কেউ ই বুঝতে পারছে না, আজ কেন সবচাইতে হাসিখুশি মানুষটি চুপচাপ।
খাবার এল। এইবার পরিবারের প্রধান ব্যক্তি মুখ খুললেন। বললেন, অন্তর, নাও, শুরু কর। তারপর আবার নীরবতা। সবাই নীরবে খেয়ে চলল। খাওয়া যখন প্রায় শেষের দিকে, বাবা অস্ফুট কন্ঠে বললেন, আজকের পর আর কখনো আমাদের এইভাবে একসাথে খাওয়া হবে না।
সবাই অবাক হয়ে তাকাল। অন্তর বুঝতেই পারল না, বাবা কেন এই কথা বলছেন...।
অন্তরের সত্যি আর বাবার সাথে বসে খাওয়া হ্য়নি। আকষ্মিক ভাবে বাবা ঐ রাতের পর বাসা ছেড়ে চলে যান। সেদিন অন্তরের মা'র কি কান্না। অন্তর পরে বুঝেছিলো,ওর বাবা তার অফিসের এক কলিগকে বিয়ে করে চলে গিয়েছিলো। তারপর মাঝে মাঝে বাবা বাসায় এসে কেবল মাসিক খরচের জন্য কিছু টাকা অন্তরের মা'র হাতে দিয়ে চলে যায়। অন্তর আর কখনই তার বাবার সাথে কথা বলেনি। আসলে খুব চেনা মানুষ হঠাৎ অচেনা হয়ে গেলে কি আর তার সাথে কথা বলা যায়? যার কষ্ট, কেবল সে ই তা বোঝে।
অন্তর...।
অন্তর ওর মা'র ডাকে সম্বিত ফিরে পেল।
তাড়াতাড়ি ও নিচে চলে গেল।
-অন্তর, তোর ফোন।
অন্তর ফোনের রিসিভার তুলে নিল।
-হ্যালো..
- অন্তর, আমি আনন্দ। আমাকে চিনতে পেরেছ?
অন্তর একটু অবাক হল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক কুইজ অনুস্ঠানে আনন্দের সাথে পরিচয়। তারপর ার যোগাযোগ হয়নি। অবশ্য অন্তরের কাছে আনন্দর ফোন নম্বর ছিলো না। আনন্দকে সে তার ফোন নম্বর লিখে দিয়েছিলো, কিন্তু আনন্দ কখনও ফোন করেনি। অন্তর পরে জানতে পেরেছিলো, আনন্দ মেয়েদের সেকশনের ফার্ষ্ট গার্ল। অন্তর ভেবেছিল, এ জন্য হয়ত আনন্দ তাকে ফোন দেয়নি। তাছাড়া অন্তর এখন আর তত ভালো রেজাল্ট ও করে না। যদিও আগে ও খুব ভালো রেজাল্ট করত। কিন্তু, ঐ ঘটনার পর ও ইচ্ছা করে আর ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করে না।
কি কারণে আনন্দ এতদিন পর ফোন দিতে পারে, অন্তর ভাবতে ভাবতে উত্তর দিলো।
- হুম.. কেমন আছো?
-ভালো। কি করছিলে?
-জ্যোৎস্না দেখছিলাম।
-তুমিতো দেখি কবি..
-নাহ্। আমি কবি না। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি আকাশ দেখি। আজ তো পুর্ণিমা।
- তুমি কি পুর্ণিমা দেখ সবসময়?
-না। তবে আজ বছরের সবচেয়ে সুন্দর পুর্ণিমা। বৈশাখের পুর্ণিমা বছরের সবচেয়ে সুন্দর পুর্ণিমা। তুমি বাইরে গিয়ে দেখ, তোমার বাসা থেকে আকাশ দেখা যায় তো? নাকি বিশেষ কারো সাথে পুর্ণিমা দেখবে বলে এখন দেখ না। নাকি পড়তে পড়তে সময় পাও না?
- আমার বাসা থেকে আকাশ দেখা যায়। কিন্তু কখনো দেখি না। আসলে মনে থাকে না। তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা?
অন্তর একটু হাসলো। বললো-
- আমিতো তোমার মত ভালো স্টুডেন্ট না। পড়াশোনা করি না।
- পড়াশোনা কর না কেন? সামনের বার তো এস এস সি পরীক্ষা। ভালো করতে হবে না? জি পি এ সিস্টেম চালু হবার পর তো গত দু'বছর আমাদের স্কুল থেকে কেউ জি পি এ ৫ পায় নি। এবার তো স্যারেরা আমাদের উপর অনেক আস্থা রেখেছেন।
-আমাকে দিয়ে ওসব হবে না। তুমি ভালো স্টুডেন্ট, তুমি চেষ্টা কর।
- শোনো, চেষ্টা করলে যে কেউ ভালো করতে পারে। তুমি ও পারবা। চল, আমরা সেই কুইজ প্রোগ্রামের মত একসাথে ভালো করার চেষ্টা করি।
- আরে ধুর!!
- না শোনো, ফার্ষ্ট টার্ম পরীক্ষার পর আমরা কয়েকজন সোহেল স্যারের কাছে ইংলিশ পড়ব। তুমিও আমাদের সাথে আস। এইটা স্পেশাল ব্যাচ। তবে ২/১ দিনের ভেতর নাম লিখাতে হবে। তুমি চলে আস। তোমার সাথে দেখা ও হবে। আমি তোমাকে এই জন্য ফোন করেছিলাম। আর এই ব্যাচে আমরা কয়েকজন ভালো ফ্রেন্ড ছাড়া আর কেউ থাকবে না।
- হুম.. দেখি।
- দেখি টেখি না। চলে আসো। বাইরের স্টুডেন্টরা এই ব্যাচে থাকবে না। আমাদের জন্য ভালো হবে।
-আচ্ছা, ঠিক আছে। দেখি।
-আমি তোমাকে মাঝে মাঝে ফোন করে খবর নিব, কেমন পড়াশোনা করছো? আমি যদি ফোন করি, তোমার বাসায় কোনো প্রবলেম হবে?
-নাহ্। তুমি যখন খুশি ফোন করো।
-আচ্ছা, ঠিক আছে, এখন আমি রাখছি। পরে কথা হবে, কেমন?
-আচ্ছা, ঠিক আছে, খোদা হাফেজ।
(চলবে....)
প্রথম কিস্তি এইখানে...
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


