somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশীর্বাদ অথবা অভিশাপ ?

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জার্মান ফেডারেল রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর ফিসারীজ
ফেহমান দ্বীপ, জার্মানী ।
সাগর পাড়ের দুই কিলোমিটার দুরুত্বে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানে আমার বসবাস। দ্বীপটা কোভিড-১৯ এর আগ্রাসনে ভুতুড়ে নীরব।
এমনিতেই গবেষণার কারণে দ্বীপটি সাধারণ লোকজনের আওতামুক্ত।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দ্বীপে টর্চার সেল ছিল বলে শুনেছিলাম। সেসময় অসংখ্য ভুগর্ভস্থ কক্ষ ছিল এখানে যা ডার্ক ডানজেন নামে পরিচিত ছিল।
যেগুলোতে বন্দীদের হাত পা বেধে ছুড়ে ফেলা হত এবং বন্দীরা অভুক্ত অবস্থায় ছটফট করতে করতে মারা পড়তো নীরবে।

এইরকম নীরবতা ফেহমান দ্বীপের ইতিহাসে অনেক বছর পর ফিরে আসলো।

আমাদের রিসার্চ সেন্টারে সব মিলিয়ে ৫৪ জন কর্মরত ছিল।
যাদের মধ্যে ৪১ জনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।
দ্বীপের থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সেলফ আইসোলোশনে থাকার কারণে আমি এখান থেকে বের হয়নি।
সৌভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে আমার দেহে করোনাভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ ছিল। এখন কেবল কিছুদিনের পর্যবেক্ষনে থাকতে হবে নিজেকে।
দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে আমার রুম বাইরে থেকে লক করা। আমি আমার ইচ্ছে মত বের হতে পারবোনা।
দিনে দুইবার একজন দরজার সামনে আসে খাবার সাথে। ক্লিনার,নার্স,শেফ, গার্ড কে আসে সেটা দেখার সুযোগ থাকেনা।
অনুমানের ভিত্তিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানে আরও তিন-চার জন থাকতে পারে।
বই পড়ে চেষ্টা করই সময় কাটাতে। ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ। আর মোবাইল বিকল হয়ে আছে তেমন ব্যবহার না করায়।
ইমার্জেন্সী যোগাযোগের জন্য ইন্টারকম লাইন আছে যদিও এখনও প্রয়োজন পড়েনি।

সাগর দেখার জন্য একটা বারান্দা আছে। দিনের বেশীর ভাগ সময়টা সেখানেই কাটে। শক্ত কাচে ঘেরা বারান্দা থেকে কেবল সাগর দেখা যায়, আবহাওয়া ঠাণ্ডা বা গরম বোঝার উপায় নেই। এমন যে বাহির থেকে পরমাণু আকারের ব্যাক্টেরিয়াও প্রবেশ করতে পারবেনা।
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল। বিরক্তি বাড়ছিল।
আজকে গভীর ভাবে বই পড়ছিলাম। খেয়ালও করিনি বিকেল হয়ে গেছে । যখন খেয়াল করলাম একটু অবাক হলাম।
আজ দুপুরে ফুড ডেলিভারিতে কেউ আসেনি! আমি খাওয়া দাওয়াও করিনি।
ডেলিভারির কাজে যারা আছে তারা কোন অসুবিধায় পড়লো কিনা জানার জন্য ইন্টারকমে কল দিলাম। ও প্রান্তে কোন সাড়া নেই।
সিদ্ধান্ত নিলাম রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার।

................................................
রুমের দরজা খোলার সময় একটা বেল বাজে যেটা ঘুমে থাকলেও তোলার জন্য যথেষ্ট।
রাতে সেই বেল না বাজাতে বুঝে উঠতে পারছিলাম না বারান্দার মেঝেতে কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম।
হাত পা অসাড় হয়ে গেছে। আজ সারাদিনে কিছুই খাইনি পানি ছাড়া।
নিজেকে সামলে আবারও ইন্টারকমের দিকে এগোলাম । এবারও একই ফলাফল।
ধৈর্য হারিয়ে দরজায় সজোরে আঘাত করতে লাগলাম। সবকিছুই নিরুত্তর।
এবার প্লান করলাম দরজা ভাঙ্গার। কাজে আসলোনা বিধায় বারান্দা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলাম।
বুলেট প্রুভ কাচ ঘেরা বারান্দা ভেঙে বের হওয়ার চেয়ে দরজা ভাঙ্গাটাই বোধ হল সহজ। যদিও কোন উপায়ই কাজে দিচ্ছিল না।
এভাবে দুইদিন কেটে গেল।
রুম সম্পুর্ণভাবে অগোছালো।
আমি ধরেই নিয়েছি যারা এখানে ছিল তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমিও ধরে নিলাম আমিও মারা যাচ্ছি যেকোন সময়ে।
শরীর ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে। শরীরকে জাগিয়ে রাখতে বারান্দায় বসে Christa Wolf: এর 'They Divided the Sky' বইটা পড়ে যাচ্ছিলাম।
যখন ঘুম ভাঙলো দেখলাম বারান্দার মেঝেয় পড়ে আছি।
অনেক রাত হয়ে গেছে। আনুমানিক দুটার কাছাকাছি।
শোয়া অবস্থাতেই আকাশের দিকে তাকালাম।
চাকুরীর সুবাদে এমনিতেই পৃথিবী, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকি। এখন যোগ দিচ্ছে অন্য এক মাত্রা।
এটা ভাবতে গিয়ে যখন উঠলাম বোধ হল পায়ের সাথে কিছু লাগছে।
কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে বুঝলাম একটা কালো কাপড়ের থলি।
থলিটা নিয়ে রুমে এলাম। রুমটা আগের মতই অগোছালো ছিল। থলিতে ভরপুর ছিল আপেল, চেরি আর আঙ্গুরে।
যতটা না ক্ষুধার্ত ছিলাম তার চেয়ে শরীর ছেয়ে গেছে আতংকে।
এগুলো কোথা থেকে এলো? থলি ঝাঁকাতে লাগলাম, এবার কিছু কাগজ বেরোল।
হলদে হয়ে যাওয়া পুরনো কিছু কাগজ প্রতিটা কাগজে লাল কালিতে একটা অবোধ্য বাক্য।

πεθαίνει με άδειο στομάχι. είναι επίπονο

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:৫৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×