ডিজুসের নতুন টিভিসিঃ One World- One djuice দেখেছেন নিশ্চয়ই? সারাদিনই টিভিতে দেখাচ্ছে। না দেখলে আগে ইউটিউব থেকে দেখে আসুন। সাথে কমেন্টগুলোও পড়তে ভুলবেন না।
One World- One djuice
টিভিসে দেখা শেষ? ওক্কে এবার আসুন কথা বলি। এই টিভিসি তৈরী করেছেন পিপলু আর খান। অ্যাডে বেশ কিছু নতুন আইডিয়া আছে। বাইক রাইডিং, গ্রাফিটি, ফায়ারওয়ার্ক্স নিয়ে কাজ করেছেন। djuice এর থীম ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। বেশ। আমার কথা কিন্তু সাউন্ডট্র্যাক নিয়ে। টিভিসি'র গানটা কি পরিচিত লাগছে না? জ্বি হ্যাঁ, কাজী নজরুল ইসলামের গান। গানটাকে আধুনিক সুর আয়োজনে গাওয়া হয়েছে। না জনাব, গাওয়া হয়নি! গানটাকে মেরে ফেলা হয়েছে! সুরের যথেচ্ছ বিকৃতি সাধন কখনো রিমিক্স হতে পারে না।
হয়ত বলবেন- এ ব্যাপারটা খারাপ ভাবে দেখার কিছু নেই। এই গানগুলো কেউ তো সেভাবে শোনে না। কিন্তু গানটা নতুন ফরম্যাটে একটা টিভিসি তে দিয়েছে, এতে করে অনেকেই গানটা শুনছে, তাদের ভালো ও লাগছে। আমাদের সব কিছু গ্রহন করার মানসিকতা রাখতে হবে।
কেউ শুনছে না এমনিতে হয়ত। মানলাম। তাই বলে রিমিক্স করে সেটাকে সুরসমেত পালটে দিয়ে বাজারে ছাড়ার পর মানুষ যদি শোনে এবং সেটা যদি তাদের ভালো লাগে তাহলে সেটা খুশির ব্যপার না, দুঃখের ব্যপার। অধিকাংশ রিমিক্সেই এই ব্যপারটা করা হয় (সুর পালটে ফেলা) এবং নতুন প্রজন্ম সেই গানটাকেই গ্রহণ করছে (কারণ গানগুলো ওয়েস্টার্ণ ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে করা হচ্ছে, তাদের কানে আগ্রহ সৃষ্টি করবারই কথা)। কিন্তু এতে করে গানের আসল সুরের আবেদন তো নষ্ট হচ্ছেই, গানের প্রকৃত সুরকার-গীতিকারের নাম কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষ্ণ গানটা কার- জিজ্ঞেস করলে একালের প্রজন্মের অধিকাংশের কাছে জবাব পাবেন হাবিব/কায়া'র। গানের আসল সুরকার-গীতিকার যে আরকুম শাহ সেটা কেউ জানছে না। কে বাঁশি বাজায়রে- জিজ্ঞেস করুন কার গান? উত্তর পাবেন ফুয়াদ/এলিটার। আসল গীতিকার-সুরকার অকালপ্রয়াত হ্যাপি আখন্দ, সেটা কেউ জানছে না! এরকম অহরহ ঘটছে। চোখের সামনেই আরো অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। বেশ কিছুদিন আগে "রক উইথ রবীন্দ্রনাথ" নামে একটা অ্যালবাম বেরিয়েছিলো যাতে গানগুলোতে র্যাপ লাগানো হয়েছিলো এবং সুরের যথেচ্ছ বিকৃতি সাধন করা হয়েছিলো। সেই অ্যালবাম টাও অনেকের ভালো লেগেছে। তাই বলে কি আমরা সেটাকে উৎসাহ দেবো? না! এটা কখনোই ভালো কিছু হতে পারে না। আসল সুরকার গীতিকারদের প্রাপ্য সম্মানটুকু যে প্রজন্ম দিতে পারে না, কিভাবে আশা করা যায় যে এই গান গুলোকেও তারা আগলে রাখবে? এর চেয়ে চটকদার রিমিক্স পেলে এটাও ভুলে যাবে। সংস্কৃতি তে মিশেল ভালো, তাকে আমূল পালটে ফেলা কখনো ভালো হতে পারে না। কিন্তু এটাই ঘটছে। এরকম চলতে থাকলে আমাদের লোকসঙ্গীত, ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীত একদিন চিরতরে হারিয়ে যাবে, বা জায়গা হবে শুধু সিডিগুলোতে।
যাক গা বিশাল প্যাচাল ঝেড়ে বসলাম। মনে হতে পারে এসব রক্ষার দায়িত্ব আমারই উপর। এমন কিছু না। এই দায়িত্ব আপনার ও। একটু সচেতন থাকা উচিত আমাদের, রিমিক্স হচ্ছে, হবে, এটাকে ঠেকানো সম্ভব না। তাই বলে মূল গানটাকে কথায় সুরে যেনো বিকৃত না করা হয়। ওয়েস্টার্ন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের দোহাই দিয়ে সুর বিকৃত করা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
আর অ্যাডের ব্যাপারে যেটা বলবো, অ্যাড টা আমার কাছে এভারেজ মনে হয়েছে। এর চেয়ে ভালো থীমের অ্যাড ডিজুসেরই আছে অতীতে। হ্যা ফায়ার প্লেইং, বাইকের কন্সেপ্ট গুলো নতুন ছিলো, সে অর্থে বেশ ভালো কিন্তু এবারের থীমটা অ্যাডে ফুটে ওঠেনি বলেই মনে হয়েছে, সেটা গানের কারণেও হতে পারে! আর আগেই বললাম যে গানের লয়ের সাথে অ্যাডের গতির মিল নেই। দ্রুতলয়ের কোন গান দরকার ছিলো। একটা মৌলিক গান নিলে কি এমন ক্ষতি হত! অমিতাভ রেজার করা ডিজুসেরই টিভিসি "বন্ধু আড্ডা গান" এর "তুমি কি সাড়া দিবে" 'র মত অসাধারণ ট্র্যাক আমরা পেয়েছি। সেখানে নজরুলগীতির কেন এই বিকৃতি?
------
যাওয়ার আগে বলে যাই, এই টিভিসির পর ফেসবুকের জন্য ডিজুস একটা গেম বানিয়েছে। গেম তৈরী করেছে ম্যাভেরিক। এই লিঙ্কে গিয়ে গেমটা খেলতে পারবেন। এমন কঠিন কোন গেম না, ছবির সাথে ছবি ম্যাচিং। নোকিয়ার আদ্দিকালের সেটগুলোতে মেমোরী নামে একটা গেম হয়ত খেলে থাকবেন কেউ। সেটারই আধুনিক ভার্শন। গেম ওভার করলে নিজের নামটাকে গ্রাফিটাইজ করতে পারবেন।
ভালো থাকুন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১২ বিকাল ৪:১৮