somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রজব মাস করণীয় ও বর্জনীয়

০২ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন রজব মাস চলছে। হিজরি ১২ মাসের মধ্যে এটি সপ্তম। তবে এ মাসটি কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। এর বিশেষত্ব নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়Ñ পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চারটি মাসকে ‘হারাম’ মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হারাম মাস অর্থ হচ্ছে সম্মানিত মাস। এ চারটি মাসের মধ্যে রজবও একটি। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এই মাসসমূহে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না’ (সূরা তওবা : ৩৪)। বুখারি শরিফে রাসূলুল্লাহ সা: এ চারটি মাসকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বার মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক, যথাÑ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম আর চতুর্থটি রজব, যা জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী।’ হাদিসটি হজরত আবু বাকরা রা: বর্ণনা করেছেন। (হাদিস নং ৪৬৬২)

অন্য মাসগুলোর তুলনায় যেহেতু এ মাস চারটিকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে, তাই আমাদেরও কর্তব্য এ মাসগুলোতে নিজেদের আমলের প্রতি বিশেষভাবে যতœবান হওয়া। ফরজ ইবাদতগুলো যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে নফল ইবাদতেও অধিক গুরুত্ব দেয়া। কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, রোজা ইত্যাদি আমল বেশি বেশি করা যেতে পারে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, কোনো মাস দিন বা রাতকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সম্মানিত হিসেবে ঘোষণা করার অর্থ এ নয়, এতে কোনো না কোনো বিশেষ ইবাদত অবশ্যই থাকতে হবে; বিশেষ ধরনের নামাজ থাকতে হবে; নির্দিষ্ট সংখ্যক কোনো তাসবিহ থাকতে হবে। যেমনÑ সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে শুক্রবার দিন এবং এর পূর্ববর্তী রাতটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। কিন্তু অন্যান্য রাত বাদ দিয়ে শুধুই এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া কিংবা অন্যান্য দিন বাদ দিয়ে শুধুই শুক্রবারে নফল রোজা রাখতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি রজব মাসসহ এ চারটি মাস আল্লাহর পক্ষ থেকেই সম্মানিত। কিন্তু এ রজব মাসে কুরআন ও হাদিসে কোনো বিশেষ ইবাদত কিংবা নির্দিষ্ট সংখ্যক বা ধরনের নামাজের কথা বলা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সা:, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িনÑ তাঁরা কেউই এ মাসে এমন কোনো বিশেষ আমল করেননি কিংবা কোনো বিশেষ আমল করতে বলেননি।

রজব মাসের কথা উঠলেই আরেকটি বিষয় আমাদের সামনে চলে আসে। তা হচ্ছে, শবে মেরাজ। এ কথাটি বহুল প্রচলিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস যান। সেখান থেকে সাত আকাশ পাড়ি দিয়ে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে যান এবং সে রাতেই আবার মক্কায় ফিরে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন তাঁর উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক উপহারÑ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এ ঘটনাটিকেই আমরা মেরাজ বলে থাকি। এ রাত উদযাপন নিয়েও আমাদের সমাজে যে প্রচলন আছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। কেউ কেউ তো এ রাতে ওরস, গানবাদ্য ইত্যাদি জঘন্য কাজের আয়োজনও করে থাকে, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এমনকি এ রাতে কিংবা এ মাসেরই অন্য কোনো রাতে মেরাজ হয়েছিল কি নাÑ মুহাদ্দিসদের কাছে তাও অকাট্য নয়। বরং তাদের কারো কারো মতে, মেরাজ হয়েছিল রবিউল আওয়াল মাসে।

অনেকে মনে করে থাকেন, যেভাবে শবে কদর কাটানো হয়, ঠিক সেভাবেই এ রাতটিকে অর্থাৎ ২৬ রজব দিবাগত রাতটিকেও কাটাতে হবে। অনেকে আবার পর দিন রোজাও রাখেন। রোজাকে সুন্নতও মনে করে থাকেন। কিন্তু এ রাতে যদি বিশেষ কোনো ইবাদত এবং পর দিন রোজার বিধান থাকত, তাহলে অবশ্যই তা হাদিসে উল্লেখ থাকত। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িদের জীবনীতে এর দৃষ্টান্ত অবশ্যই থাকত। কিন্তু এমন কিছুরই প্রমাণ নেই। আরেকটি বিষয়, মেরাজের ঘটনা হিজরতের আগে সংঘটিত হয়েছিল এবং এরপর রাসূলুল্লাহ সা: কমপক্ষে ১১ বছর বেঁচেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো এ রাতকে বিশেষভাবে উদযাপন করেছেন কিংবা অন্যদের উদযাপন করতে বলেছেনÑ এমন কোনো প্রমাণ হাদিস শরিফের কোথাও নেই। তাই এ রাত বা এর পর দিনকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা বেদয়াত, শরিয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই। আর শবে মেরাজ ও রজব মাসের বিশেষ ইবাদত সংক্রান্ত যে হাদিসগুলো প্রচলিত রয়েছে, বিজ্ঞ হাদিস শাস্ত্রবিদেরা সেসবকেই জাল বা বানোয়াট হাদিস বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই সেসবের ওপর নির্ভর করারও কোনো সুযোগ নেই।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×