somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কী পড়লামঃ বাঙালিয়ানা

২৮ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারায়ণ সান্যালের "বাঙালিয়ানা" পড়ছিলাম।

শুরুতেই বাঙালির কীর্তন - (রবীন্দ্রনাথ থেকে)

বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান

বাংলার ঘর, বাংলার হাট,
বাংলার বন, বাংলার মাঠ
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান

বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,
বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান

বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন,
বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান

Click This Link.

এরপর বাঙালির বাঙালিপনার কিছু নমুনা -

আবারো রবীন্দ্রনাথ থেকে

"আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না, আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি, তাহা পালন করি না; ভুরি পরিমাণ বাক্যরচনা করিতে পারি, তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না; আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতালাভের চেষ্টা করি না; সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধুলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিক্স এবং নিজের বাকচাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া ওঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। এই দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি..."

পূণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি, তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।
দেশদেশান্তর-মাঝে যার যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান
পদে পদে ছোটো ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেধেঁ রাখিয়ো না ভালোছেলে করে।
প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স'য়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে
শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধরে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক'রে।
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।

- আমার এই বিশ্বাস যে, রবিগুরু বায়ান্ন, একাত্তর দেখে গেলে এমন কখনোই লিখতে পারতেন না। আব্দুল জব্বারের গাওয়া গানটা মনে পড়ছে।

মাগো ভাবনা কেন
আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।

এছাড়া কথাগুলো বাংলার খেটে খাওয়া অগুণতি মেহনতি মানুষের প্রতিফলন করে না। এবং আমার ধারণা গণনায় তাদের সংখ্যায় বেশি।

...

এরপর বাঙালির বাস্তুভিটার কিচ্ছা যার একটা শব্দও আমার পছন্দ হয়নি।

বাঙালির খাওয়া দাওয়া নিয়ে লেখক লিখেছেনঃ

"বাংলা ভাষার আদি পর্বেই বাঙালির রান্না ও ভোজনের একটি উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে চর্যাপদের প্রাকৃত-পৈঙ্গল ভাষাতেঃ

ওগগর ভত্তা রম্ভা পত্তা
গাইক ঘিত্তা দুগ্ধ সযুক্তা
মোইলি মচ্ছা নালিত গচ্ছা
দিজ্জই কান্তা খাই পুনবন্তা।

অর্থাৎ:

কলাপাতায় গরমাগরম ভাত,
গাওয়া ঘি, তার সঙ্গে দুধ
মৌরলা-মাছের ঝোল, আর নাল্‌তে-পাতার শাক
যে গৃহিনী নিত্য পরিবেশনে সমর্থা
তাঁর কর্তাই হচ্ছেন পুন্যবান বাঙালি।"

বাঙালির খাদ্যাভ্যাস চর্যাপদেও ঠাঁই করে নিয়েছে। বলিহারি বাঙালিকে :=)

এরপর মিষ্টান্ন। বাহ্‌ বাহ্‌ যেখানে বাঙালি সেখানে মিষ্টান্ন থাকবে না তা হয় কি করে! শুরুতেই সন্দেশ।

"সেকালে খানদানি-পরিবারে 'পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জনীয়' মনে করা হত না। ডাকযোগে বা পিয়ন-মারফৎ পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণ বিলকুল নামঞ্জুর। কেউ নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসবে না। বিবাহ, উপনয়ন, অন্নারম্ভ প্রভৃতি আনন্দ-অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করতে আসতেন মূল নিমন্ত্রণ কর্তার তরফে কোন নিকট-আত্মীয়। সঙ্গে নিয়ে যেতে হত নিষ্টান্ন সাধারণত কাঁসার রেকাবিতে সরপোশ ঢাকা দিয়ে। রসসিক্ত মিষ্টান্ন পরিবহনে নানান দুর্ঘটনার আশঙ্কা। তাই নিয়ে যাওয়া হত রসবর্জিত ছানার-পাকে প্রস্তুত মিষ্টান্ন। যেহেতু আগামী শুভকর্মের সংবাদবাহী, তাই মিষ্টান্নটির নামকরণ করা হয়েছিলঃ সন্দেশ।"

এরপর... (হাঃ হাঃ এর কথা লেখা শুরুই করিনি। নিজে এসেই হাজির। টিভিতে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম। একজন ধুতিঁ আর রসগোল্লার হাড়ি নিয়ে হাজির)।

"বিবর্তনের দ্বিতীয় ধাপ ক্ষীরবর্জিত অতচ রসসিক্ত একটি মিষ্টান্ন। পানতুয়া, তোতাপুলি, লেডিকেনি, ল্যাংচার মতো তা ঘিয়ে ভাজা নয়। আবার সন্দেশের মতো রসবর্জিত নয়, বাঙালি ভিয়েনকরের আবিস্কৃত এই মিষ্টান্নটা পৃথিবীবিখ্যাতঃ রসগোল্লা

আবিস্কর্তার নাম নবীনচন্দ্র দাস। তিনি ছিলেন সুবিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রার জামাতাবাবাজীবন। চিত্তরঞ্জন এভিন্যুতে এ.ভি. স্কুলের বিপরীতে তাঁর আদি-অকৃত্রিম দোকানটি আজও সগৌরবে টিকে আছে বলে দাবী করা হয়। রসগোল্লার আবিস্কার বিষয়ে একটা কাহিনী বাগবাজার অঞ্চলে আজও বৃদ্ধদের মুখে-মুখে ফেরেঃ

রাত গভীর। নবীনচন্দ্র একাই কাজ করছিলেন ভিয়েনে। পুত্রটি, অর্থাৎ ভোলা ময়রার নাতিটি-মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে কাঁদতে শুরু করেছে। তার মা তাকে থাবড়ে থাবড়ে ঘুম পাড়াচ্ছে। নবীনচন্দ্রের সামনে পাশাপাশি দুটো উনুন। একটায় ঘি গরম হচ্ছে, একটায় ফুটছে শর্করা-রস। পরদিন এক নিমন্ত্রণ বাড়িতে একমণ পান্তুয়া সরবরাহ করার কথা। সারাটা রাত জাগতে হবে নবীনকে। তার এপাশে কাঠের এক প্রকান্ড বারকোশ। তাতে রয়েছে প্রকান্ড একতাল ছানা। ক্ষীরটা তখনো ভাঁড়ার ঘরে শিকেয় ঝুলছে। নবীন কিছু অন্যমনস্ক ছিলেন। কিছু চিন্তিত। তাঁর সহকারী বিশ্বনাথ - বিশেটা সন্ধ্যাবেলা দু-লোটা সিদ্ধির সরবৎ বানিয়ে সেই যে বাড়ি গেছে, এখনো তার পাত্তা নেই। একা হাতে সারারাতে একমণ পান্তুয়া বানানো বড় সোজা কথা নয়। লাহাবাবুদের দেউড়িতে দারোয়ান পেটা ঘড়িতে রাত এগারোটা বাজার ঘোষণা জানালো। নবীনচন্দ্র এক লোটা সিদ্ধি ইতিপূর্বেই শেষ করেছেন; এখন দ্বিতীয় লোটাটার দিকে হাত বাড়ালেন। বুঝলেন, বিশু আর আসবে না। বউকে পাশবালিশ করে এতক্ষণে সে নাক ডাকাচ্ছে।

আরও আধঘন্টা পরে। ও ঘরে খোকা ঘুমিয়েছে এতক্ষণে। পাড়াও জুড়িয়েছে। খোকার মা ভিয়েনঘরে এসে চিক্কুর পাড়ে, ও কী করছে তুমি? ক-লোটা সিদ্ধির সরবৎ গিলেছ বল তো? ছানায় এখনো ক্ষীর মেশানো হয়নি আর তুমি নির্বিচারে তা ঘিয়ের কড়াইয়ে ঝাড়ছ?
- ঝাড়ছি? আমি?
- দ্যাখনা, এক গন্ডা গোল্লা নষ্ট করেছে! ও মা! ঘিয়ের কড়াই কোথা গো? তুমি তো ঝেড়েছ রসের কড়াইয়েতে! তুলে ফেল, তুলে ফেল...

নবীন বিদ্যুৎবেগে গৃহিণীর শাঁখাসর্বস্ব নরম হাতটা চেপে ধরে বলেন, তা হোক! কিন্তু দ্যাখতো কী সুন্দর গোল-গোল হয়ে ভাসছে! কাৎলার পোনার মতো ডুবছে আর ভাসছে...দেখি না, কী স্বাদ হয়!

সিদ্ধির নেশাই হোক অথবা দেবদত্ত দুর্লভ পরমসিদ্ধি! নবীনচন্দ্র আবিস্কার করে বসলেন একজাতের নতুন মিষ্টান্নঃ রসগোল্লা।"

আরও কিছু...

"বাঙলায় ডালের কত জাতের রকমফেরঃ মুগ, মশুর, মাসকলাই, ছোলা, মটর, অড়হর। প্রত্যেকটির স্বাদ আলাদা। এই ছয় রকমের ডালের ফোড়নও বিভিন্ন প্রকার। মুগের ডালে লঙ্কা-তেজপাতা অথবা জিরে ফোড়নে স্বাদবৈচিত্র ঘটানো হয়। আবার মাছের মুড়োর সঙ্গে যুক্ত হলে তা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের। ছোলার ডালে নারকেল-কিশমিশ দিয়ে ভিন্নতর স্বাদ আনা হয়।" আহা, উহুঁ :=)

বাঙালির জয় হোক :=)

মোটের উপর বইটা আমার ভালো লাগা বইয়ের কোন তালিকায় ঠাঁই পাবেনা। স্বান্তনা বলতে ছোটো খাটো না জানা কিছু তথ্য পেলাম এই যা যার কিছু এখানে শেয়ার করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×