দৈনিন্দ জীবনের খুবই সাধারন ঘটনা যেগুলা সাধারনত আমরা দেখেও এড়িয়ে যাই অথবা একজন কমেডিয়ান এর চোখে সেইসব ক্ষুদ্রাকৃতির ঘটনার হাস্যরস ব্যাখা ভিন্নভাবে কমেডিয়ান উপস্থাপন করে সেটাই পর্যবেক্ষণমূলক কমেডি।
একজন পেশাদার কৌতুক অভিনেতা প্রায়শই তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে স্ট্যান্ড আপ কমেডি রুটিনের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করবেন। তবে পর্যবেক্ষণমূলক কমেডি এটিকে আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যায়।
এটি এমন জিনিসগুলিকে তুলে ধরে যা আমরা নিজের সম্পর্কে সচেতনভাবে নোট করিনি। কিন্তু যখন আমাদের কাছে উপস্থাপিত হয় তখন এটি অন্য কোন রসিকতার মতো বাড়িতে আঘাত করতে পারে।
প্রথমে আসি, প্রাণহীন বস্তুসমূহ দের কথোপোকখন।
১। নদী বললো, প্লিজ আমাকে দূষিত করো না, আমার ভিতরের ফাইটোপ্লাংক্টন গুলো মারা যাচ্ছে,
২। গাছ বলবে "আমাকে কাটলে জীবন থেকে বছর কেটে যাবে"
৩। ওজোন বলবে "যদি আপনার এসি আমার মধ্যে একটি ছিদ্র করে, তাহলে UV রশ্মি আপনার ত্বকে প্রবেশ করবে"
৪। অশ্রু জিজ্ঞাসা করবে "তুমি খুশি নাকি দুঃখী?"
৫। গ্যাজেটগুলি গর্জন করবে "আমি প্রভু আর তুমি আমার দাস"
৬। আপনার ফুটবল জিজ্ঞাসা করবে "সেই ভিডিও গেমটি কি আমার চেয়ে ভাল?"
এইসব কাল্পনিক ধারনার সূত্রপাত হয়, এই পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন ধর্ম, এ্যানিমিজম থেকে। এই বিশ্বাস যে বস্তু, স্থান এবং দৈনিন্দ জিনিস্পাতি সকলেরই একটি স্বতন্ত্র আত্মা রয়েছে, যারা আমাদের মতন সচেতনতা রাখে এবং তারাও আসে পাশের প্রকৃতি থেকে প্রভাবিত। এ্যনিমিজম নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করবো।
আমাদের পূর্বপুরুষ দের থেকে হয়ত এগুলা আমাদের কাছে এসেছে, আমার মনে আছে ছোটবেলা আম্মু বলতো, "ভাত খেয়ে নাও, নাহয় ভাত তোমাকে খেয়ে ফেলবে"।"ভাত ছেড়ে দিলে ভাতগুলো বদদোয়া দিবে",
যেমনটা ফার্নিচার অথবা সোফায় থেকে যদি কেউ ব্যাথা পায়, আমরা আবার উলটা ফার্নিচার গুলাতে লাথি মারতাম রাগ দমানোর জন্যে।
সেরকমই ধ্যান ধারনার প্রথম দেখা পেলাম রাজু শ্রীবাস্তব এর কমেডি তে, দ্যা গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ। তিনি দেখালেন যে, আমরা সবাই ট্রেনে উঠলে ট্রেন কেমন অনুভব করে, কিভাবে সে দিনের পর দিন এত প্যাসেঞ্জার বহন করে। সবেমাত্র ট্রেন টি একদম সকাল সকাল পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে যখন দেখে, হাজার হাজার লোক তার গায়ের উপর উঠছে, উঠছে নামছে আবার উঠছে, অদ্ভুৎ এক অনুভুতি সেই ট্রেনের। বাস এর হ্যান্ডেল থেকে শুরু করে ট্রেনের ফ্যান সবাই খুবই বিরক্ত প্যাসেঞ্জার দের উপর।
আপনি কি নিশ্চিত আপনারা ঘরে না থাকলে, আপনার বাসার ফার্ণিচার গুলো কথা বলে না একে অপরের সাথে? টিভি ফ্রিজের সাথে, সোফা আলমারির সাথে। আমার এক চাচাত বোন দেয়ালের সাথে কথা বলতো, পিচ্চি কালে মেয়েরা পুতুলের বিয়ে দিতো, আবার ডিভর্স ও দিতো। আপনার স্থুলাকার পশ্চাৎদেশ যখন আপনি আপনার সোফার উপরিভাগে রাখেন, হয়ত সোফার উপরিভাগ সেখান থেকে মুক্ত হবার আকূল প্রার্থনা করে, বৃক্ষসমূহ ফল দেওয়ার পর আক্ষেপ করে, ফেলে দেওয়া ভাত গুলো মনে মনে গালি দেয়।
আসলে আমার মনে হয় এইসব মানসিক রোগ থেকেই এই অবজারভেশনাল কমেডির সূত্রপাত।
চলবে......।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৭