বাংলা ভাষায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাংলা ব্লগ সামহোয়্যারইনের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই ।সামুর জন্মের শুরু থেকেই অনলাইনে বাংলার আন্দোলনে সামু ব্লগ ও এর ব্লগারদের রয়েছে বিশেষ ভুমিকা । অনলাইনে প্রথম বাংলা ভাষায় বিভিন্ন রিভিউ, বৃহৎ পরিসরে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান , ধর্ম , রাজনীতি , মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফরম তৈরি করে দিয়েছিল সামু । যাই হোক , আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলাকে ছড়িয়ে দেয়ার মিশনের কিছু সাফল্য দেখা যাক.......................
২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার আইন করে যেসব ফোন বাংলাদেশে বিক্রি ও বিপণন করা হবে ঐসবে বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষা থাকতেই হবে । কীবোর্ডে বাংলা হরফ প্রিন্টেড থাকতে হবে । এছাড়া অপারেটিং সিস্টেম বাংলা ভাষা সাপোর্ট না করলে ওই ফোন এদেশে বিক্রি করা যাবে না । তবে ফোন ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার্য হলে বিদেশে কিনে এদেশে নিয়ে আসলে ওই নিয়ম প্রযোজ্য নয় ।
বিষয়টা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ । এর আগে নোকিয়ার সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেম(s60 v3 and v5 , এন্ড্রোয়েড ফ্রয়ো(২.০) , উইন্ডোজ মোবাইল (৭.৫) এসবে বাংলা ভাষা সাপোর্ট করতো না, ইভেন চাইনিজ ফোনগুলো, বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির(সিম্ফোনি , ওয়ালটন এসব) রিব্রান্ডেড ফোনগুলোতেও বাংলা চলতো না । ফলে বাংলা ফন্ট বক্স হয়ে থাকতো।
বাংলাদেশ সরকারের এই নিয়মের পরে এসব কোম্পানি বাংলাদেশের ভোক্তাদের কথা ও সরকারি পলিসি মেনে ব্যবসা করতে ফোনে বাংলা ভাষা সমর্থিত অপারেটিং সিস্টেম চালু করেছে । এখন দেশের সকল ফোনে বাংলা ভাষা সম্পূর্ণ সমর্থিত হয়েছে । ২০১২-১৩ এর দিকে মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ মোবাইলে বাংলা কীবোর্ড চালুর জন্য আবেদন জমা পড়েছিল লাখ এর উপরে , মাইক্রোসফট তার উইন্ডোজ মোবাইল ৮.০ অপারেটিং সিস্টেমে কি কি নতুন ফিচার যোগ করা যায় ওসব নিয়ে বিশ্বব্যাপী মতামত চেয়ে উইন্ডোজ ব্লগে পোস্ট দিয়েছিল । বাংলাভাষীদের ভোটে সারা পৃথিবী থেকে যত এপস ও ফিচারের অনুরোধ আসে তার ভিতর ৩য় স্থানে ছিল বাংলা কীবোর্ড সংযুক্তি । অতঃপর মাইক্রোসফট করপোরেশন "চন্দ্রবিন্দু" কীবোর্ড যুক্ত করে উইন্ডোজ মোবাইলে । বর্তমানে এপলের আই ওএস, গুগলের এন্ড্রয়েড ও ক্রোম , মাইক্রোসফট করপোরেশন এর উইন্ডোজ সব অপারেটিং সিস্টেম বাংলা সমর্থিত । থার্ড পার্টি কি বোর্ড ছাড়াও আছে বিল্ট ইন বাংলা কীবোর্ড।
২০১৪ সালে মহামান্য উচ্চ আদালত নির্দেশনা জারি করে এই মর্মে যে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যানার কি বাংলায় লিখা কিনা, যদি কেউ ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করতে চায় তবে আপত্তি নেই তবে বাংলাও পাশাপাশি থাকতে হবে ।
২০১৭ তে চালু হয় ডট বাংলা ডোমেইন । অর্থাৎ ওয়েবসাইট লিংকেও যুক্ত হয়ে গেলো প্রাণের বাংলা ভাষা ।
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৮ থেকে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সাবজেক্ট এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাস ও অভ্যুদয় এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এই দুটো ২ ও ২ মোট ৪ ক্রেডিটের কোর্স চালুর ঘোষণা দেয়া হয় । ইতিমধ্যে মনে হয় এসব কোর্স সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাবজেক্ট এর কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে ও পড়ানো শুরু হয়ে গেছে ।
আর আমাদের এই বাংলা ভাষার আন্দোলনে নতুন সংযোজন হলো বাংলাদেশ সরকারের নেয়া নতুন একটি সিদ্ধান্ত । পাঁচদিন আগে দেখলাম, বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহকদের ফোনে বাংলা এসএমএস ইংরেজি হরফে না পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলা মেসেজ বাংলা ভাষায় বাংলা বর্ণমালায় লিখেই পাঠাতে হবে , বাংলিশ নিষিদ্ধ ।
অসাধারণ................!
বাংলা ছড়িয়ে যাক সর্বত্র ।
ইংরেজি হরফ দিয়ে বাংলা লিখা নয়(বাংলিশ) , হয় ইংরেজি দিয়ে ইংরেজি লিখা আর নয়তো বাংলা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২