আগের চিঠিটা
প্রিয় বৃষ্টির দিন,
...ব্যস্ততা জীবন কে ছোট করে দেয় কিন্তু জানেন এই ব্যস্ততার মাঝেই মানুষ ভালো থাকে। কারণ তখন মানুষ তার জীবনের ছোটকাট যন্ত্রণা গুলো ভুলে যায় কাজের আড়ালে। সেই থেকে ধারণা করে নিলাম আপনি ভালো আছেন। ম্যানহাটানের আকাশে আজ কতটুকু উত্তাপ বইছে ঠিক জানিনা, কিন্তু এখানে বেশ গরম পড়েছে। বাইরের খটখটে হলুদ রোদে আজ কোন লাবণ্য নেই। জানালায় পর্দা উড়িয়ে ঘর অন্ধকার করে আপনাকে লিখতে বসলাম। ক্লান্ততায় আমার লেখাগুলো যেন জড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজ ঠিক করেছি চিঠি শেষ করেই উঠবো...
...অনেক দিন আপনাকে লেখা হয়না। কেন যেন মনে হচ্ছে আমাদের বনে দূরত্বের গ্রহণ লেগেছে। খুব অল্প সময়ে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল বলেই হয়তো এরকম মনে হচ্ছে। পুরোনো দিনের কথা ভাবলে মনে পরে আমার জন্য আপনার বানানো দোলনাটার কথা। একটা যেন নিয়মের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল - প্রতিদিন বিকেলে দোলনায় চড়া, ছুটির দিন গুলোতে জমিয়ে রাখা কথার ঝুড়ি খুলে দেয়া। এখন এমনটি আর হয় না। এখন বোধহয় শশী কখন আসবে এই অপেক্ষায়ও থাকা হয় না। ছোট্ট একটা অভিমান হয়ে ছিল তার কারণে নাকি ব্যস্ততার কারণে ঠিক বুঝতে পারছিনা। কারণ যায় হোক না কেন আমাদের সম্পর্কের সুতোয় টান পড়েছে। "সম্পর্কের সুতো" কথাটি কি ভুল বললাম?...
...যে অদ্ভুত টানের অনুভূতি, ছোট ছোট অতৃষ্ণা, যা প্রায় কপালের ভাজে দেখা দিত যখন আমাদের কথা না হত, সেগুলো কে একটা সুতোয় গাথঁলে কিন্তু সম্পর্কের মালা অবশ্যই পরানো যায়। আমি সেই সম্পর্ককে বেলি ফুলের মালা বলবোনা যাতে ভালোবাসার আদর মিশিয়ে চুলের খোপাঁয় পরানো হয় আর এই দৃশ্য দেখবার জন্য অধীর আগ্রহে তার জানালায় অপেক্ষা করে কেও বসে থাকে। আমার বনের শিউলি গাছ থেকে আপনার কুটিরের অচিরার পথ হচ্ছে একি বকুল ফুলের মালা। দূরত্বের কারণে যতোই পুরোনো হয়ে যাক ঠিকি যত্নের রঙে আপনার লেখার টেবিল থাকবে। অভিমানের আড়ালে শুকিয়ে গেলেও দমকা হাওয়ার সুবাস ঠিকি ছড়াবে...
...আজ অনেকক্ষণ বসে আপনার কথা ভেবেছি। বলতে গেলে নিজেকে যান্ত্রিক নগরের বাইরে অনেক্ষণ অচিরার নীচে বসিয়ে রেখেছিলাম আর সেই সময় আপনার সাথে অনেক কথা হল :=)। বকুল ফুলের মালা দিয়ে গেলাম। কালকে আমাদের অবস্থান যেখানেই থাকুক আমিতো কথা দিয়েছি চিঠি লিখবো :=)। এই মালা সবসময় আগলে থাকবে :=)
ওহ্ বলতে ভুলে গিয়েছি আমি ভালোই আছি...না বললে হয়তো কপাল কুচঁকে আমার চিঠিকেই প্রশ্ন করতেন "কেমন আছো বললে না তো" তাই না? :=)
ইতি
~শশী
...
চমৎকার লিখেছো। তোমার বকুল ফুলের মালা গ্রহণ করলাম :=)। বিশ্বাস করবেনা আজ সাবওয়ে থেকে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে তোমাকে ম্যাসেজ রাখবো। msn এ। কাজ কর্ম কেমন যাচ্ছে জানতে চাইবো। সাথে মন খারাপ কেন তাও জানতে চাইবো। কাল একটা পোষ্ট করেছিলে। পড়েছি...
অস্বীকার করবোনা...থেকে থেকে আমারও মনে হয় ঠিক আগের মতো সম্পর্কটা নেই আমাদের। সম্পর্কের সুতার উপর কম ধকলতো যায়নি...সত্যি বলতে ছিড়ে যায় যায় অবস্থা থেকেই না আবার দুজনে মিলে জোড়া লাগানোর চেষ্ঠা করে যাচ্ছি...ছিড়ে হয়তো যায়নি...তাছাড়া ব্যস্ততা অনেকাংশেই দায়ী...আগের মতো আমারও আর ঠিক ছয়টায় বাসায় ফেরা হয়না...তুমি ও কাজে জয়েন করেছো...তার আগে তুমি স্যামার ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত ছিলে...
সব ভেবে দেখলে হয়তো খুব একটা খারাপ বলা যায়না...বনের উপর দিয়ে সব সময় বসন্তের বাতাস বইবে তা নাও হতে পারে...সেখানে বর্ষাকাল আসবে, শীতকাল আসবে তবেই না বসন্তের রুপ তার পূর্ণতা পাবে...
তবু মাঝে মাঝে কাজ কর্মের ফাঁকে আমারও সেই পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে...কি সুন্দর সন্ধ্যা কাটাতাম দুজনে মিলে...কাজ থেকে তাড়াতাড়ি ফেরার একটা তাগাদা থাকতো...এই ভেবে আনন্দিত হতাম একজন পথ চেয়ে রয়েছে...ম্যাসেজ রাখতাম যদি ফিরতে একটু দেরী হতো...কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো...
ভালো আছো যেনে পুলকিত হলাম...এমনি করেই ভালো থেকো...অনেক অনেক ভালো...
একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল রেখে গেলাম...দোলনাটার উপরে...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



