
রামগোপালপুর জমিদার বাড়িটি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলায় অবস্থিত। রামগোপালপুরের জমিদাররা এই বাড়িটি প্রায় দেড়শত বছরের মতো শাসন করেছেন। এই বাড়িটি ঠিক কত সালে নির্মাণ করা হয়েছিল সেই সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই জানা যায় নি। তবে সুনিশ্চিতভাবে এতটুকু ধারণা করা হয়েছে যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝের দিকে কোনো এক সময় এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে আরো একটি বিষয় বলে রাখি, এই জমিদার বংশধরদের মূল প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন সেই বিষয়টিও আজও অজানা। তবে এই জমিদার বংশে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান জমিদার রয়েছেন। তাদের মধ্যে কাশী কিশোর রায় চৌধুরী এক উল্লেখযোগ্য নাম। তিনিই ছিলেন এই জমিদার বংশের সবচেয়ে খ্যাতিমান ব্যাক্তি। এমনকি তার জমিদারির আমলে তার কল্যাণেই জমিদার বাড়িটির যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করণের পাশাপাশি বাড়িটি সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি লাভ করে।
কাশী কিশোর রায়ের পর এই জমিদারির হাল ধরেন তার পুত্র যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। এই জমিদার বংশের উল্লেখযোগ্য জমিদারদের তালিকায়ও যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জমিদার।তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেন "রারেন্দ্রবাক্ষন জমিদার" নামক একটি গ্রন্থ লিখে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা ও তৎসন্নিহিত এলাকার জমিদারদের ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি তার সেই গ্রন্থে। তিনি তারা পরিচয় স্বরূপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে 'অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট' ও 'রাজা' উপাধি অর্জন করেছিলেন। তাছাড়াও তিনি তার আমলে তার বাবার নামে "কাশী কিশোর কারিগরি বিদ্যালয়" প্রতিষ্ঠা করেন। যাই হোক পরবর্তীতে তার জমিদারির দায়িত্ব পান তার তৃতীয় পুত্র শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। আর তার পর থেকে তিনিই তাদের জমিদারির দেখাশোনা করেন। কথিত আছে, সংগিতের সাথে নাকি এই জমিদার বংশের অন্য রকম এক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠানেই নাকি সংগীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক ছিল। তাছাড়াও এই জমিদার বংশে হরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী নামক একজন জমিদার ছিলেন, যিনি তবলা বাজানোতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। আর তাই এই জমিদার বংশের একজন তবলা সাধক হিসেবে তার বেশ খ্যাতি ছিল। ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ঠিক তখনই তাদের জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। ফলস্তুতিতে জমিদাররা ভারতবর্ষে চলে যান। এরপর থেকেই বাড়িটি সেখানে পরিত্যক্ত পরে আছে।
স্থানীয়দের কাছে এই জমিদার বাড়িটি চৌধুরী বাড়ি নামেই অধিক পরিচিত। বাড়িটির অবকাঠামোগত ভিত্তি রড, তবে ইট এবং সুরকি-ও ব্যবহার করে হয়েছে বাড়িটির ভিত্তি স্থাপনে। এক সময় বসবাসের জন্য ভবন, বাগানবাড়ি, চিড়িয়াখানা, রঙ্গম ও সাগরদীঘির কারুকার্যময় সান বাঁধানো ঘাট থেকে শুরু করে সবই ছিল এই জমিদার বাড়িতে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় বর্তমানে বাড়িটিতে দুটি প্রবেশদ্বার (একটির অবস্থা মোটামোটি হলেও অন্যটি কোনো রকম টিকে আছে) ,ধ্বংসপ্রায় কয়েকটি বিচ্ছিন্ন দেয়াল ও একটা মাত্র মন্দির ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে উপাসনালয়টির (মন্দির) অবস্থা এখনো অনেকটা ভালো। এমনকি এখনো পুজোর আয়োজন করা হয় সেখানে।
যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সড়ক ও রেলপথ। এই দুই মাধ্যমে মূলত ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রোডে যাতায়াত করা যায়। প্রথম ধাপে জানাবো সড়কপথে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার উপায় এবং দ্বিতীয় ধাপে জানাবো রেলপথে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াতের উপায়। প্রথম ধাপ ,সড়কপথে রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াতের জন্য এসি ও নন-এসি মানের বেশ কয়েকটি পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে ,যেমনঃ আলম এশিয়া ,এনা পরিবহন ,ইমাম পরিবহন ,শ্যামলী বাংলা ,সৌখিন ও শামীম পরিবহন। এগুলোর মধ্যে কোনোটি এসি আবার কোনোটি নন এসি। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময় অনুযায়ী এই বাসগুলো ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এগুলোতে জনপ্রতি টিকেটের ভাড়া ২০০ টাকা থেকে শুরু। তবে ঈদ কিংবা বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যের দিনগুলোতে এই টিকেটের ভাড়া বেড়ে কয়েকগুন হয়ে যায়। তাই একদিনের ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকলে বিশেষ উপলক্ষ্যের দিনগুলো এড়িয়ে চলুন।
দ্বিতীয় ধাপ, রেলপথে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে এই রোডে । সকাল ৭:০০ টা নাগাদ কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে একে একে যাত্রা শুরু করে এই ট্রেনগুলো। কমলাপুর থেকে ট্রেন ধরতে অসুবিধা হলে বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকেও উঠা যাবে এসকল ট্রেনে। এসকল ট্রেনের টিকেটের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন। যা শ্রেণীভেদে জনপ্রতি ১৪০ টাকা থেকে শুরু।
বাস কিংবা ট্রেন যোগে ময়মনসিংহ জেলা শহরে পৌঁছে সেখান থেকে রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস কিংবা সিএনজিতে করে কিশোরগঞ্জগামী রোড ধরে চলে আসুন রামগোপালপুর বাজারে। বাজারে এসে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে জমিদার বাড়ির রাস্তা।
আর যদি ট্রেনে আসেন তাহলে স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে উঠে রামগোপালপুর জমিদার বাড়ির কথা বললেই সেখানে আপনাকে নামিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে অটোতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০ টাকার মতো।
কোথায় খাবেন
খাওয়া-দাওয়ার জন্য গৌরীপুর উপজেলাতেই বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি যদি আরো ভালো হোটেলে খেতে চান তাহলে আপনাকে ময়মনসিংহ আসতে হবে। ময়মনসিংহ শহরে ধানসিঁড়ি ও সারিন্দার খাবার হোটেল বেশ নামকরা। তাছাড়াও প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাও এর-ও বেশ সুনাম রয়েছে ময়মনসিংহ শহরে।
কোথায় থাকবেন
সেখানে রাত্রিযাপনের ইচ্ছা থাকলে ময়মনসিংহ শহরেই থেকে যান। ময়মনসিংহ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের অনেকগুলো হোটেল পেয়ে যাবেন।
নিকটস্থ যে সকল স্থানে ঘুরবেন
ময়মনসিংহে দেখার মতো প্রায় বেশকিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, আলেকজেন্ডার ক্যাসেল, ময়না দ্বীপ, শশী লজ, ময়মনসিংহ জাদুঘর, বোটানিকাল গার্ডেন, গারো পাহাড় ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রশালা বেশ উল্লেখযোগ্য। হাতে সময় থাকলে ট্যুর প্লান সেট করে এই জায়গাগুলোও একবার ঘুরে আসতে পারেন।
ছবিঃ রবিউল হাসান শোহান
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



