বউ এবং শাশুড়ি নারী চরিত্র দুটির ভেতর কেন চিরায়ত দন্দ? কেন নিজেরাই মেকি প্রশংসায় ডুবে থাকে এবং স্বকামী হয়ে ওঠে?
এর উত্তর নিহিত একজন মেয়ে বাচ্চার প্যারেন্টিং এর ধরনে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি ছেলে বাচ্চাকে মূল্যবান, সাবলম্বি, সাহসী, নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে বড় করা হচ্ছে, সেখানে একটি মেয়ে বড় হতে থাকে মূল্যহীন, পরনির্ভরশীল, অবলা, অনিরাপদ এই শব্দগুলির বোঝা নিয়ে অনিশ্চিত ভাবে। একটি ছেলে শিশুর চেয়ে মেয়ে শিশুটিকে আদরে, খাবারে, পড়ালেখায়, খেলাধুলায় আপনি বৈশম্য করলেন, আর আশা করবেন এই বাচ্চটির স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ হবে, অসম্ভব। যাকে আপনি বুঝিয়ে এসেছেন, মূল্যহীন, পরনির্ভরশীল, সে নিজেকে রেস্পেক্টই করা শিখবে না। ছোটাছুটি করা যাবে না, ওভাবে হাসা যাবে না, ওখানে যাওয়া যাবে না, এটা বলা যাবে না--এই সব বাঁধা নিয়ে মেয়েটি বৈশম্যের ভেতর প্রশ্নবোধক মনভাব নিয়ে পারিবার ও সমাজকে শত্রু ভেবে, মুখ বুঝে, কষ্টে ঘাপটি মেরে একটা অজানা ক্ষোভ নিয়ে বড় হয়। তার ইমোশনাল কোপ আপ-মেকানিজম-এ যুক্ত হয় নিজেকে আঘাত করা, ঘৃনা করা, নিস্তব্দতা, অবিশ্বাস, আতংক, ভাংচুর এবং কাল্পনিক সুখের জগত। এই মানসিক ভাবে ভংগুর মেয়েদের নিজেদের বিশেষ ভাললাগার বা শখের বস্তু খুব একটা থাকে না, তাই তারা উদ্যেশ্যহীন, উদাসীন, এবং ডিপ্রেসড। এভাবেই আপনি বাবা/মা হয়েও নিজের বাচ্চাটিকে অজান্তেই একজন অস্বাভাবিক পরনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুললেন, যে নিজের ইমোশন নিজে রেগুলেট করতে পারে না। বউ এবং শাশুড়ি যেহেতু দুজনই মেয়ে মানুষ, এবং পারিবারিক এবং সামাজিক বৈশম্যের কারনে এদের একজনও যদি এধরনের বাজে প্যারেন্টিং এর ভেতর দিয়ে যায়, তারা এবুউসিভ রিলেশনশিপ ডেভেলপ করবে, এটাই স্বাভাবিক।
যাই হোক, এই বঞ্চিত এবং অনেক ক্ষেত্রে ট্রমাটাইজড মেয়ে শিশুটি বয়সন্ধির পর নিজেকে তৈরী করতে থাকে কাল্পনিক এক রাজপুত্রের জন্য যে কিনা তাকে এই আজন্ম লালিত কষ্ট থেকে উদ্ধার করবে। ধরলাম তার জীবনে সত্যি সত্যি একজন ছেলে আসল, যে স্বাভাবিক, সাবলম্বি, সাহসী, হাই-ভ্যলু একজন পুরুষ। পুরুষটি মেয়েটিকে ভালবেসে মর্যাদা দেয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়, সাহস দেয় সব কিছু জয় করার। এখন দুখের বিষয় হল, মেয়েটি এর কোন কিছুই ভালভাবে গ্রহন করতে পারবে না। তার ভেতর এক অবিশ্বাস কাজ করবে। কারণ সে তো বড় হয়েছে বঞ্চিত হয়ে। সে গ্রহন করতে ভয় পায়। সে ধন্যবাদ দেয়া শিখেনি, কারণ তাকে ছোট থেকে কেউ এমন কিছু দেয় নি যার জন্য সে ধন্যবাদ দিবে। সে কৃতজ্ঞ হওয়া সেখেনি, কারন সে চির বঞ্চিত। তার আলোচনা করার মত মানসিকতা তৈরি হয়নি, কারন সে একটা আতংকের ভেতর বড় হয়েছে। সে ভেবেই নেয় তাকে দোষী করা হচ্ছে, এজন্য অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সে ব্লেম শিফট করে। হীনমন্যতা থেকে জন্ম নেয়া নকল আত্মবিশ্বাসের মোড়কে নিজেকেই নিজেরা প্রসংশা করতে করতে স্বকামী হয়ে ওঠে। এদিকে স্রষ্টা প্রদত্ত তার ভেতরের উন্নত ফেমিনিন বৈশিষ্ট্যগুলিও বিকাশিত হয় না, কারন সে যে পরিবারে বড় হয়েছে সেখানে মাসকুলিন আচরনকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। একটি মেয়ের কোমলতা, মমতাময়ী ধারক হওয়া, সহানুভূতিশীল, যত্নশীল হত্তয়া এবং পরিবারকে ভালবাসায় আগলে রাখার যে অনন্য গুন আছে সেগুলিকে ছোট করে দেখা হয়েছে এবং প্রশংসিত করা হয় নি। এজন্য আজকের দিনে, একটি মেয়ে যতটা পুরুষ হতে পারবে সে যেন ততটাই সফল এবং স্বাধিন। জেনেটিক কোডিং এর বিরুদ্ধে যেয়ে, অভিনয় করে কি জীবনে ভাল থাকা যায় না।
মানুষ মাত্রই কান্না এলে কাঁদতে হয়, হাসির কথায় হাসতে হয়। প্রতিটি বাচ্চাকে তাদের ভাল-লাগা এবং খারাপ-লাগা প্রকাশ করার সুযোগ দিন। পরিবার সৃষ্ট যে অপুর্নতা নিয়ে একজন মেয়ে কোন একজন পুরুষের সংগে সংসার বাঁধে, সে পুরুষ কি তার শৈশব/কৈশরের অপুর্নতা এবং ট্রমা দুর করতে পারে?????? দিনশেষে সবকিছুই ভেঙ্গে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৪৯