সঠিক টাইমেই আমাকে বহনকারী সৌদি এয়ার লাইন্সের বিমান হজরত শাহ্জালাল বিমান বন্দরে অবতরণ করেছিল। কিন্তু গেট না পাবার কারণে রানওয়ের মধ্যেই আমাদের ১৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তখন আমি বিমানের ভিতর থেকে ফোন দিলাম.......................................
হ্যালো, এইমাত্র বিমানটা ল্যান্ড করলো। তবে নামতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। আপনি কোথায়?
সে বললো আমাদের পৌঁছতে আর ২০ মিনিট লাগবে।
‘ওকে’ বলে রেখে দিলাম।
এরপর সব ফরমালিটিজ সেরে অপেক্ষা করতে থাকলাম ল্যাগেজের জন্য। আর এই অপেক্ষা করতে হয়েছিল মাত্র ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট। অথচ আমাদের আসতে সময় লেগেছে ৪ঘন্টা ৫০মিনিট। আসলে যে ভাবে বেল্টে ল্যাগেজ আসতেছিল তাতে ১০/১৫ টা ব্যাগেজ আসার পর আবার ৫/১০ মিনিট পর অপেক্ষা করতে সবাই অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছিল। আর এভাবেই ধৈর্য পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।
এর মাঝে সে আমাকে ফোন দেয়, আমি পৌঁছে গেছি এয়ারপোর্টে।
আমি বলি আমার মনে হয় অনেক দেরী হবে কারণ এখনো ল্যাগেজ আসা শুরু হয় নাই।
সে বলে লাগেজ নিয়ে বাহির হবার আগে আমাকে ফোন দিয়েন।
আমি ‘ওকে’ বলে রেখে দিলাম।
তখন আমার কাছে মনে হচ্ছিল, আমি কোন স্টেজে লাইভ কনসার্ট দেখছি হুমরি খেয়ে। কারন ১/২টা করে ল্যাগেজ আসতেছিল। বেল্টের সাইডে এতো মানুষের ভিড় যে খুব কষ্ট করে সবাইকে চিনে নিতে হচ্ছিল কার লাগেজ কোনটি। যেমন করে লাইভ কনসার্টে গায়ক বা গায়িকাকে সবাই দেখতে চায় অতি কাছ থেকে-তেমনি করে হুমড়ি খেয়ে দেখছিল সবাই। আবার কেউ কেউ ট্রলির উপরে দাড়িয়ে চিনে নিতে চাইছিল নিজ ল্যাগেজ কোনটি।
সবশেষে যখন আমার লাগেজ পেলাম সব ক্যালেক্ট করে গ্রীন চ্যনেল দিয়ে বাহির হচ্ছিলাম। গেটে এসে বাধা আবার পড়লো।
আমাকে কাস্টম ইন্সপেক্টর জিজ্ঞেস করলো- ওটা কি ?
আমি বললাম মনিটর।
উনি বললেন-এলসিডি ?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
কত ইঞ্চি?
১৯”।
তা’হলে কাস্টম ডিউটি লাগবে।
আমি বললাম যতদুর জানি মনিটরের জন্য ডিউটি লাগেনা।
এরপর আমাকে যেতে হলো কাস্টম অফিসারের কাছে। তার কাছে জানতে চাইলাম শুল্ক আরোপিত পণ্যের লিস্টটা দেখান। আমি সেই লিষ্টের তালিকায় দেখলাম ১৭" পর্যন্ত শুল্ক নাই, ১৯" তে আছে।
বললাম কত দিতে হবে?
সে বললো ৩ হাজার।
ওকে আমাকে কত ইন্চিতে কত টাকা শুল্ক দিতে হবে সেই লিষ্টটা দেখান।
সে বলে আমাকে পাসপোর্ট দিতে। আমি ফর্ম পূরণ করতে থাকি।
আমি তখন বলি আমাকে আগে বলেন কত টাকা দিতে হবে?
সে বলে আবারো বলে ৩ হাজার টাকা লাগবে।
আমি বলি এত টাকা দিব না, আপনি লিষ্ট দেখান।
কাস্টম অফিসার বলে কত টাকা দিবেন?
বলি, আপনি লিষ্ট দেখান আর দিলে খুব বেশী হলে এক হাজার টাকা দিতে পারি।
শেষ পর্যন্ত অনেক কথা, যুক্তি-তর্ক করে ১৫০০ টাকা আমাকে দিতে হলো।
কিন্তু সে অনেক বাহানা করে আমাকে আর লিষ্টটা দেখালো না।
আমি বাহির হচ্ছি আর সেই ব্লগারে ফোনাইতেছি।
সে বললো আপনি বাহির হন আর আমি গাড়ী নিয়ে গেটে আসতেছি।
এরপর গেটের সামনে এসে আবার ফোন দিই।
সে বলে সাদা কোষ্টারের পিছনে যে কার টা ঢুকছে ওইটাতে আমি আছি।
কিন্তু বড় আশ্চর্ষের ব্যাপার সে আমাকে কোন দিন না দেখেও হাত দিয়ে গাড়ীর মধ্যে থেকে ইশারা করলো।
আমি ব্লগে তার ছবি দেখেছি। এই প্রথম স্বচক্ষে তাকে দেখলাম।
আর সে কে জানেন, তিনি মাসু ব্লগের সবার পরিচিত মুখ আমাদের শ্রদ্ধেয় বড় ভাই “কালপুরুষদা”।
তার সাথে আর একজনকে দেখলাম। প্রথমে তাকে চিনতে পারিনি। কালপুরুষদা তাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর সেই ব্লগার হলেন শ্রদ্ধেয় “ক্যামেরাম্যান” ওরফে রঞ্জু ভাই।
শুধু ব্লগে লেখা আর মন্তব্যের কারণে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কত কাছের মানুষ হতে পারে সেই কথাই ভাবছিলাম। যে মানুষটিকে আমি কখনো নিজের চোখে দেখিনি কিংবা কোন রক্তের সম্পর্ক নাই সেই মানুষ শুধু ব্লগীয় সম্পর্কের কারণে কতটা আপন হতে পারে সেটা তার সাথে পরিচয় হবার পরই বুঝলাম। সেই দুজন মানুষ শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার জন্য ৪/৫ ঘন্টা কষ্ট করে এয়ারপোর্টে ছিলেন এবং আমাকে রিসিপশন জানালেন তাতে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের আন্তরিকতায় আমি অবিভূত। আমি তাদেরকে অন্তর থেকে মঙ্গল কামনা করি।