প্রত্যেক মুসলিমের পবিত্র কুরআন শরীফ অর্থ ও তাফসীর সহ পড়ে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করা উচিৎ । হাদীস, ফিকাহ এসব বিষয়ের থেকে সাহায্য নিয়ে সে অনুযায়ী জীবন গঠন করা দরকার যাতে সমাজের বুকে আদর্শ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে ।
ইসলাম মানা মানে কিংবা মুসলিম মানে কেবল শুধু সপ্তাহে একদিন জুমআর নামাজ পড়া, বা শুধু নামাজ রোজা করাই না । ইসলামের বা আল্লাহর নির্দেশ হলো পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম মেনে চলা । আল্লাহ কুরআনে বলেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত ২০৮)
আল্লাহ আরো বলেন, "তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর ! যারা এরূপ করে , পার্থিব জীবনে দুগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই । কেয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে । আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন ।"
(সূরা আল বাকারা, আয়াত ৮৫ )
একজন মুসলিম যদি নিজেই ইসলাম না মানে পরিপূর্ণভাবে তাহলে একজন অমুসলিম তাকে দেখেই ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করবে কিংবা একজন নামে মুসলিম যে নিজেই ইসলামের বিধি বিধান ঠিক মতো মানে না সে যখন অন্য কাউকে ইসলামের কথা বলবে কিংবা অমুসলিমের ইসলামি ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে তখন তো আটকে যাবে পাল্টা প্রশ্নে ।
আল্লাহ সূরা মাউনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন শুধু নামাজ রোজা বা ইবাদত করেই পার পাওয়া যাবে না , কাজের মাধ্যমে সব কিছুর প্রমাণ দিতে হবে ।
ইসলামে সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, মিথ্যা বলা, চুরি করা, প্রতারণা করা , একের কথা আরেকজনের কাছে বলা, মানুষকে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি অনেক কিছু হারাম । অনেক কঠোর ভাষায় এগুলো করতে না করা হয়েছে। এস্বত্বেও এগুলো খুবই অহরহ আমাদের মুসলিম সমাজে ঘটছে ।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ বা ইসলামী স্তুতি ব্যতীত অন্য কোন প্রেম পিরিতি , মনের দুনিয়াবী চিন্তার গান গাওয়া সম্পুর্ন হারাম, প্রেম করা হলো অনেক বড় গুনাহের কাজ জেনা(ব্যভিচার) , সারাদিন ধরে খেলাধুলা করা , পর্দা ছাড়া ছেলে মেয়ে একসাথে পড়াশোনা, ঘোরাঘুরি করা, এছাড়া মদ্যপান, হারাম খাবার খাওয়া এগুলো সবই কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ।
কিন্তু আশে পাশের অধিকাংশ মুসলিমই এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে করে বেড়াচ্ছে । পর্ন সাইটে ভিজিট করা, হার্ডডিস্ক মেমোরি কার্ড ভর্তি দুনিয়াবি গান বাজনা, ইউটিউবে বেগানা নরনারীদের ভিডিও দেখা, চুটিয়ে প্রেম করা , মিথ্যা বলা, সুদি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা, কুরআনে যাদের সাথে পর্দা রক্ষা করতে বলা হয়েছে সেইসব ক্যাটাগরির মেয়েদের বা ছেলেদের মেসেজ পাঠানো, দুনিয়াবি গান গাওয়া, আল্লাহর ইবাদত বাদ দিয়ে খেলাধুলায় মশগুল থাকা, গীবত করা সব গুলো কাজই কিন্তু আশেপাশের মুসলিমরা করে বেড়াচ্ছে । নিজেরাই যদি ইসলামী বিধান না মানে ঠিক মতো তাহলে সমাজের অমুসলিমরা কি ধারণা পোষন করবে মুসলিমদের ব্যাপারে ?
একজন মুসলিম যার কিনা ঈমান আছে আল্লাহ, রাসূল(স.) , কুরআন, পরকালে এতদসত্ত্বেও সে নিজেই যদি ইসলাম না মানে পরিপূর্ণ ভাবে তাহলে একজন অমুসলিম যার কিনা এসবে বিশ্বাসই নেই সে কিভাবে এগুলো মানবে বা এসব বিশ্বাসে সম্মান দিবে ? কোন বিধর্মী বা নাস্তিক যখন আল্লাহর বিধিবিধান নিয়ে অর্থাৎ ইসলামী নীতিমালা নিয়ে আপত্তি তুলবে বা প্রশ্ন করবে তখন তো ওইসব মুসলিম যারা ঈমান আনা স্বত্বেও আল্লাহর বিধান মানে না বা ইচ্ছেমতো মানে তারা যদি সেটার কারণ জিজ্ঞাসা করে বা জবাব দিতে যায় তখন তো নাস্তিকের করা "তুমি নিজেই যখন ইসলামী বিধান মানো না বা ইচ্ছেমতো মানো তাহলে আমি অমুসলিম বা নাস্তিক হয়ে কোন কারণে এসব মানতে যাবো বা সম্মান দিবো" এমন পাল্টা প্রশ্নে আটকে যাবে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জনের সাথে আস্তিক নাস্তিক এরকম তর্ক হলে প্রায়ই এরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখি ।
একজন মুসলিম যে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে সেইই যদি কুরআনের বিধান অমান্য করে , যেমন প্রেম করে তাহলে একজন নাস্তিক যে কিনা আল্লাহ বা তার বিধান বিশ্বাসই করে না সে কিভাবে এগুলো মানবে বা সম্মান করবে ?
যে বিশ্বাসী(মুসলিম) সে নিজেই যদি তার বিশ্বাসের প্রতি উদাসীন হয়, আল্লাহ রাসূল(স.) , কুরআন হাদীস এসব নিজের ইচ্ছেমতো মানে বা না মানে তাহলে যে এগুলোয় বিশ্বাসী করে না সে মানতে যাবে কিভাবে ।
ইসলামের বিধান বা আল্লাহর কথা হলো নিজেকে আগে পরিবর্তন করতে হবে, কেউ যদি নিজে নিজেকে না বদলায় তবে সে যখন কাউকে পরামর্শ দিবে ভালো হওয়ার জন্য তখন তো বিতর্কের তৈরি হবেই । এজন্য আল্লাহ আগে নিজেকে বদলানোর ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ করেন,
"তোমরা কি মানুষকে সত্কর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে তুলে যাও , অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর ? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না ? " (সূরা আল বাকারা, আয়াত ৪৪)
তাই অমুসলিমদের সামনে আমাদের মুসলিমদের নিজেদের ভালোভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে তারা তো(অমুসলিম/নাস্তিক) বলে বসবে , তুমি যদি নিজে বিশ্বাসী হয়েও ইচ্ছেমতো ইসলাম মানতে পারো, আল্লাহর বিধান অমান্য করতে পারো তাহলে আমি ধর্মে অবিশ্বাস করে এসব করতে যাবো কোন কারণে !!!
আল্লাহ কুরআনে বলেন,
" মুমিনগণ ! তোমরা যা কর না , তা কেন বল ? তোমরা যা করনা , তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক " ( সূরা আস সাফ, আয়াত ২-৩)
সুতরাং আমাদের নিজেদের শোধরানোর চেষ্টা করা উচিৎ সবার আগে । ইসলামের বিধান সব অক্ষরে অক্ষরে মুসলিমদের মেনে চলা উচিৎ । এতে পরকালেও শান্তি দুনিয়ায়ও শান্তি, একই সাথে নাস্তিকদেরও কথারও উচিৎ জবাব দেয়া যাবে ।
হাদীসটি সবার জন্য, যারা মানুষকে ভালো কথা বলে কিন্তু নিজেকে পরিবর্তন করে না তাদের ভয়াবহ শাস্তি নিয়ে রাসূল(স.) এর বক্তব্য,
রাসূল (সাঃ) বলেন " কিয়ামতের দিন এক লোককে আনা হবে , এরপর তাকে জাহান্নামে নিহ্মেপ করা হবে । তখন আগুনে তার নাড়ীভূড়ি বেরিয়ে পড়বে । জাহান্নামবাসীরা তাকে বলবে, "তোমার এ অবস্হা কেনো ? তুমি না আমাদেরকে সত্কাজের আদেশ করতে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে ? সে বলবে , হ্যাঁ , আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম , অথচ নিজে করতাম না । আর অন্যায় কাজ হতে তোমাদের নিষেধ করতাম , অথচ আমি তাতে লিপ্ত হতাম "
সহীহ আল বুখারী , হাদীস নাম্বার ৩২৬৭
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৫