somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায় কেন আর মাছ ডাঙায় মরে যায় কেন , সাইন্স অফ প্রেসার | বিজ্ঞানপোস্ট সিরিয়াল ৮

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ সহ প্রায় সকল স্থলচর প্রাণি পানিতে ডুবে গেলে সল্প সময়ের। ভিতরেই মরে যায় অন্যদিকে পানিতে বসবাসকারী জীব অর্থাৎ জলজ প্রাণি সমূহ বিশেষত মাছ পানি ছেড়ে ডাঙায় উঠালে মরে যায় ।


এর কারণ মূলত দুইটা । এক নাম্বারে শ্বসন আর দুই নাম্বারে পানির চাপ


মাছ সহ জলজপ্রাণী সমূহ পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে শ্বাসকার্য চালায় ও বেঁচে থাকে । কিন্তু পানির চাইতে তো বায়ুতে অক্সিজেনের ঘনত্ব বা পরিমাণ বেশি তাহলে মরার কারণ কি ?

কারণ হলো তার শ্বাসযন্ত্র । মাছ ফুলকার সাহায্যে শ্বাস নেয় । মাছ পানিতে চলার সময়ে মুখ হা করে থাকে যা দিয়ে পানি প্রবেশ করে এবং ফুলকার ছিদ্র(কানকো) দিয়ে বেরিয়ে যায় । এই পানিতে যখন ঢুকে ফুলকার কাছে থাকে অক্সিজেন যা কিনা ফুলকার সংস্পর্শে এলে ফুলকায় থাকা বায়ু সংগ্রাহক মেকানিজম এর মাধ্যমে মাছের দেহে চলে যায় । মেকানিজম টা হলো এই, পানিতে ফুলকার অংশগুলো চার পাশ থেকে উন্মুক্ত থাকে ও সবদিক থেকে অক্সিজেন নিতে পারে । তো মাছ যদি ডাঙায় তুলে আনা হয় তখন ফুলকার এই মেকানিজম আর কাজ করে না । ফুলকা তখন বায়ু থেকে শুধু বায়ুতে উন্মুক্ত অংশ দিয়েই অক্সিজেন নিতে পারে ফলে মাছ শ্বাসকষ্টে মারা যায় ।


একই ভাবে মানুষ সহ প্রাণী ডুবে গেলে মানুষের নাক মুখ দিয়ে পানি ঢুকে যায় যেগুলো ফুসফুসে চলে যায় । কিন্তু আমাদের ফুসফুস পানি থেকে অক্সিজেন আলাদা করার জন্য তৈরি না যেকারণে মানুষ শ্বাস নিতে পারেনা ফলে দম আটকে মারা যায় ।

এবার দেখা যাক প্রেসার বা চাপের কি ভূমিকা । আমরা জানি সেসব পদার্থের ভর আছে তারা অভিকর্ষ বলের প্রভাবে চাপ প্রয়োগ করে । পানি বাতাসের তুলনায় প্রায় ৬০০ গুন বেশি ঘনপানির প্রতি ৩৩ ফুট গভীরতায় পানির চাপ এক এটম বায়ুর চাপের আকারে বাড়ে । তার মানে আমাদের মাথার উপরে থাকা এই ৪০০ কিঃমিঃ বায়ু মন্ডল একক ক্ষেত্রফলের(যেমন এক বর্গ মিটার, বা এক বর্গ ইঞ্চি) উপরে যে চাপ প্রয়োগ করে সেই চাপ ৩৩ ফুট বা ১০.০৫৮৪ মিটার পানির নিচের সম ক্ষেত্রফলের উপরে পানির চাপের সমান । ৬৬ ফুট নিচে পানির চাপ বায়ুমন্ডলের চাপের দ্বিগুন হয়ে যাবে । এভাবে প্রতি ৩৩ ফুট অন্তর এই চাপ ১ এটম হারে বাড়তেই থাকবে ।


আমরা জানি যে চাপ যত বাড়ে বস্তু ততই সংকুচিত হয় । তো মাছ পানির নীচে বা গভীরে থাকে বিধায় তাদের দেহের ব্লাড প্রেসার, ফুসফুসের বায়ু থলীর প্রেসার সব কিছু বেশি থাকে । যখন মাছকে উপরে উঠানো হয় বা ডাঙায় আনা হয় তখন বাইরের চাপ কমতে থাকে ফলে মাছের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ যেগুলো বেশি চাপে ছিল ওগুলো দেহ থেকে বায়ু ছেড়ে বাইরের চাপের সাথে সমতা আনার চেষ্টা করে । এই কারণে মাছের দেহ ফুলে যায়, অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চোখ কোটর থেকে বেরিয়েও আসতে পারে । চূড়ান্ত ভাবে মাছ মারা যায় ।

একই কারণে পানিতে ডুবে মরা মানুষেরও চোখ বড় হয়ে যায়, দেহ ফুলে যায়, ও জিহবা বের হয়ে আসে । যদিও এর সাথে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকাও আছে ।

অন্যদিকে মানুষ যখন পানিতে ডুবে যায় তখন দেহ পানির চাইতে কম ঘনত্বের হওয়ায় দেহ প্রাথমিকভাবে ভাসতে থাকে । তবে যখন নাক মুখ দিয়ে দেহে পানি ঢুকতে থাকে তখন দেহের ঘনত্ব পানির চেয়ে বেড়ে যায় ফলে মানুষ পানিতে ডুবে যায় । ডুবতে থাকা অবস্থায় মানুষ বা প্রাণীর দেহ যত গভীরে যেতে থাকে ততই দেহের উপরে পানির চাপ বাড়তে থাকে । ফলে এই চাপের কারণে দেহ থেকে বাতাস বের হয়ে যেতে থাকে ও সংকুচিত হতে থাকে ও ঘনত্ব আরো বেড়ে যায় ফলে আরো গভীরে দেহ ডুবে যেতে থাকে । মানুষের মৃত্যু ঘটে একসময় ।



ডুবুরিরা যখন ডুব দেয় তখন অক্সিজেন ছাড়াও প্রায় ৭৫% নাইট্রোজেন ব্যবহার করে । তারা গভীরে ডুব দেয়ার পর দেহের বায়ুর চাপ পানির সাথে সমতা রাখার জন্য এই নাইট্রোজেন ব্যবহার করে । এবার পানির উপরে ফেরৎ আসার সময়ে তারা ধীরে ধীরে আসে ও ঘন ঘন শ্বাস নেয় যাতে উপরের লো প্রেসারের কারণে দেহের রক্ত থেকে আস্তে আস্তে বায়ু বের হয়ে বাইরের চাপের সাথে সমতা রাখতে পারে । এখন এটা না করে তারা যদি একদম একনাগাড়ে উপরে চলে আসে তখন দেহে দ্রবীভূত অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন বাইরের চাপের সাথে সমতা রক্ষার জন্য দ্রুত রক্ত ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে যেয়ে বুদবুদের সৃষ্টি করবে । কোকের বোতল খুললে যেরকম বুদবুদ দেখা যায়, ঠিক ওই রকম অবস্থার তৈরি হবে সেক্ষত্রে । এর ফলে দেহে প্রচণ্ড যন্ত্রণা এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে । এজন্য ধীরে ধীরে উপরে উঠেন ডুবুরিরা ।

এই একই কারণে মহাকাশে প্রেসরাইজড স্পেসস্যুট ইউজ করতে হয় নয়তো বায়ু শূন্য মহাকাশে বা বায়ু শূন্য কোন গ্রহ উপগ্রহে যাদের বায়ুর চাপ পৃথিবীর চেয়ে কম সেখানে খালি গায়ে গেলে মানুষের দেহ ফেটে যাবে, রক্ত ফুটতে শুরু করবে ।

এনিওয়ে, দুই মাস বিরতির পরে আবারো বিজ্ঞানপোস্টের সিরিয়ালে কন্টিনিউ করা শুরু করলাম । সামনে আরও নানা বিষয়ে লিখবো । এখন তো ব্লগ কবিতা ব্লগ হয়ে গেছে তাই বিজ্ঞানের উপরে লিখার জন্য বাকি ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ থাকলো যদিও কে কি বিষয়ে লিখবে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার । ধন্যবাদ রসায়নের সাথে থাকার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×